somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

বীরঙ্গনাদের কেবল স্বীকৃতিই নয় রাষ্ট্রকে দায়িত্বও নিতে হবে

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষী নারী’ । কবির এ বাণীর উৎকৃষ্ট বাস্তবায়ন দেখেছি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে । নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না ঠিক তেমনি যুদ্ধের ময়দানে পুরুষ আক্রান্ত হলে নারীরা স্বাভাবিকভাবে ঘরে বসে থাকতে পারে না । যুদ্ধে পুরুষদের সর্বোচ্চ জীবন হারাতে নয় নতুবা আহত হতে হয় অপরদিকে নারীরা তাদের জীবন হারানোর আগেই হারিয়ে ফেলেন তাদের মহা মূল্যবান সতীত্ব-সম্ভ্রম । যে সতীত্ব-সম্ভ্রম রক্ষার জন্য একজন মা/বোন জন্ম থেকে আমরণ তার সর্বস্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন, যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রু হায়েনাদের দ্বারা তা নিমিষেই লুট হয়ে যায় । এমনি সতীত্ব হারানোর লাখো ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মের উষালগ্নে । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের জন্মের স্বার্থে উৎসর্গ করতে হয়েছিল ২ লাখ মা/বোনের সতীত্ব । দিনের পর দিন, রাতের পর রাতভর এসকল মা/বোনের উপর পাকিস্তানী হায়েনা এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে । মা/বোনদের উপর চালানো সে দিনগুলির বর্ণনা পড়লে বা শুনলে আজও বাঙালীর রক্তের অনুরণন ঘটে । যারা আমাদের মা/বোনদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছিল তাদের সমূলে বিনাশ করার ইচ্ছা জাগে । ৩০ লাখ শহীদের তাজা খুনের সাথে যে ২ লাখ মা/বোনের সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল তারা আজও তাদের ন্যায্য সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্মানটুকা পায়নি । জীবনের প্রতি পদে পদে নানা লাঞ্ছন-গঞ্জনা সয়ে অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে । বীরঙ্গনাদের মধ্যে যারা প্রাণে বেঁচে আছেন তাদের জীবন হয়ে আছে দুর্বিষহ । জীবনের ধাপে ধাপে এত উপেক্ষা সহ্য করেছেন যেন তাদের মৃত্যুই তাদের এ দৈন্য-দশা থেকে চির মুক্তি দিতে পারে । রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদেরকে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও তা রয়ে গেছে কাগজের ফ্রেমে কালো অক্ষরে বাঁধা । তাদের সম্মান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মত কেউ সৎ সাহস করে বলতে পারে নি, ‘‘নাই বা হলে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগীনরই জাতি” ।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যে নারীরা রণাঙ্গনের যুদ্ধ করতে গিয়ে কিংবা অন্যকোনভাবে সতীত্ব হারিয়েছিলেন তাদেরকে ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী বীরঙ্গনা উপাধি দেয়া হয়েছিল । বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন বাঁধ নির্মানের কাজ উদ্ভোধনের জন্য পাবনায় গিয়েছিলেন । বাঁধ উদ্ভোধনের পর শুরু হয় জনসভা । সে দিনের সে জনসভায় উপস্থিত ছিল ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, আবু সাইদ এমপি এবং আহমেদ তোফিজ উদ্দিন এমপি । বক্তৃতা চলাকালে হঠাৎ করেই মঞ্চের উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে দু’তিনজন মহিলার শোরগোল শোনা গেল । তারা বঙ্গবন্ধুর কাছে আসতে চায় । কিন্তু বাঁধা দেয়ায় তারা জোড়ে চিৎকার করতে থাকে । বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর নজড় এড়ায়নি । বিশাল সাদা মনের মানুষ বঙ্গবন্ধু আদেশ করেন, ‘ওদের আসতে দাও’ । তারা এসে বঙ্গবন্ধুর পায়ে আছড়ে পরে । একজন ৩০/৩৫ বছর বয়সী মহিলা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার