কম্পিউটার প্রথম ব্যবহার করি ১৯৯৮ সালে। তার কিছুদিন পরেই আমাদের বাসায় একটা কম্পিউটার কেনা হয়েছিল। ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আমি। তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। সবাই কম্পিউটার ব্যবহার করলেও আমার খুব একটা সুযোগ হয়নি। এমনকি বড় ভাইয়া, আলমারিতে কম্পিউটারের মাউস লুকিয়ে রেখে দিতেন যাতে আমি কম্পিউটার চালাতে না পারি। কিন্তু মাউস ছাড়া কম্পিউটার কিভাবে চালাতে হয়, ততদিনে আমি তা শিখে গিয়েছিলাম। আমিও মোজে চালাতাম কীবোর্ড দিয়েই। একদিন তিনি কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছিলেন। আমি ধরা পড়ে গেলাম। পরের দিন, মাউস এর বদলে কীবোর্ড লুকিয়ে রাখলেন। আমার খেল খতম। আমিতো কীবোর্ড ছাড়া কম্পিউটার কিভাবে চালাতে হয় তা জানিনা।
এটি ঝামেলার কাজ, তাই তিনি তাঁর বন্ধুর নিকট শিখলেন, কিভাবে পাসওয়ার্ড দিতে হয় (বায়োসে)। কিভাবে পাসওয়ার্ড দিতে হয় তা আমি দুর থেকে দেখে একটা অনুমান পেলাম। সিউর হয়েছি অনেক পরে। যাহোক, ততদিনে আমার কীবোর্ড লেআউটও পুরো মুখস্থ। আমি দুর থেকেই উনার ফিঙ্গারিং দেখেই বুঝে নিলাম কি পাসওয়ার্ড দিয়েছেন। সেটিও বেশি দিন টিকল না। তিনি জেনে গেলেন, অন্য ভাইয়ের সহযোগিতায়।
মু্ক্তার নামে এক ভাই (ফুফাত) ছিলেন। তিনিই মূলত আমার ওস্তাদ। হাতেখড়ি তাঁর হাতেই। তিনি রিপন ভাইকে (৩নং ভাই) বললেন, তোরা কম্পিউটার চালাচ্ছিস, ওকে চালাতে দিস না কেন? রিপন ভাই বললেন, ুসবার অধিকার কি সমান?চ্
তখনই আমার হাতে টাইপিং স্পীড তুখড়। মাঝে মাঝে মুক্তার ভাইকেও ফেল। উনার সহযোগিতায় ১০ শ্রেণীর শুরুতে একটা দোকানে (মো:পুরের কাটাসুর-এ) টুকটাক কাজ করতাম টাইপিং এর। ৪০% কমিশন। একপৃষ্ঠা টাইপ করলে কমপক্ষে ৮ টাকা আমার। বেশ ভাল। কারণ, আমার টাইপকরতে সময় লাগতনা খুব বেশি। এজন্য কাজও পেতাম বেশি।
কাজের মাঝেই সেখানে টুকটাক শিখতাম। আর মু্ক্তার ভাই, ট্রাবলশুটিং এর কাজ করলে, পেছনে দাঁড়িয়ে দেখতাম। স্মৃতি শক্তি মন্দ ছিল না। তিনি আমাকে আস্বস্ত করলেন, সফটওয়্যারের কিছু নষ্ট করার নেই। তুই যা পার কর। আমি ঠিক করব। তবে হার্ডওয়ারের কিছু ধরার দরকার নেই।
আমি স্বাধীন ভাবে কাজ শুরু করলাম। সমস্যা হলে, ডাক্তার হাজির। পরেরবার সেই সমস্যা হলে আমিই ডাক্তার।
এরই মাঝে, বাসায় একদিন দেখি ভিজুয়্যাল বেসিক ৫ এর উপরে মাহবুবুর রহমানের একটা বই। আমার মনে হল, এই নামে একটা প্রোগ্রাম আমাদের কম্পিউটারে দেখেছি। বই নিয়ে কম্পিউটারে বসে পড়লাম। তখনও বুঝিনি এটা প্রোগ্রামিং। এরপর মজা পেতে শুরু করলাম। আমার প্রোগ্রামিং এর রেলগাড়ি চলতে শুরু করল।
এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার মাঝেও আমি বসতাম দোকানে। কারণ, বিশাল অঙ্কের একটা হাতখরচ সেখান থেকে আসত। অবসর,সময়ে ভিজুয়্যাল বেসিক নিয়ে পড়ে থাকতাম।
কোন রকমে প্রথম বিভাগ পেয়ে এসএসসি পাশ করলাম। উচ্চ মাধ্যমিক এ ভর্তি হলাম বি এ এফ শাহীন কলেজে। তখন, হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং-এর জন্য মো:পুরে আমি একটা ভাল ব্র্যান্ড ছিলাম। শাহীনবাগ চলে আসলেও মো:পুরে আমার মার্কেটটি রয়ে যায়। আমি কলে যেয়ে কাজ করে আসতাম। ভাল টাকা আসত সেখান থেকেও। তখনও খুব ভাল ইন্টারনেট জানতাম না।
মাঝে মাঝে মেঝো ভাইয়ের অফিসে যেতাম ইন্টারনেট ব্যবহার করতে। একটা সময় মেঝো ভাই, আমাকে ট্রেনিং করাতে রাজি হলেন। তিনি ফরনিক্সে আমাকে নিয়ে গেলেন। তাদের কথা শুনে আমার ভাল লাগেনি, তাই ভর্তি হইনি। পরে ফার্মগেটের তোফাজ্জল বুক স্টোর থেকে, ফ্লাশ আর এইচটিএমএলের বই কিনে শুরু করলাম ওয়েব ডিজাইন। যদিও আগে থেকেই ফ্রন্টপেজে কাজ করতাম।
