somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজকের ডায়েরী- ১৭২

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী।
জন্ম তারিখ, মৃত্যু তারিখ এবং বিয়ের তারিখ- এসব আমার কোনো কালেও মনে থাকে না। আজ যে বাবার মৃত্যু বার্ষিকী সেটাও আমার একদম মনে নেই। গতকাল ছোট ভাই ফোন করে বলল- বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর কথা। দোয়া ও গরীব দুঃখীদের খাওয়ানো হবে। মাদ্রাসায় কোরআন খতম হবে। মাদ্রাসার ছেলেদের খাওয়ানো হবে। আমি যেন থাকি। যাইহোক, আজ যেহেতু বাবার মৃত্যু বার্ষিকী, তাই আজ বাবাকে নিয়ে লিখবো। আব্বার লন্ডন যাওয়ার কথা কিন্তু হঠাত করোনা হলো। এই করোনা'তে আব্বা মারা যায়। আব্বা সুস্থ সবল মানুষ। শুধু ডায়বেটিকস ছিলো। করোনাতে আব্বাকে হাসপাতালে ভরতি করানো হলো। ভালোর দিকে যাচ্ছিলো। আব্বাকে হাসপাতালে দেখতে যাবো-যাবো করে আর যাওয়া হয়নি। এদিকে আমি ব্যস্ত সুরভিকে নিয়ে। সুরভির বাচ্চা হবে। ডাক্তার যে টাইম দিয়েছে, সেটা টাইম পার হয়ে গেছে। ফারাজা হবে, চারিদিকে করোনা। চলছে লকডাউন। কেমনে কি করবো! এদিকে হঠাত আমার চাকরি চলে যায়। ভয়াবহ কঠিন অবস্থার মধ্যে ছিলাম। আব্বাকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া হয়নি।

আমার বাবা দারুন স্মার্ট মানুষ।
আব্বার হাতের লেখা অনেক সুন্দর। আব্বা দেখতে সুন্দর। মুখের ভাষা প্রাঞ্জল। বিশাল দিলওয়া মানুষ। মানবিক এবং হৃদয়বান। একবার আমাদের বাসায় এক চোর চুরী করতে এসে ধরা পড়ে যায়। পুরো এলাকার মানুষ চোরকে মারতে চায়। আব্বা সেই চোরকে মারতে দেয় নাই। চোরকে পেট ভরে খেতে দিয়েছে। চোর যাওয়ার সময় তাকে জামা কাপড় দিয়েছে। নগদ কিছু টাকাও দিয়েছে। চোরকে বুঝিয়ে বলেছে, চুরী করা ভালো নয়। তুমি কাজ করো। প্রয়োজনে রিকশা চালাও। হকারী করো। কিন্তু চুরী নয়। পরিশ্রম করো। পরিশ্রম করলেই সফলতা পাবে। আমার আব্বা আমাদের চার ভাইকে কোনোদিন ধমক দেন নাই। কান টেনে ধরেন নাই। আদর ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। একবার আমি নোয়াখালি গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। কোনো উপায় না দেখে আব্বাকে ফোন দেই। কিছুক্ষন পর দেখি আব্বা হেলিকাপ্টারে করে চলে এসেছে নোয়াখালি। হ্যা আমার আব্বা এই রকমই। সে চমকে দিতে পছন্দ করেন। আব্বার অভাব আজও আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি। আব্বাকে গ্রামে কবর দিয়ে ঢাকা আসি। বাসায় আসা মাত্র গ্রেট চাঁদগাজি আমাকে ফোন করেন। আমি খুব অবাক হই, চাঁদগাজী আমার নাম্বার কোথায় পেলেন? এবং উনি জানলেন কি করে আমার বাবা মারা গেছেন? ফোন করে উনি দুটা কথা বলেন, তাতে আমার মন শান্ত হয়।

আমার বাবা মন্ত্রী মিনিস্টার ছিলেন না।
কিন্তু চার-পাচ জন মন্ত্রী মিনিস্টারের ক্ষমতা তার ছিলো। কোনো সমস্যা বা ঝামেলা হলেই আমি আব্বাকে বলতাম এবং একদম নিশ্চিত হয়ে যেতাম। আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে আছে। একদিন স্কুলে এক শিক্ষক আমাকে গাধা বলেছিলেন। আব্বা স্কুলে এসে শিক্ষককে বললেন, আমার ছেলেকে গাধা বলে আপনি অন্যায় করেছেন। আমার ছেলেকে আপনার স্কুলে আমি পড়াবো না। আমাকে কোলে করে আব্বা বাসায় নিয়ে গেলেন। আমি ছোটবেলায় প্রায়ই আব্বার সাথে বাজারে যেতাম। আব্বা বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ কিনতো। কখনও আব্বা দামাদামি করতো না। বিক্রেতা যে দাম চাইতো, সেই দাম দিয়েই কিনতো। ভিক্ষুককে আব্বা সব সময় ১০০ টাকা করে ভিক্ষা দিতো। আব্বা বাসায় ফেরার সময় কখনো খালি হাতে বাসায় ফিরতো না। দুই হাত ভরতি করে ফল নিয়ে আসতো। আব্বা চমকে দিতে পছন্দ করতো। একবার আব্বা খুলনা গেলো, ঢাকা ফেরার পথে একশ'টা ইলিশ মাছ নিয়ে এলো। একবার মা একা সিনেমা দেখতে গেলো। (মা প্রতি সপ্তাহে সিনেমা দেখতে যেতো) তখন আমাদের জন্ম হয়নি। সিনেমা বিরতির সময় হলে লাইট জ্বলে উঠে। মা দেখে আব্বা পাশে বসে আছে।

