
ফারাজা তাবাসসুম খান,
প্রিয় কন্যা আমার। কলিজা আমার। তুমি গভীর ঘুমে ছিলে, তাই তোমাকে জাগাইনি। তবে আলতো করে তোমার কপালে একটা চুমু খেয়েছি। তোমার পাশে তোমার মা শুয়েছিলো, সে-ও তোমার মতো গভীর ঘুমে। তাকে চুমু খাইনি। তোমাকে চুমু দিয়ে আমি আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছি। বাইরে বের হয়ে দেখি, তুমুল বৃষ্টি। ইচ্ছা করছিলো ঘরে ফিরে যাই, মন ভরে ঘুমাই। কিন্তু কাজ আছে। গতকাল রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি হবে। আজ তুমি আরাম করে ঘুমাও। তোমার স্কুল বন্ধ। স্কুলে ভরতি হয়েছো এক বছর হয়ে এলো! সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। বুদ্ধিমানরা সময় অপচয় করে না। সময়টা কাজে লাগায়। তুমি সময় অপচয় করো না। সময়কে গুরুত্ব দিও।
ফারাজা, আদরের মেয়ে আমার-
আমাদের দেশের পরিস্থিতি ভালো না। শেখ হাসিনা ইচ্ছার বিররুদ্ধে ভারত চলে যেতে বাধ্য হয়। তারপর দেশের ক্ষমতা হাতে তুলে নেয় ডঃ ইউনুস। উনার যোগ্যতা বলতে উনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। অবশ্য নোবেল প্রাইজ পাওয়া চারটেখানি কথা নয়। ইউনুস সাহেব দেশ পরিচালনা করার মতো যোগ্য লোক নয়। উনি নিজেও বলেছেন, আমি রাজনীতির লোক না। উনি ক্ষমতা পাওয়ার পর আমার দৃষ্টিতে একটাও ভালো কাজ করতে পারেন নাই। কারাগার থেকে দাগী আসামীদের ছেড়ে দিচ্ছে, দন্ডপ্রাপ্ত আসামী রাজাকারকে ছেড়ে দিচ্ছেন। সেই রাজাকারকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, ফুলের মালা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার গলায় পরানো হচ্ছে জুতার মালা। চিন্তা করে দেখো অবস্থা! মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় পাওয়া। ১৯৭১ ভুলে গেলে আমাদের চলবে না।
ফারাজা, দেশে কি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।
দাগী আসামীদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর পুরো- দেশে চুরী, ডাকাতি এবং ছিনতাই অনেক বেড়ে গেছে। ইউনুস সাহেবের সেদিকে নজর নেই। শেখ মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো। ইউনুস সাহেব চুপ। বাড়িটা কি দোষ করলো? শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙ্গে দিলো, ভাস্কর্যের গায়ে মুতে দিলো, ইউনুস সাহেব চুপ। আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে আগুন দিয়ে দিলো। কোটি টাকার উপরে খরচ করে একটা আধুনিক বিল্ডিং করা হয়েছিলো, সেটাতেও আগুন লাগিয়ে দিলো। ইউনুস সাহেব চুপ। যারা আওয়ামীলীগ সাপোর্ট করতো, তাদের রাস্তায় ধরে মারধর শুরু করলো। ইউনুস সাহেব চুপ। আওয়ামীলীগ যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হবে। জামাত শিবির আইন হাতে তুলে নিয়ে এরকম অরাজকতা করছে কেন? যারা পুলীশ হত্যা করলো, যারা থানায় আগুন দিলো, মেট্রোরেল ভাঙল, কারাগার থেকে আসামী নিয়ে গেলো- এরকম জঘন্য অপরাধ যারা করলো- তাদের গ্রেফতার করা হলো না। বুঝো তাহলে দেশের অবস্থা।
ফাজ্জা, দেশের অবস্থা ভালো না।
আমি রাজনীতি করি না। কিন্তু একজন সাধারন মানুষ হিসেবে আমি সব দেখি। এত অন্যায়, এত অত্যাচার! দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর হয়েছে। এই ৫৪ বছরে অনেক দলই দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু আওয়ামীলীগের আমলে দেশের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কাগজে কলমে শুধু উন্নয়ন নয়। চোখের সামনেই উন্নয়ন মানুষ উপভোগ করছে। এই যে মেট্রোরেট, পদ্মাসেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। গ্রামের কাচা রাস্তা গুলো পর্যন্ত পাকা হয়েছে। হ্যা আওয়ামীলীগের অনেকে দূর্নীতি করেছে- কথা সত্য। তবে আওয়ামী লীগের আমলে দেশ দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি প্রতি বছর। আওয়ামীলীগ মন্দের ভালো হলেও ভালো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হচ্ছে আওয়ামীলীগ। কিন্তু দেশ এখন ৭১ এর পরাজিতদের হাতে। মূলত শেখ হাসিনার পতন তারাই করেছে। ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা দেশকে পাকিস্তান সিরিয়া বানাতে চায়।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