এক পর্যায়ে, রাজশাহীতে আগমন ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয়ে। সেখানে রাবির আনঅফিসিয়াল ওয়েবসাইটের কাজে হাত দেই সুমন ভাইয়ের সাথে। এখানেও অন্য মানুষের কম্পিউটার। কারণ, আমাদের বাসার কম্পিউটারতো আর আমাকে দিবে না। যদিও পরে দিয়েছিল, আমি তা রাজশাহী নিয়ে একদিনও ব্যবহার করতে পারিনি।
একটা সময় পরিচিত হই, মন্তসরির সুমন ভাইয়ের সাথে (পূর্বের সুমন ভাই এই সুমন ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন)। তিনি আমাদেরকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন। তার ওখানেই তখন আমার রাত-দিন বসবাস। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইনও ছিল। রাবির ওয়েবসাইটের কাজ তখনও চলছিল। কিছুদিন পরেই কাজ শুরু করি পিএইচপির উপর। এরপর, আরও মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে। সুব্রত ভাইয়ের কম্পিউটার ব্যবহার করেছি অনেক দিন। প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় আমার রুমমেট লুৎফরের কম্পিউটার ব্যবহার করেছি একেবারে নিজের মত করে।
যেকারণে এ লেখার সূচনাৃ..তা হলোৃ..গতকাল রাত থেকে আমি ব্যবহার করছি সম্পূর্ণ আমার, হ্যা আমার কম্পিউটার। এ লেখাগুলো সে কম্পিউটারেই বসে লিখছি। প্রায় ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে এটি কিনেছি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে ৪০০০০ টাকা দিয়েছেন। অবশ্য প্রথম কম্পিউটারটি কেনার জন্য টাকা দেয়ার সময় বাবার মোটেও কষ্ট হয়নি। কারণ, তখন টাকা পয়সার অভাব ছিলনা। এখন অবসর যাওয়াও সে সময়টা আর নেই।
আমি ভাল পারফরমেন্সের জন্য একটা কম্পিউটার কিনেছি যার কনফিগারেশন ২.৮ ডুয়াল কোর প্রসেসর, ১গিগাবাইট জঅগ, ১৭ ইঞ্চি এলসিডি মনিটর।
আর হয়ত আমি কাউকে বিরক্ত করব না তার কম্পিউটারটি ব্যবহার করার জন্য। তবে একটা বিষয়, আমি যখন যার কম্পিউটার ব্যবহার করেছি, তখন মনে হয়েছে, তিনি তো মোটেই বিরক্ত নন বরং খুশি।
গত কয়েকদিন কম্পিউটারটি নিয়ে টেনশনে ছিলাম। কিনেছে গত সোমবার। হার্ডডিস্ক কিনিনি। হার্ডডিস্ক ছাড়াই পিসি নিয়ে চলে এলাম রাজশাহীতে। মঙ্গলবার কিনলাম হার্ডডিস্ক। সন্ধ্যায় দেখলাম, মাদারবোর্ডের প্যাকেটে সাটা পাওয়ার ক্যাবল দেয়নি। বুধবারে কেবল কিনে নিয়ে এসে আবার সন্ধ্যাবেলার বসলাম পিসি নিয়ে। এখনও সমস্যা, কোন ভাবে হার্ডডিস্ক পাচ্ছে না। অগত্যা, বৃহ: সকালে ক্লাসে না গিয়ে পুরো কম্পিউটার নিয়ে গেলাম, যেখান থেকে হার্ডডিস্ক কিনেছি সেখানে। তারা অনেকক্ষন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখল হার্ডডিস্কে সমস্যা। পরে আরেকটি হার্ডডিস্ক (হিতাচী) দিল ব্যাকআপ হিসেবে। আমি আগে স্যামসাং কিনেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম হিতাচীটাই রেখে দিব। কিন্তু এটি এত শব্দ করে যে বিরক্ত লাগে। আগামী মঙ্গলবার এটি বদলে স্যামসাং দিবে বলেছে। তাই এই কম্পিউটারে এখনও কাজ করতে পারছি না।
আমার জীবনটাই সবসময় এরকম ঝামেলাযুক্ত।
আমি যাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ:
মু্ক্তার ভাই (আমার গুরু)
রাসেদ ভাই, জুয়েল ভাই, ঢাকা কমার্শিয়াল ইনস্টিউট (মো:পুর, যেখানে আমার প্রথম পরিচয় কম্পিউটারের সাথে)
বেলাল ভাই, সেহেলী মিডিয়া সেন্টার (কাটাসুর, মো:পুর)
সোনা ভাই, ওমেগা কোচিং সেন্টার, বিনোদপুর, রাজশাহী
সুলতান মাহমুদ সুমন (মন্তেস্বরী সাইবার ক্যাফে, রাজশাহী)
সুব্রত ভাই, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, রাবি.
লুৎফর ভাই, বাংলা, রাবি
সবশেষে, আমার বাবা
তবে এছাড়াও আরও অনেকেই রয়েছে, যাদের কাছ থেকে ছোট-বড় সাহায্য পেয়েছি।
একটা কথা আমি সবসময়ই বলি, আমাকে কম্পিউটার শিখিয়েছে খুব কম মানুষ, কিন্তু আমি শিখেছি অনেকের কাছে।
এ কথা খুবই সত্যি যে, আমার গনিতের মাথা ভাল না। আমি সবসময়ই গনিতে দুর্বল ছিলাম। সেজন্য চিন্তার গভীরতা আসেনি কোনদিন। তাই ভাল প্রোগ্রামিং ও করতে পারিনা। সবই হালকার উপর ঝাপসা।