মুভির ধরণকে বলা হয় “জনরা”(Genre)। যেমন একটি মুভি এ্যাকশান, রোমান্টিক, থ্রিলার, কমেডি, ড্রামা ইত্যাদি বিভিন্ন জনরার হতে পারে। এই প্রথম এক মুভি দেখলাম যার জনরা একেবারে নতুন:” তুই একটা গাধা, তোর ট্যাকা আমারে দে, ... , হলে বইসা ধাপ্পাবাজী দেখ” । মুভির নাম “থাগস অব হিন্দোস্তান”।
কাহিনী সেই পুরান আমলের বস্তাপচা। ব্রিটিশরা জীবন তছনছ কইরা দিলো। কিন্তু প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে জাফিরা (ফাতিমা সানা শেখ)। সাথে আছে বুড়া আংকেল খুদাবক্শ (অমিতাভ বচ্চন)। ব্রিটিশদের কাছেও আছে ফিরিঙ্গি (আমির খান)। বাকিটা বুইঝা নেন।
মুভির পরিচালক বিজয়কৃষ্ণ আচার্য ভারতের সবচাইতে খারাপ নির্দেশক। ব্যক্তিগত ভাবে হয়তো উনি অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু মুভির দর্শকেরা তার ক্ষতি করেছে? আগে “তাশান”, “ধুম ৩” এবং এবার এই অখাদ্য “থাগস অব হিন্দোস্তান”। এই সব মুভি বানায় মানুষকে কেন অত্যাচার করেন উনি? উনার পরবর্তী মুভির আগে আশা করি ইস্রাফিল সিঙায় ফু দিয়ে দিবেন।
আমির খানের মুভি মানেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখা। তার সাথে বক্সঅফিসের ঝড় তো আছেই। এই মুভি দিয়ে আবার প্রমাণিত হলো যে মুভি বানায় নির্মাতারা। একটি মুভি হলো লেখক, নির্দেশক, প্রযোজক সবার এক মিলিত প্রচেষ্টা। কিন্তু সব প্রশংসা নিয়ে যায় নায়ক-নায়িকারা। খুবই দুঃখজনক। তবুও আমির খানের কাছ থেকে এরকম অখাদ্য আশা করি নাই।
যাই হোক মুভি খারাপ হলে অন্ততঃ আমির ভালো অভিনয় করে। কিন্তু এই মুভির অন্যতম খারাপ দিকই হলো আমিরের অভিনয়। পুরো মুভিতেই অতি অভিনয় দিয়ে মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে।
অমিতাভ বচ্চন কিছুটা ভালো করলেও প্রতিটি এ্যাকশন দৃশ্যে বডি ডাবলের ব্যবহার খুব ভালোমত বোঝা যায়। এছাড়া অভিনয়ের তেমন কোন সুযোগই ছিল না। একটা জবরজং পোশাক পড়িয়ে হুদাই কষ্ট দেয়া হয়েছে।
সবচেয়ে হতাশ হয়েছি ফাতিমা সানা শেখ এর অভিনয় দেখে। দঙ্গলে অভিনয় দেখার পর বেশ আশাবাদি ছিলাম এই অভিনেত্রীকে নিয়ে। কিন্তু তার অভিনয় মোটেও ভালো নয়। এমনকি ক্যাটরিনার সাথের এক দৃশ্যেও বোঝা যায় যে ক্যাটরিনা তার থেকে অভিনয়ে অভিজ্ঞ।
ক্যাটরিনা এই মুভিতে অতিথি হিসেবে আছে। মুভি খারাপ হয়েছে তো কী হয়েছে? ক্যাটরিনার নাচ আছে না? না ভাই । এই মুভি তে ক্যাটরিনার নাচগুলিও ভয়ংকর রকমের ক্ষ্যাত। এই ধরণের নৃত্য পরিচালনা দেখে ৪-৫ বছরের বাচ্চাদের “আংকেল -আন্টিকে একটু নাঁচ দেখাও ...” এর কথা মনে পড়ে যাবে। গানগুলি খুব একটা খারাপ না হলেও এই ফালতু নাঁচের জন্য দেখার অযোগ্য হয়ে গেছে।
মুভিটির বাজেট ৯০ কোটি থেকে সেটা বাড়তে বাড়তে ২০০ কোটির উপরে চলে গেছে। সেটা অর্থ ব্যবস্থাপনার অসফলতা, কোন মুভির মানবৃদ্ধির কিছু না। মুভির দৃশ্যায়ণ খুবই নিম্নমানের। সেছাড়া পুরো মুভি খুবই বোরিং। এক ঘণ্টা পরেই আমি ঘড়ি দেখা শুরু করে দিয়েছিলাম।
মুভির কি কিছুই ভালো নেই? প্রথম ১০ মিনিট দেখে আমার অমিতাভ বচ্চনের “আজুবা” এবং “কুলি” মুভির স্মৃতি কিছুটা মনে পড়ে গিয়েছিল। এতটুকুই ভালো বলা যেতে পারে। এছাড়া মুভিটি কোন উপন্যাস অনুদিত হবার ব্যাপারটি সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান কে আমার কোন মান সম্পন্ন মুভি মনে না হলেও এই মুভিটি তার কপিও বলার অযোগ্য।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই মুভির নির্মাতারা হয়তো টাকা তুলে ফেলবেন। স্যাটেলাইটস রাইট, ও চীনের বাজার টাকা তুলে দিতে কার্পণ্য করবে না। কিন্তু ভারতের চিত্র পরিবেশকদের পথে বসতে হতে পারে। এই ফালতু মুভির টিকেটের দামও ভারতের সাধারণ মুভি থেকে বেশি ছিল।
যদি আমির খানের ভক্ত না হয়ে থাকেন তবে এই মুভি দেখার দরকার নাই। আর যদি ভক্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্য দেইখেন না। আমির খানের প্রতি আর সম্মান থাকবে না। সব মিলিয়ে মুভির নামে অত্যাচার।
রেটিং – ০.০ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২