
রবীন্দ্রনাথের চমৎকার একটা গল্প আছে।
গল্পের নাম- সমাপ্তি। গল্পটা আমার অনেক পছন্দের। যদিও আজকের আধুনিক যুগের সাথে রবীন্দ্রনাথের গল্প গুলো প্রায় অচল। সে যাকগে, প্রায়ই আমি এই গল্পটি পড়ি। এই গল্পের একটা লাইন আমার স্পষ্ট মনে আছে। "ভালোবাসিয়া আমাকে একটি চুম্বন দাও"। স্বামী তার স্ত্রীর কাছে আবদার করছে। স্ত্রী বয়স অল্প। সে এগুলো চুমু টুমু বুঝে না। বাল্যবিবাহ খুবই মন্দ ব্যাপার। যাইহোক, শুনেছি অনেক আগে কলকাতায় পাঠ্যবইয়ে সমাপ্তি গল্পটা ছিলো। সমাপ্তি গল্পের নায়কের নাম অপূর্ব। সে বিএ পাশ। নায়িকার নাম মৃম্ময়ী। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে মৃম্ময়ী। অবিবাহিত ছেলেমেয়ে এই গল্প পড়লে তাদের বিয়ে করতে ইচ্ছে করবে।
সমাপ্তি গল্প রবীন্দ্রনাথ প্রথম প্রকাশ করেন, সাধনা পত্রিকায়।
আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথ ওস্তাদ লোক। সমাপ্তি গল্প পড়ার পর হৈমন্তি গল্পটি পড়তে হবে। নইলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ সমাপ্তি গল্প লেখার ২১ বছর পর হৈমন্তি গল্পটা লিখেন। যাইহোক, গল্পে ফিরি। অপূর্ব শহরে লেখাপড়া করে। কিন্তু তার বাড়ি গ্রামে। গ্রামে ফেরার সময় অপূর্ব প্রথম মৃম্ময়ীকে দেখে। এবং মুগ্ধ হয়। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই তাদের বিয়ে হয়ে যায়! রবীন্দ্রনাথের যুগে বাল্যবিবাহ অতি সাধারণ বিষয় ছিল। আমাদের নবীজিও অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করেছেন। বাল্যবিবাহ একটি অভিশাপ। আমাদের রবীন্দ্রনাথ কোনো অলৌকিক গল্প লিখেন নাই। তার সময় সমাজে তিনি যা দেখেছেন তাই লিখেছেন। এখন কোনো মা বাবা ৮/১০ বছরের কোনো মেয়েকে বিয়ে দেন না।
গল্পে ফিরি, অল্প বয়সে মৃম্ময়ীর বিয়ে হয়।
সংসার ও শ্বশুর শ্বাশুড়ি তার ভালো লাগে না। এসব তার বুঝার কথাও না। তার ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। খেলার সাথী রাখালের সাথে খেলতে ভালো লাগে। কিন্তু তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। স্বামী অপূর্ব মৃম্ময়ীকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি যায় নৌকায় করে। শ্বশুর বাড়ি মৃম্ময়ীয় ভালো লাগে না। তার স্বামী শহরে যায়। এবং বলে যায়, তুমি না ডাকলে আমি আর ফিরবো না। এদিকে মৃম্ময়ী তার বাবার বাড়ি যায়। এবং একসময় সে অপূর্বকে মিস করে। স্বামী স্ত্রীকে রেখে ফিরে যাওয়ার সময় একটা চুমু চায়। স্ত্রীর বয়স অল্প সে এসব বুঝে না। স্বামী বেচারা কষ্ট পায়। কিন্তু নির্বোধ অপূর্ব অল্প বয়সী মেয়ে কেন বিয়ে করলো? বাচ্চা মেয়ে এসব বুঝে? অপূর্ব তো বিএ পাশ ছেলে, তার বুঝা উচিৎ ছিলো অল্প বাল্যবিবাহ করা ভুল। অপূর্ব ভুল করেছে এজন্য তার বিয়ের পর কপাল চাপড়াতে হয়েছে।
একসময় মৃম্ময়ী শ্বশুর বাড়ি ফিরে যায়।