আমার বিয়ের ঘটনাটা বলি-
সুরভির বাবা তার কন্যার সাথে আমার বিয়ে দেবেন না। নো, নেভার। কারন ছেলে (আমি) সামান্য পত্রিকা অফিসে চাকরি করে। সুরভি ফোন করে আমাকে বলল, আমাকে ভুলে যাও। বাবার অমতে গিয়ে আমি বিয়ে করতে পারিব না। এদিকে আমার মন খারাপ। মন খারাপ নিয়ে সারাদিন ঘুরিফিরি। একদিন আব্বা বলল, তোমার কি হইছে রে? চেহারার এই অবস্থা কেন? আমি সুরভির বাবার কথা বললাম। আব্বা সব শুনে বলল- 'আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না'! আব্বা আমাকে বলল, তুই কোনো চিন্তা করিস না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। পরদিন আব্বা সুরভির বাবার সাথে দেখা করলো। এবং সুরভির বাবা বললেন, বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন। আর আপনাকে দেখেছি, আপনার ছেলেকে দেখার দরকার নেই। ঝটপট বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গেলো। ধূমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো।

আব্বার সাথে হুটহাট কখনো কখনো রাস্তায় দেখা হয়ে যেতো।
আব্বা বলতো আয় চা খাই। রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে আব্বা একগাদা খাবারের অর্ডার করতো। হাত ধরে রাস্তা পার করে দিতো। রিকশা ঠিক করে দিতো। আমার খুবই লজ্জা করতো। এত বড় ছেলেকে কেউ হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয়? কেউ রিকশা ঠিক করে দেয়? মাথার চুল লম্বা রাখা আমার শখ কিন্তু আব্বা জোর করে ধরে নিয়ে চুল কাটিয়ে দিতো। আব্বার জন্য বড় চুল রাখতে পারতাম না। এমনকি হাতের নখও কেটে দিতো। রাতে বাসায় ফিরে আব্বা খোজ নিতো আমি খেয়ে ঘুমিয়েছি কিনা। অথচ তার আরো তিনটা ছেলে আছে। মা বলতো ছোট মাছ রান্না করেছি, তাই ভাত খায়নি। আব্বা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে, এত রাতে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতো। আমি ইচ্ছে মতো পোলাউ মাংস খেতাম। খাওয়া শেষ হলেই আব্বা বলতো কোক- ফানটা কিছু খাবি? আমি রিকশায় বসে ফানটা খেতে খেতে বাসায় ফিরতাম। তখন রাত হয়তো একটা বেজে গেছে।

আব্বার একটা লঞ্চ ছিলো। সেই লঞ্চ পদ্মা নদীতে চলতো।
একদিন লঞ্চে আগুন লেগে যায়। তারপর আব্বা লঞ্চ বিক্রি করে দেয়। বাংলা সিনেমার মতো আব্বা কালো ব্রিফকেস ভরতি করে টাকা নিয়ে আসে। সেই টাকা দিয়ে আমি আর আমার বড় ভাই খেলা করি। বান্ডিল বান্ডিল টাকা। মা বলে টাকা দিয়ে কিসের খেলা? আব্বা বলল, খেলুক। খেলতে দাও। ছোট বেলা সেই টাকা দিয়ে খেলার কারন আমার মধ্যে টাকার কোনো লোভ তৈরি হয়নি। অর্থ্যাত টাকা পয়সা ইনকাম করতে গিয়ে কখনও অসৎ হইনি। যাইহোক, আব্বা যে মারা গেছে এটা আমার মনেই থাকে না। প্রায়ই ভুলে আব্বাকে ফোন দেই। শেষে মনে পড়ে আব্বা তো বেচে নেই। এখন আব্বার নম্বরটা মোবাইলে রাখিনি। ডিলেট করে দিয়েছি। প্রায়ই রাস্তায় আব্বার মতো দেখতে অনেক 'মানুষ'কে দেখি। দেখতে অনেকটা আব্বার মতো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। কখনো কখনো পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করি। আমি আমার বাবার কোনো গুন পাইনি। কিন্তু আমি চেষ্টা করি- আমার কন্যা ফারাজা যেন একদিন বলে- আমার বাবা পৃথিবীর সেরা বাবা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×