যেসব বর্ণনা দেন, তাতে উপস্থিত সকলের শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে । সর্বোপরি ওই মহিলা বলেন, ‘ আগে স্বামীর সঙ্গে সূখের সংসার ছিল । কিন্তু বর্তমানে সে অবাঞ্ছিত । তার দিকে আঙুল উঁটিয়ে আশে পাশের মানুষ মূখ চেপে হাসে টিপ্পনি কাটে’ । বঙ্গবন্ধু গভীর মনোযোগ দিয়ে তাদের সব কথা শুনলেন । শেষে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বললেন, ‘‘আজ থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিতা মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তারা এখন থেকে বীরঙ্গনা খেতাবে ভূষিত । কেননা দেশের জন্য তারা ইজ্জত দিয়েছেন । কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তাদের অবদান কম নয় বরং কয়েক ধাপ উপরে । তাই তাদের বীরঙ্গনার মর্যাদা দিতে হবে এবং যথারীতি সম্মান দেখাতে হবে’ । আজ তাদের স্বামী বা পিতাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে, ‘আপনারাও ধন্য । কেননা এ ধরনের মহীয়সী স্ত্রীর স্বামী বা পিতা হয়েছেন’ । সে দিন থেকেই ‘বীরঙ্গনা’ নামক সম্মনসূচক উপাধি প্রবর্তিত হয়ছে ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে । ক্ষমতার পালাবদলও হয়েছে বেশ কয়েক বার । যে সব মুক্তিসংগ্রামী নারীর সাহসী পদক্ষেপ সমাজ বা রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে এসেছে তাদের প্রতি বাঙালী জাতির অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রয়েছে । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সমরাস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে নারীরা নিজেদের সাহস ও দেশ-প্রেমের নজির স্থাপন করেছেন । কোন প্রতিদানের প্রত্যাশায় নারীরা মুক্তিযুদ্ধ করে নি । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ২ লাখ বীরঙ্গনা ছিল । তাদের কার নাম বাদ দিয়ে কার নাম উল্লেখ করা যায় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে তাদের সকলের ভূমিকাই অনস্বীকার্য । তবুও সবার পরিচিত কয়েকজন বীরঙ্গনার নাম উল্লেখ করা দায়িত্ব মনে করছি । বীরঙ্গনা গুরুদাসী, বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নুরজাহান, বীরঙ্গনা মেহেরুন্নেসা মীরা, বীরঙ্গনা নাজমা বেগম এবং বীরঙ্গনা মর্জিনা বেগম । এছাড়াও এমন অনেক বীরঙ্গনা আমাদের সমাজে আছে যারা তৎকালীন সমাজের ভয়ে কিংবা লজ্জায় তাদের আকুতি প্রকাশ করতে পারেনি বা করতে দেয়া হয়নি ।

কেমন ছিল বীরঙ্গনাদের সে সকল দুর্বিষহ দিনগুলো ? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা তাদের সতীত্বের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করেছে তাদের সবার গল্প ঘুরে-ফিরে প্রায় এক । আমাদের একাত্তুরের বীর-বীরঙ্গনরা পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামটি লিখে দিয়ে আমাদের দিয়ে গেছেন আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদার নিশ্চয়তা । তারা আমাদের স্বাধীনতার বীর সৈনিক । বীরঙ্গনাদের সবাই দেখতে ছিল পুতুলের মত । কতই বা বয়স হবে একেকজনের । কেউ বালিকা কেউ তরুনী কেউবা নববধু । তাদেরকে ১৬/১৭ বছর বয়সেই পুরো নয় মাস পাকিস্তানী হায়েনাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে । এমনকোন রাত নেই যে রাতে বর্বর পশুগুলো তাদের উপর পাশবিক নির‌্যাতন করেনি । সেদিনগুলো সত্যিই বিভিষিকাপূর্ণ ছিল । