১। বিশাল এক পাহাড়।
পাহাড়ের গায়ে ঝরনা। ঝরনা বয়ে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে। বছরের একটা সময় এসে ঝরনার পানি কিছুটা কমে যায়। যাইহোক, পাহাড়ের গায়ে এক নারী বসে আছে। পাশে তার দুই বছরের ছেলে। মেয়েটার কাধে একটা ব্যাগ। ব্যাগের ভিতর কি আছে আমি জানি না। তবে মেয়েটার হাতে চুড়ি নেই, ঘড়ি আছে। হাতঘড়ি। মেয়েটা ক্লান্ত। সে এক চুমুকে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে ফেলল। মেয়েটা মন দিয়ে মোবাইল টিপসে। এই সুযোগে বাচ্চাটা হাঁটতে হাঁটতে ঝরনার কাছে চলে যায়। ঝরনা দেখে বাচ্চা ভীষন খুশি। খুশীতে সে পাহাড় থেকে লাফ দেয়। এদিকে বাচ্চার মায়ের কোনো খবর নেই। সে মোবাইল টিপছে। বাচ্চাটা বুদ্ধিমান। সে পড়তে পড়তে একটা গাছের ঢাল ধরে ঝুলে থাকে। এমন সময় পাহাড় থেকে একটা সাপ বাচ্চাটিকে দেখতে পায়। সাপ ক্ষুধার্থ। আল্লাহ মাঝে মাঝে মানুষকে বিরাট বিপদে ফেলেন। পরীক্ষা করেন। ইমানের পরীক্ষা।
এটা কোনো গল্প নয়। বাস্তব ঘটনা।
সাপ এগিয়ে যেতে থাকে বাচ্চাটির দিকে। বাচ্চার মায়ের হুশ নেই। সে মোবাইলে ব্যস্ত। পাহাড়ের কাছ ঘেষে একটা হেলিকাপ্টার যাচ্ছিলো। হেলিকাপ্টারে ছিলো মেজর জেনারেল প্রফেসর কাল্ট। বাচ্চাটাকে দেখার পর কাল্ট সাথে সাথে হেলিকাপ্টার থেকে ঝাপ দেয়। পরপর দুটা গুলি করে কাল্ট সাপটাকে মেরে ফেলে। তারপর বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে। বাচ্চাটা বেশ আহত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। দিনশেষে বাচ্চার মা কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে আসে। তখন মেজর জেনারেল কাল্ট বলেন, তুমি বাচ্চা ফেরত পাবে না। নো নেভার। তুমি মা হিসেবে আনারি। এই বাচ্চা এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে। তখন বাচ্চার মা বলেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী কাল্ট। তোমার স্ত্রী তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাহলে আমার বাচ্চাকে লালন পালন কে করিবে? আসো আমরা বিয়ে করি। তাহলে আমাদের একটা পরিবার হয়ে যাবে। আমরা সুখী হবো।
২। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায়। গুলশান-২।
সময় দুপুর দু'টা। লম্বা সিগনাল পড়েছে। মকবুল নামে একলোক- মূরগী বিক্রি করছে। মকবুলের হাতে চারটা মূরগী। দেশী মূরগী। সে গ্রাম থেকে শহরে আসার পথে চারটা মূরগী নিয়ে আসছে। তার মূরগী কেউ কিনছে না। সবাই তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। মকবুলের ধৈর্য্য অসীম। সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে। ট্রাফিক বলল, আমার কাছে টাকা নেই। নইলে আমি তোমার মূরগী গুলো কিনে নিতাম। দেশী মূরগীর স্বাদই অন্যরকম। কতদিন খাই না! আবার সিগনাল পড়েছে। এবার মকবুলের ভাগ্য ভালো। একটা সাদা প্রাইভেটকার থেকে একজন ডাক দিলো। মকবুল দৌড়ে গেলো। একজন বলল, মূরগী গুলো গাড়ির ব্যাকডালায় রেখে দাও। মকবুল মূরগী গুলো ব্যাকডালায় রেখে দিলো। টাকা না দিয়েই গাড়ি চলে গেলো। মকবুল গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছে। গাড়ি থামেনি। মানুষ গাড়ির সাথে দৌড়ে পারবে না। এমন নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি মকবুল কোনোদিন হয়নি।
