somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

দাদা দাদীর গল্প

২৪ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, দাদা দেখেন চোখে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছেন না।
দাদা অন্ধ হয়ে গেছেন। ডাক্তার বললেন, বাকি জীবনে উনি আর কিচ্ছু দেখতে পাবেন না। কলকাতা নিয়ে যাওয়া হলো, কলকাতার ডাক্তারও একই কথা বললেন। দাদা ছিলেন জমিদার টাইপ মানুষ। দেখতে শুনতে স্মার্ট। লেখাপড়া শেষ করে দাদা কলকাতায় ব্যবসা করতেন। এখন দাদা চোখে দেখেন না। ব্যবসা বন্ধ। সারাদিন বাসায় থাকেন। তার অনেক গুলো ছেলেমেয়ে। দাদা থাকেন বিক্রমপুর। দোতলা কাঠের বাড়ি। সারাদিন দাদা উঠানে বসে থাকেন। তার একমাত্র সঙ্গী তিন ব্যাটারির রেডিও। দেশ বিদেশের সব খবর তার জানা। তার নিয়ম কানুনের বাইরে কেউ যেতে পারতো না। সন্ধ্যার পর বাড়ির দরজায় তিনি তালা মেরে দিতেন।

দাদী দাদাকে অনেক ভালোবাসেন।
দাদাকে ছাড়া দাদী কোথাও যায় না। দুজনে অনেক খাতির। সারাদিন দুজনে পান খান। দাদা অন্ধ হয়ে যাওয়াতে তার ছেলেমেয়েরা কিছুটা স্বাধীন হয়ে গেলো। তবু দাদা চেষ্টা করেন- ছেলেমেয়ে যেন বেলাইনে যেতে না পারে। কঠিন শাসন অব্যহত ছিলো। আমার বাবা সবচেয়ে বড়। দাদা আব্বাকে যেকোনো কিছুতে ডাকে। আলাপ আলোচনা করে। আব্বা আমাকে বছরে দুই তিন বার গ্রামে নিয়ে যেতো। তখন বিক্রমুপুর যেতে অনেক সময় লাগতো। নদীপথে যেতে হতো। অন্ধ দাদার পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম। দাদা তার ছোটবেলার গল্প শুনাতেন। গল্প শুনতে আমি সব সময় পছন্দ করি। এখনও মানুষের গল্প শুনি।

দাদাকে নিয়ে পদ্মার পাড় যেতাম বিকেলে।
মাঝে মাঝে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতাম। ভাগ্যকুল বাজারে গিয়ে মিষ্টি খেতাম। দাদার ব্যাক্তিত্ব ছিলো। ব্যাক্তিত্বের কারণে গ্রামের সবাই দাদাকে সম্মান করতো। দাদা কোনোদিন সেলুনে গিয়ে চুল দাড়ি কাটেননি। নাপিত বাসায় এসে দাদার চুল দাড়ি কেটে দিতেন। একবার দাদা ঢাকায় আসেন। আমাদের বাড়িতে উঠেন। তখন আমি ক্লাশ সেভেনে পড়ি। দাদাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। একদিন দাদাকে নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন গেলাম। দাদা বললেন, এখানকার পরিস্থিতি বর্ননা করো। আরেকদিন দাদাকে নিয়ে রমনা পার্কে গেলাম। রমনা পার্কের পরিস্থিতি বলতে গেলাম, দাদা বললেন, বলতে হবে না। আমি অনুভব করতে পারছি। শীতল বাতাস, পাখির গান। অতি মনোরম পরিবেশ।

গ্রামে গেলে দাদীর সাথেও গল্প হতো।
দাদীর জীবন গেছে রান্না করতে করতে। দাদা সাত পদ ছাড়া খেতে বসতেন না। চোখে দেখেন না। তবু তার সাত পদ চাই-ই চাই। কোনো কোনো দিন দুই এক পদ কম হলে তিনি রাগারাগি করতেন। রেডিও এবং টেলিভিশন ভেঙ্গে ফেলতেন। দাদীর রান্না ছাড়া দাদা অন্য কারো রান্না খেতেন না। বিক্রমপুরের মানুষের রান্না ভালো। আমার মা খালা, ফুপু সবার রান্না দারুন। দাদী মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন, বাপের বাড়ি যেতে পারি না। শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না। তোমার দাদা আমাকে কোথাও যেতে দেন না। একবার দাদা দাদী ঢাকায় আমাদের বাসায় আসেন। তখন দাদাকে অনুরোধ করে আমি দাদীকে বাইরে নিয়ে যাই।

দাদী রিকশায় ঘুরতে পছন্দ করতেন।
শেষ বয়সে দাদীর সিগারেটের অভ্যাস হয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। আমি দাদীকে কার্টূন কার্টুন সিগারেট কিনে দিতাম। একদিন দাদী ছেলেমেয়েদের চোখ আড়াল করে বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেন। তখন তার ছেলেমেয়েরা বলল- আপনি যে সিগারেট খান সেটা আমরা জানি। কাজেই লুকিয়ে খেতে হবে না। দাদী ভালো গান জানতেন। রান্না করতেন আর গান গাইতেন। দাদা-দাদীর এগারো জন ছেলেমেয়ে। তেরো জন ছিলো। জন্মের পর-পর দুজন মারা যায়। দাদীর অনেক গহনা ছিলো। সেই সব গহনা চুরী হয়ে যায়।

মৃত্যুর আগে আমি দাদা দাদীর সেবা করেছি।
দাদা খুব বেশি রোগে শোকে ভূগেন নাই। দাদী ভূগেছেন অনেক। উঠে বসার শক্তি নেই। কিছু চিবিয়ে খাওয়ার শক্তি নেই। হাতে ঘা হয়েছে। সেই ঘা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। দাদীর অনেক কষ্ট। তবু তার দম বন্ধ হয়ে যায় না। কদিন পর-পরই তার নিশ্বাসের টান ওঠে। সবাই ভাবে আজই বুঝি দাদী মারা যাবেন। তার কষ্টের অবসান হবে। কিন্তু না, দাদী মরে না। হাসপাতালে দুদিন থেকে বাসায় ফিরে আসে। অসংখ্য বার আমি দাদীকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। দাদা মারা গেলেন। তার চার বছর পর দাদী মারা গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×