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের প্রতিটি শহর, বন্দর এবং নগর থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসররা বীরঙ্গনাদেরকে তাদের বাড়ী বা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের হাতে তুলে দিয়ে বাহবা পেয়ে সটকে পরেছে । বন্দী হওয়া এসব বীরঙ্গনাদের উপর পাকিস্তানী হায়েনারা রাতভর চালিয়েছে পাশবিক নির্যাতন । একের পর এক চড়ে বসে বীরঙ্গনাদের উপর । হিস্র জানোয়ার যেমন তার শিকার ধরার সময় কোন শিকারের প্রতি কোনধরনের মায়া করে না তেমনি পাকিস্তানী পশুতুল্য হায়েনারা হিংস্র জানোয়ারের মতই খুবলে খুবলে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল আমাদের মহীয়সীদেরকে । সারা রাতভর সম্ভ্রহানীর ধকল অনেকেই সহ্য করনে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন আবার কেউ কেউ জ্ঞানশূণ্য অবস্থায় ছিলেন অনুভূতিহীন । যারা মৃত্যু বরণ করে তারা অত্যাচার থেকে নিস্কৃতি পেলেও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার নিস্কৃতি পায়নি । জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর বীরঙ্গনাদের ঠাঁই হয়ছিল বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে । সেখানে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর প্রতিদিন রাতেই ভোগ্য পণ্যের মত বীরঙ্গনাদের ভোগ করে অসভ্য খান সেনারা । এসকল বীরঙ্গনাদের সম্ভ্রমহানীর শেষ হলে হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডোগেঞ্জি পরিধান করিয়ে হাত-পায়ে শিকল বেঁধে তাদেরকে তালাবদ্ধ করে রাখা হত কোন বড় আলমারীতে কিংবা অন্ধকার কোন কুঠুরীতে । গভীররাতে বীরঙ্গনাদেরকে নিয়ে যাওয়া হত বদ্ধভূমিতে । পাকিস্তানী হায়েনারা সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর গাড়ীতেই বীরঙ্গনাদের নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠত । এমনকি স্বামী, পুত্র, পিতা কিংবা ভাইয়ের সামনেও প্রকাশ্যে বীরঙ্গনাদের সম্ভ্রমহানী করা হত । এরকম গর্হিত আক্রমনের শিকার হওয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কিংবা স্বাধীনতার পরে অনেক বীরঙ্গনা লজ্জায় ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে । এছাড়াও বীরঙ্গনাদের উপর পাশবিক নির্যাতনের সাথে চালানো হত মানসিক নির্যাতন । তাদেরকে ঠিকমত খাবার দেয়া হত না । পশুদের সাথে যেমন আচরণ করা হয় ঠিক তেমন আচরণ বীরঙ্গনাদের সাথে পাকিস্তানী হায়েনা এবং তাদের এ দেশীয় দোসরার করত ।

এক সাগর রক্তের বিনিময় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহীনির আত্মসর্ম্পনের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও বীরঙ্গনারা দীর্ঘ দিনেও তাদের স্বাধীনতা পেয়েছে কিনা তা নিয়ে রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন । রাষ্ট্রও বীরঙ্গনাদের দায়িত্ব নেয়নি । যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছি সেই সর্বস্বত্যাগী বীরঙ্গনারা শরীরের নানা স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন, বেয়নেটের আঘাত আর মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন । দুঃখের হলেও সত্য যে অনেক বীরঙ্গনাই শহরের রেল স্টেশনের বস্তিতে রাত কাটায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে ভিক্ষা করে, বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে অথবা কোন বৃদ্ধাশ্রমে জীবনের শেষ দিনগুলোতে মাথা গুজার ঠাঁই পেয়ে সর্বদা দেশের জন্য মঙ্গল এবং নিজেদের মৃত্যু কামনা করছেন । যে সকল বীরাঙ্গনারা মারা গেছে তাদের অনেকেই চিকিৎসাহীন হয়ে আবার কেউবা খাদ্যাভাবে মারা গেছেন । জীবনের সকল প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে যারা এখনো কোন মতে বেঁচে আছেন তাদের জীবনকে জীবন বলা, বেঁচে থাকাকে বেঁচে থাকা বলা যায় না । এরকম বেঁচে থাকা আর মৃত্যুর মধ্যে শব্দগত পার্থক্য ছাড়া অন্য কোন পার্থক্য নাই । মানুষের মৌন-মানবিক চাহিদার কোনটিরই কোন অংশ তারা পূরণ করতে পারছে না । সমাজ তাদেরকে সেভাবে গ্রহন করেনি । সবাই যেন তাদেরকে ঘৃণা করে । তিনবেলা খাবারের পরিবর্তে ঠিকমত দু’বেলা দূ’মুঠো ভাত জোগাড় করতেও তাদেরকে অন্যের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে হয় ।