মকবুল পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে তার মাথা ফেটে যায়।
মকবুল কোনো রকমে উঠে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে ফুটপাতে বসে পড়ে। চায়ের দোকানদার বলে, শহরে নিশ্চয়ই নতুন? মকবুলের কপাল থেকে গাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। চায়ের দোকানদার মকবুলকে এক গ্লাস পানি দেয়। এগুলো অতীতের কথা। বর্তমানে মকবুল বিরাট ব্যবসায়ী। কাওরানবাজারে তার মূরগীর আড়ত আছে। ঢাকা শহরের সতেরো টা রেস্টুরেন্টে মূরগী সাপলাই দেয়। এখন মকবুল ধনী। এই শহরে তার দুটা ফ্লাট আছে। ঢাকার জিনিজিরায় পাচ কাঠা জমি আছে। তার তিন ছেলেমেয়ে। এবং স্ত্রী জুলেখা। সুখের সংসার। জুলেখা জানে না মকবুল প্রতি শুক্রবার রাতে কুসুম নামে এক নারীর কাছে যায়। শক্রবার রাত কুসুমের জন্য বরাদ্ধ। কুসুমের চমক আছে। পুরুষ মানুষের একজন দিয়ে চলে না। এজন্যই তো নবীজি একের অধিক বিয়ে করিয়াছেন। তবে মকবুল একের অধিক বিয়ে করবে না। একের অধিক বিবাহ যারা করে তাদের জীবন কাটে দুঃখে কষ্টে।
৩। আবু তালিব হাই স্কুল।
স্কুলের দাড়োয়ান মুজিবর। মজিবরের বয়স ৫৮ বছর। মুজিবর দেরীতে বিয়ে করেছেন। তার বড় মেয়ের বয়স সাত বছর। ছোট মেয়ের বয়স চার। দুপুর তিনিটায় মুজিবর স্কুলে ঘন্টা দেয়। টিফিফন টাইমের পর দ্বিতীয় ক্লাশ শুরু। ঘন্টা দিয়ে মুজিবর স্কুল থেকে বের হয়। হেড স্যার তাকে বাজারে পাঠিয়েছেন। হেড স্যারের বাসার বাজার মুজিবরই করে দেয়। আজ মজিবরের ভাগ্য খারাপ। রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা অটো তাকে ধাক্কা দেয়। সে ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়। অটো সময় মতো ব্রেক দিতে পারেনি। মুজিবরের উপর দিয়েই অটো চলে যায়। মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে। মুজিবর মারা যায়। অটোচালককে পথচারীরা ধরে ফেলেছে। তাকে পুলিশে দেওয়া হবে। এবং একজন মসজিদের ইমাম বলল, অটো চালককে কেন পুলিশে দেবে? অটো চালকের কোনো দোষ নেই। মুজিবর মারা গেছে আল্লাহর ইচ্ছায়। জন্ম মৃত্যু বিয়ে আল্লহর ইচ্ছায় হয়। মুজিবরের মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আল্লাহ মুজিবরের মৃত্যু এই এভাবেই লিখে রেখেছিলেন। শুধু আমরা কেন অটোচালককে শাস্তি দিবো?
দুই মাস পার হয়ে গেছে।
মজিবরের ঘরে অভাব। পরিবারটি প্রায় না খেয়ে আছে। মজিবরের স্ত্রী আবু তালিব স্কুলে যায়। হেড স্যারকে বলে, মুজিবরের চাকরিটা তাকে দেওয়া হোক। এই কথা শুনে হেড স্যার খুব রেগে গেলেন। হেড স্যারের চেয়ে বেশি রেগে গেলেন ধর্ম শিক্ষক আবদুল আজিজ। মুজিবরের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলো। অভাব এবং ক্ষুধা খুব খারাপ জিনিস। এই দুই জিনিস মানুষকে অনেক নিচে নামিয়ে দেয়। মুজিবরের স্ত্রী বাসা বাড়ির কাজের জন্য গেলো। সাহেবের স্ত্রী তাকে কাজে রাখলো না। বলল, নতুন বুয়া আমি রাখিব না। এরা আসলে কাজ করতে আসে না। চুরী করতে আসে। মুজিবরের স্ত্রী কান্না করতে করতে বলল, মেমসাহেব আমি চোর নই। আপনার বাসায় কাজ করতে চাই। আমার স্বামী দূর্ঘটনায় মারা গেছে। তাই আমি বাসা বাড়িতে কাজ করতে এসেছি। ঘরে দুটা ছোট বাচ্চা। মেমসাহেব বললেন, মিথ্যা ভালো মানুষি ছাড়ো। আমি মানুষ চিনি। কে কাজ করবে, আর কে চুরী করবে সেটা আমি দেখলেই বুঝি।