এই আওয়ামীলীগই রাজাকারদের বিচার করেছে। এই আওয়ামীলীগই শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার করেছে। এখন অন্তবর্তী সরকার দশ মাস ধরে ক্ষমতায়, তারা দেশের জন্য কি করেছে? একটা ভালো কাজ কি করেছে? তারা বারবার সংস্কারের কথা বলছে। কি সংস্কারটা তারা করবে? সেই ক্ষমতা তাদের আছে? যারা উপদেষ্টা হয়েছেন- তারা অযোগ্য, অদক্ষ। রাষ্ট্র পরিচালনা করার মতো মেধা তাদের নেই। তাদের কাজ যেন একটাই আওয়ামীলীগের নিন্দা করা। আমার ধারনা, এখন যারা উপদেষ্টা আছেন, একসময় তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। সেদিন এক রিকশাওলা বলছে, আমাকে সুযোগ দেন- শিবিরের কর্মী, জামাতের দালাল হাসনাত, সারজিসদের ন্যাংটা করে প্রেসক্লাবের সামনে পেটাবো। তারপর আমাকে দশ বছর জেল দেন কোনো সমস্যা নাই। তাহলে বুঝো এই সমস্ত সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির লোকদের উপর মানুষের কত ঘৃণা জমেছে। এই দেশের ছাত্ররা আহাম্মক। জাস্ট আহাম্মক। এরা মব সৃষ্টি করে ডাকাতি করছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে ছাত্ররা ভুল পথে পা দিয়েছে।
প্রিয় কন্যা আমার-
আমি দুঃখিত, তোমার সাথে রাজনৈতিক আলাপ শুরু করেছি। আসলে বটগাছের নিচে দাঁড়ালে শরীরে বটগাছের ছায়া পড়বে। তেমনি দেশের সরকার প্রধান কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা দেশের প্রতিটা মানুষের গায়ে এসে পড়ে। বাদ দেই এইসব প্যাচাল। তোমাকে বিরক্ত করতে চাই না। শোনো, আগামী মাসের সাত তারিখ ইদ। কোরবানীর ইদ। ইদ উপলক্ষ্যে তোমার জন্য নতুন জামা, জুতো কিনবো। অবশ্য তোমার জন্য ক'দিন পর-পরই নতুন জামা জুতো কিনি। তোমাকে নিয়ে হাঁটে যাবো। গত বছরও গিয়েছিলাম। ফাজ্জা সেদিন তুমি একটা মন্দ কাজ করেছো। কাজটা ঠিক করনি। সেদিন আমার ছুটি ছিলো। আমি অনেকবেলা পর্যন্ত ঘুমাবো। প্রতিদিন তো আমাকে অনেক সকালেই ঘুম থেকে উঠতে হয়। ছুটির দিনে লম্বা সময় ধরে ঘুমাতে মন চায়। তুমি সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় এসি বন্ধ করে দিয়ে গেছো। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। একবার আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার আর ঘুম আসে না।
দুষ্ট ফারাজা, একবার ভেবে দেখো আমি নাই।
আমি মারা গেছি। বাবা ছাড়া এই সমাজে কিভাবে তুমি বড় হবে? বাবা না থাকলে কোনো মেয়ে আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারে না। এই সমাজ ভালো না। সমাজের মানুষ গুলো ভালো। সমাজে ইতরের সংখ্যাই বেশি। অন্তত পক্ষে আমার আরো বিশ বছর বেঁচে থাকা দরকার। আমি যতক্ষন বাইরে থাকি, তোমাকে নিয়ে চিন্তায় অস্থির থাকি। এই বুঝি খেলা করতে গিয়ে ব্যথা পেলে, এই বুঝি গোছল করতে গিয়ে পা পিছলে ব্যথা পেলে, এই বুঝি সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে ব্যথা পেলে। সারাক্ষন আমাকে চিন্তায় থাকতে হয়। চিন্তা করতে করতে আমার প্রেসার বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে কামকাজ বাদ দিয়ে সারাক্ষন তোমার পাশে থাকি। তোমাকে চোখে চোখে রাখি। আজ এখানেই লেখা শেষ করছি। সকালের বৃষ্টি এখনো থামেনি।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