বীরঙ্গনাদের প্রতি দেশ ও জাতির দায়বদ্ধতা রয়েছে । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সময়ে এদেশের অনেক মা/বোন পাকিস্তানী হায়েনাদের জুলুম নির্যাতনে তাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন । লক্ষ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি । আজও বাংলাদেশের মাটিতে লক্ষ বীরঙ্গনা রয়েছেন একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে । আজ এ স্বাধীন দেশে আমরা কতটুকু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে পেরেছি আমাদের বীরঙ্গনাদের ? আমাদের শরীরের চামড়া দিয়ে যদি জুতা বানিয়ে তাঁদের পায়ে পরতে দেয়া হয় তবুও তাদের ঋণ শোধ হবার নয় । তবুও যদি দেশ এবং আমরা সকলে মিলে তাদের জন্য কিছু করে যেতে পারি তবে নিজের আত্মার কাছে পরিতৃপ্তি নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ঘুমুতে পারব এই স্বপ্ন দেখছি । কথায় কথায় আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ববোধ করি । অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও অবহেলিত থেকে গেলেন আমাদের বীরঙ্গনা মা/বোনেরা । আমরা কি তাদের চোখের পানিটুকু মুছে দেয়ার মত মন-মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারি না ? এর জন্য দরকার হবে না কোন সংগ্রাম কিংবা অনশনের শুধু দরকার হবে আমাদের ভেতরকার মানুষটির জাগরণ । আসুন আমরা এবার সত্যি জেগে উঠি আমাদের মায়েদের/বোনেদের চোখের পানি মূছে দেয়ার গণজাগরণে দিক্ষিত হয়ে ।

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা ঠিকমত সম্মান পায়নি । তাদেরকে বীরঙ্গনা বলা হলেও মুক্তিযোদ্ধা বলা হয় না-যা বাঙালী জাতী হিসেবে আমাদের জন্য অবশ্যই লজ্জার । বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে গড়া আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিত । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে বীরঙ্গনাদের ভূমিকাকে মানদন্ড হিসেবে রেখে তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক । দেশের স্বার্থ রক্ষায় বীরঙ্গনারা তাদের যে সম্পদ হারিয়েছেন তার বিনিময় কোন মূল্যে দেয়া সম্ভব নয় তবুও যে সকল বীরঙ্গনারা বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় আছেন তাদের সকল দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্র যেন নিশ্চিত করে তার যথাযথ ব্যবস্থা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকেই করতে হবে । মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন ড. সেতারা বেগম এবং মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে যেরকম বীরপ্রতীক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তেমনি দেশের সকল বীরঙ্গনাদের চিহ্নিত করে তাদেরকেও যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া উচিত । সে মর্যাদা যেন বীরঙ্গনা শব্দের মধ্যেই কেবল সীমাবদ্ধ না থাকে । যে স্বাধীনতাকে নিয়ে আমরা গর্ব করছি, বীরঙ্গনারা তাদের সতীত্ব না দিলে সে স্বাধীনতা আমরা পেতাম না । সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য দেশের পুরুষরা যে সকল স্বীকৃতি পেয়েছে তার সমমর্যাদার স্বীকৃতি যেন নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরঙ্গনাদের দেয়া হয় । শুধু স্বীকৃতি নয় বরং বীরঙ্গনাদের সকল দায়িত্বও রাষ্ট্রকে নিতে হবে । সে সকল দায়িত্ব পালন শেষে আমরা যেন কাজী নজরুল ইসলামের মত যেন বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যানকরা/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×