গুগলে 'পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত নারী' লিখে খুঁজলে যে নামটি আসবে তা হলো "Lizzie Velasquez." ১৯৮৯ সালের ১৩ই মার্চ নির্দিষ্ট সময়ের চার সপ্তাহ পূর্বে আমেরিকার টেক্সাসে মাত্র ১১.২১৯ কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে প্রি-ম্যাচিওর শিশু হিসেবে (চিকিৎসাশাস্ত্রে যাকে বলে স্কিনি বোন সিনড্রোম) লিজির জন্ম হয়েছিল। এই রোগাক্রান্তদের দেহকোষ পুষ্টি ধরে রাখতে পারে না, যার প্রভাবে তাদের শরীরের ওজনও বাড়তে পারে না। টিকে থাকতে হলে একটু পর পর খেতে হয়। এদের শরীরের গড়নটাও হয় বিকৃত। মাত্র চার বছর বয়সে লিজির একটি চোখে অন্ধকার নেমে আসে, সীমিত দৃষ্টিশক্তির কারণে অন্য চোখেও পরতে হয় কন্টাক্ট লেন্স। ডাক্তাররা বলেছিল, বেঁচে থাকতে পারলেও চলাফেরার কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা হয়তো কখনোই সে পাবে না।
২০০৬ সালে, লিজির বয়স যখন ১৭, ইউটিউবে তাকে 'বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত নারী' হিসেবে চিহ্নিত করে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেটার মন্তব্যস্থলে অনেকে তাকে 'মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মরে যাও, পৃথিবীকে উদ্ধার করো'র মত নানান কথা লিখে কটুক্তি করেছিল। কিন্তু লিজি এতে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে বরঞ্চ মনস্থির করে যে সে পৃথিবীকে কিছু দেখিয়ে ছাড়বে।
ডিসেম্বর ৫, ২০১৩। টেড টকস এ কথা বলে লিজি, যেখানে মানুষ নিজের আইডিয়া বা দুঃখ ভাগাভাগি করে থাকে। তার দেওয়া সেদিনের বক্তব্যে পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। যার দরুন সে রাতারাতি একজন কুৎসিত নারীর খেতাবী থেকে সেলিব্রেটিতে পরিণত হয়ে যায়। তার লেখা বইয়ের মধ্যে 'বি বিউটিফুল, বি ইউ' (২০১২) তখনকার সময়ের বেস্ট সেলার বই ছিল। বর্তমানে সে নিজের কর্মের দ্বারা বিশ্বের একজন বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের মানুষের মধ্যে মোটা-চিকন, লম্বা-খাটো, ছোট-বড় আর ফর্সা-কালো নিয়ে বাছ-বিচারের শেষ নেই। আমার বড় বোনের বান্ধবীকে একদিন আমার এক মামাতো ভাই কথার ছলে বলেছিল, 'আপনার দাতগুলো উঁচু না হলে আপনাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাতো।' উত্তরে বোনের বান্ধবী বলেছিল, 'কারো শারীরিক ত্রুটি দেখিয়ে তার প্রশংসা করলেও সেটা দুঃখদায়ক।'
উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা অনুদ্দেশ্যমূলকভাবে দেহগড়ন আর বর্ণ নিয়ে কাউকে উপহাস আর তাচ্ছিল্য করাকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে ‘বডি শেমিং।’ পৃথিবীতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই বডি শেমিংয়ের শিকার হয়ে আসছে। এর কারণে ভূড়ি ভূড়ি ঘটনা ঘটে যা আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায়। কারো চামড়ার ঠোটের কথা যে অন্য কারো চামড়া ভেদ করে হৃদয়ে সীমাহীন কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেটা যেন কেউ দেখেও দেখে না, বুঝেও বোঝে না। কটুক্তিকারীরা নিজেদের দিয়ে একটু চিন্তা করে দেখে না তাদের করা কটুক্তিগুলো কি ভীষণ মানুষিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে দেয় অন্যদের ভিতরে। আর এভাবেই ক্ষয়ে ক্ষয়ে বিলীন হয়ে যায় অগণিত মানুষ। ব্যতিক্রম কেবল লিজি ভেলাসকুইজ এর মতন গুটি কয়েকজন।
#Imperfections #SayNOtoBullying #StopTeasing #rajubdeshi
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:৪৮