সেচ্চায় মানুষ কখনোই নিজের মৃত্যু কামনা করে না। স্বল্প বয়সী তো নয়ই পড়তি বয়সী মানুষও জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে আরো কিছুদিন বাঁচতে আশায় বুক বাধে। বার্ধক্য কালীন ব্যাধির যন্ত্রণাও সে আশাকে ফেকাশে করতে পারে না।
আত্মহত্যা করে মরতে যাওয়া মানুষও মরার আগে মরতে চায় না। শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত তারা ‘সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে’ মূলক কোনো আশার বাণী প্রত্যাশা করে যা কিনা তাদের নতুন করে বাঁচার প্রেরণা যোগাবে।
মূলত, সহ্য ক্ষমতার বাইরে পরিস্থিতি চলে গেলে তার চাপ সামলাতে না পারার অসহায়ত্ব বোধ থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু মানুষ তাদের জীবন অধ্যায়ের সমাপ্তি টানে আত্মহত্যায়। সম্বলহীন জীবনযাত্রা, পছন্দের মানুষের অবহেলা, নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা কারো অসুখের কারণ মনে হওয়া, প্রত্যাশার অপূর্ণতা, নিজের সংগঠিত দুষ্কর্মের অপরাধবোধ ইত্যাদি কারণ মানুষকে আত্মহত্যার মতো একটি পথ বেছে নিতে বাধ্য করায়।
জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত মানুষকে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলীর সম্মুখীন হতে হয়। সৃষ্টির শুরু থেকেই এটা হয়ে আসছে। পৃথিবী নামক গোলকে আগমন ঘটবে আর এসব ধকলের অভিজ্ঞতা হবে না, সেটা কখনোই সম্ভব নয়। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে যায় তাদের সকল প্রত্যাশার বাস্তবায়ন আর অপ্রত্যাশার অসংস্পর্শের। স্বপ্নে বিভোর মানুষ কেন জানি মানতে চায় না, যেখানে স্বপ্ন পূরণের কথা উঠবে সেখানে স্বপ্ন ভাঙ্গার ঝুঁকিও থাকবে। স্বপ্ন গড়ার জন্যে নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করার পর ফলাফল ভালমন্দ যাই হোক না কেন সেটাকেই প্রাপ্য মেনে নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্নের পেছনে ব্যস্ত হয়ে যাওয়াই হচ্ছে জীবনের নিয়ম।
আজকে যদি আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রশ্ন দাড় করানো হয় যে 'পৃথিবীতে কি এমন কোনো মানুষ আছে যার জীবনের সব চাওয়া তার নিজের মত করে পূরণ হয়েছে?' জবাবে একটি উত্তরও 'হ্যাঁ' হয়ে আসবে না। এক-আধটা যদি এসেও যায় তবে সেটাকেও কোনো বেখেয়ালির কাছ থেকে এসেছে বলে ধরে নিতে হবে। কারণ, নিঃসন্দেহে সে তার জীবনের কোনো না কোনো চাওয়ার না পাওয়াকে ধরতেই পারে নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফল মানুষটাকে গিয়ে জিগ্যেস করা হোক, হিসেব বলছে, একজন দিনমজুরের চাইতেও তার জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো অনেক অনেক গুণ বেশি আর প্রকট হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
সকল আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা নিয়ে বেঁচে থাকাকে বেঁচে থাকা তো বলা যায় কিন্তু জীবনের প্রকৃত স্বাধ নিয়ে বেঁচে থাকা বলা যায় না। চড়াই-উতরাই ছাড়া, দুঃখ-দূর্দশা ছাড়া, অবহেলা-অপ্রাপ্তি ছাড়া জীবন হয় রসহীন আর বিরক্তিকর। ঠিক তেমনি, বিপরীতের সাথে জেতাকেও সব জয়ের একমাত্র সংজ্ঞা বলা যায় না। কখনো কখনো হেরে যাওয়াকেও এক ধরনের জয় হিসেবে ধরে নিতে হয়। অপ্রাপ্তিও যেখানে জীবনেরই একটি অংশ সেখানে বহু না-চেষ্টাকারীদের ভীড়ে চেষ্টাকারীরাই বিজয়ী।
পরিশেষে, জীবনে বাঁচতে হলে নিজেকেই নিজের বাঁচাতে শিখতে হয়। সবসময় অন্যের বাঁচানোর আশায় থাকলে চলে না। ভালবাসা পেতে চাইলে নিজেকেই নিজের ভালবাসা যায়। সবসময় অন্যের ভালবাসার দরকার পড়ে না। আর আসছে কথা প্রাপ্তি আর সফলতার... একটি জীবনের ধারক হওয়ার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর একটি স্বাভাবিক মৃত্যু পাওয়ার চেয়ে বড় সফলতা একজন মানুষের জন্যে আর কী হতে পারে?
#rajubdeshi
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:২৮