
বয়স কোনো ব্যাপার না। সাইকেল চালানো ভালো।
ভালো ব্যয়াম। সাইকেল চালানো শেখা কঠিন কিছু না। আমি সাইকেল চালানো শিখেছি ছোটবেলায়। কেউ আমাকে হাতে ধরে সাইকেল চালানো শেখায়নি। তখন আমার বয়স দশ হবে। আমাদের সময় সাইকেল ভাড়া পাওয়া যেতো। আমি সাইকেল ভাড়া নিয়ে চালানো শিখেছি। এক ঘন্টা ৮ টাকা। তখন রাস্তার পাশে এক কাপ চায়ের দাম ছিলো ১ টাকা। একটা দেশি মূরগী পাওয়া যেতো ৫০/৬০ টাকা দিয়ে। পাইজাম চাল ছিলো ৮ টাকা কেজি। এক পিছ ডিম দুটা।
প্রথম প্রথম কষ্ট হতো। ব্যালেন্স রাখতে পারতাম না।
মাঝে মাঝে সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতাম। পা ছিলে যেতো। রক্ত বের হতো। কিন্তু আমার জিদ সাইকেল চালানো শিখবই। এবং অবশেষে একদিন সাইকেল চালানো শিখে গেলাম। আমার মনে হলো, আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। এদিকে আমার বাবা মা জানতো না তাদের ছেলে সাইকেল চালানো শিখে গেছে। একটা জিনিস শেখার মধ্যে আনন্দ আছে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে সাইকেল ভাড়া নিতাম। মনের সুখে সাইকেল চালাতাম। সাইকেল চালাতা। সাইকেল চালিয়ে বাসাবো রাজারবাগ কালিবাড়ি চলে যেতাম। কোনোদিন চলে যেতাম রামপুরা। বনশ্রী।
বাবা মাকে বললাম, সাইকেল কিনে দাও।
মা চিৎকার করে উঠলো, না। কখনো না। আমি চাই না, তোমার হাত পা ভেঙে যাক। কোনো দূর্ঘটনা ঘটুক। ভীষণ মন খারাপ হলো! আশে পাশে অনেক ছেলের সাইকেল আছে। সাড়ে তিন হাজার টাকা হলে সেই সময় হিরো সাইকেল পাওয়া যেতো। এখন একটা সাইকেলের দাম ২৫/৩০ হাজার টাকা। আগের যুগের বাপ মা যেন কেমন ছিলো। কিছু চাইলেই মানা করে দিতো। আর এযুগের বাবা মায়ের কাছে কিছু চাইতে হয় না। তারা নিজ থেকেই দিয়ে দেয়। আজকাল অনেক ছেলেকে দেখি বাইক চালিয়ে স্কুলে যায়। অল্প বয়সী ছেলেরা ধূমধাম করে মটর সাইকেল চালাচ্ছে। ভাবা যায়!
দুটা জিনিস মানুষ একবার শিখলে কখনো ভুলে না।
এক, সাইকেল চালানো। দুই, সাতার। আমি আজও সাইকেল চালানো ভুলিনি। সেদিন হাতের কাছে পরিচিত একজনের একটা সাইকেল পেলাম। সাইকেল চালালাম টানা এক ঘন্টা। কত জায়গা ঘুরলাম। মিরপুর, ভাসান টেক, ইবরাহিমপুর, চিড়িয়াখানা রোড। ভালোই চালালাম। বেশ লাগলো। আজকাল মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একটা সাইকেল কিনি। সেই আগের মতো সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াই। একবার সাইকেল চালাতে গিয়ে একসিডেন্ট করলাম। আমার কোনো দোষ নেই। পেছন থেকে একটা প্রাইভেট কার আমায় ধাক্কা দেয়। পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলাম। পেছনের চাকা ভেঙে গেলো। সেই সাইকেল টেনে টেনে বাসায় ফিরি। সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল।
এসএসসি পরীক্ষার পর একটা সাইকেল পেলাম।
অবিশ্বাস্য! নতুন সাইকেল। হিরো সাইকেল। সেই সাইকেল দিয়ে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ফেললাম। ঢাকার এমন কোনো জায়গা বাদ নেই, যে সাইকেলে করে যাইনি। মাঝে মাঝে আমার এক বন্ধু আসতো। বন্ধুর সাইকেল আছে। আমরা দুজন সাইকেলে করে নানান জায়গায় যেতাম। পুরান ঢাকায় গিয়ে নেহারি আর নান রুটি খেতাম। আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দিয়াবাড়ি, কিছুই বাদ দেইনি। সুকন্যা নামে একটা মেয়ে ছিলো। আমাদের সাথে পড়তো। আমার খুব ইচ্ছে করতো সুকন্যাকে নিয়ে সাইকেলে করে ঘুরেবেড়াই। তাকে শাহবাগ নিয়ে চটপটি খাইয়ে নিয়ে আসি। মেয়েরা তো চটপটি ফুচকাই পছন্দ করে।
গ্রামে আগে সব বাড়িতে একটা করে সাইকেল থাকতো।
ফনিক্স সাইকেল। আমার এক বন্ধুর বাবা পল্লী ডাক্তার। তার একটা ফনিক্স সাইকেল আছে। এই সাইকেল তার চল্লিশ বছরের সঙ্গী। এই সাইকেলে করে আংকেল রোগীর বাড়ি যেতো। আংকেলের সাইকেলে আমি উঠেছি। আমি বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। বাগেরহাট। রায়েন্দা। গ্রামের নাম রসূলপুর। একদম সুন্দরবনের কাছে গ্রাম। আমার বন্ধুর বাবা সাইকেলে করে বাজারে যায়। সাইকেলে করে শহরে যায়। এমনকি তার সাইকেলে করে চেম্বারে যায়। আংকেল সাইকেল চালানোতে দক্ষ। একহাত দিয়ে সাইকেল চালায়। আরেক হাতে থাকে তিন ব্যাটারির টর্চ। মাঝে মাঝে টর্চ জ্বেলে রাস্তা দেখে নেন। বিকেলের দিকে আমি আংকেলের ফার্মেসীতে যেতাম। গ্রামের লোকজন আসতো। তাদের সাথে গল্প করতাম।
হাসিনার পতনের সময়ের ঘটনা।
আমার এক বন্ধু সাইকেল চালায়। বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে। তারা প্রতি শুক্রবার সাইকেল চালিয়ে ঢাকার আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। আমার বন্ধু সেই গ্রুপের সাথে সাইকেল করে ঢাকার আশেপাশে ঘুরে। বন্ধুর এক ছেলে। এক মেয়ে। একদিন বাসায় ডিবি পুলিশ এসে বন্ধুকে ধরে নিয়ে যায়। তার অপরাধ সে নাকি জুলাই আন্দোলনে আওয়ামীলীগের হয়ে মানুষ মেরেছে। আজ ছয় মাস ধরে বন্ধু কারাগারে। তার জামিন হচ্ছে না। ইউনুস ক্ষমতা থেকে না যাওয়া পর্যন্ত জামিন হবে না। আমার বন্ধু কোনো দিন রাজনীতি করে নাই। কোনো জুট ঝামেলায় নাই। অথচ সে আজ কারাগারে। আমার বন্ধুর মতো বিনা অপরাধে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ কারাগারে। ইদের পরের দিন আমি বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। বন্ধুর মা খুব কান্না করলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