তার স্বামী অপূর্বকে চিঠি লিখে। কিন্তু চিঠি অপূর্ব পায় না। সমাপ্তি গল্পের মুল বিষয় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। বাল্যবিবাহ খারাপ। স্ত্রীর কারণে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। স্ত্রী অবুঝ হলে স্বামীর কপালে দুঃখ থাকে। অপূর্ব অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করেছে। সেই মেয়ে প্রেম ভালোবাসা চুমু টুমু কিছুই বুঝে না। আসলে রবীন্দ্রনাথের আমলে মেয়ে গুলো বোকা বোকা ছিলো। কারণ তখন ইন্টারনেট ছিলো না, মোবাইল ফোন ছিলো না। টিকটক, ইউটিউব ছিলো না। বর্তমান সময়ের অল্প বয়সী মেয়েরা বেশ পাকনা। তারা অল্প বয়সেই সব কিছু জানে এবং বুঝে। লেখকদের কোনো কোনো বিষয়ের উপর দুর্বলতা থাকে। রবীন্দ্রনাথেরও দুর্বলতা ছিলো। উনি তার গল্পের ভেতর প্রকৃতির বর্ননা দিতেন মনের মাধুরি মিশিয়ে। তার প্রিয় ঋতু ছিলো বর্ষাকাল। অপূর্ব তার স্ত্রীকে নিয়ে নৌকায় করে যাচ্ছে। এটা রবীন্দ্রনাথ সুন্দর করে বর্ননা দিয়েছেন।
সময় গড়ায়, বয়স বাড়ে।
শেষমেশ মৃম্ময়ী অপূর্বর শহরের বাসায় যায়। দুজনের মিলন হয়। সমাপ্তি গল্পের সুন্দর সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু হৈমন্তি গল্পের সুন্দর সমাপ্তি ঘটে না। রবীন্দ্রনাথ সব সময় সমাজ পরিবর্তন করতে চাইতেন। সমাপ্তি গল্প যখন লেখা হয়, তখন রবীন্দ্রনাথের ৩২ বছর বয়স। রবীন্দ্রনাথ তার লেখাতে নারীকে অসহায়, অবলা ভাবে উপস্থাপন করেন। যাইহোক, এখন গ্রেট চাঁদগাজি বলবেন- গল্পের নায়ক নায়িকার নাম জানলাম। ঘটনাও মোটামুটি বুঝলাম। কিন্তু তোমার বক্তব্য কি? আমার বক্তব্য হচ্ছে সমাপ্তি গল্প লেখার পর রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ভাবনার অনেক পরিবর্তন হয়। দীর্ঘ বছর পার হয়। রবীন্দ্রনাথ অনেক জ্ঞানলাভ করেন। তারপর তিনি হৈমন্তি গল্প লিখেন। দুটা গল্প পড়ার পর আপনি অনুভব করবেন চিন্তা ভাবনা এবং অভিজ্ঞতা কি সুন্দর ও সহজ করে বদলে যায়। মানুষ তার অভিজ্ঞতার বাইরে কিছু লিখতে পারে না। সমাপ্তি গল্পে রবীন্দ্রনাথ যা লিখেছেন। কিন্তু হৈমন্তি গল্পে গিয়ে দেখা গেল রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কিছুটা চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে।
সমাপ্তি গল্পে 'বর্গী' শব্দটা এসেছে।
এযুগের ছেলেমেয়েরা বর্গী কি জানে না। একটু কষ্ট করে বাংলা অভিধান দেখবে, সেই পরিশ্রমটুকু করবে না। আজিব! আলিবাবা চল্লিশ চোরের মতো বর্গীরা হঠাৎ আক্রমণ করতো। সব ছিনিয়ে নিতো। তারা ঘোড়ায় করে আসতো। ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ পর্যন্ত বর্গীরা সীমান্ত এলাকায় ডাকাতি করতো। টানা দশ তারা ভালোই ডাকাতি করে গেছে সীমান্ত এলাকায়। ভারতে একটা জাত ছিলো মারাঠা নামে। এই মারাঠারা মূলত বর্গী ছিলো। ভারতের জাতীয় সংগীতে মারাঠা জাতের কথাও বলা হয়েছে। 'বঙ্গে বর্গী' নামে একটা বই আছে। লেখক বিহারিলাল সরকার। এই বইটি পড়লে আপনি বর্গী সম্পর্কে সব জানতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


