গত চার দশক ধরে আমাদের নিজ দেশে নিজ ক্ষমতায় আছি আমরা। এই যুগের গতি অনুযায়ী গত ৪০ বছরের উন্নয়ন সূচকে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার প্রমান রাখতে পারি নাই। আমাদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে কোনভাবেই পরাজিত জাতি'র তুলনায় ভাল মনে করার কারন নেই! ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিশ্বরাজনীতির প্রভাবে আমাদের মত দেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে অনেক কিছু সম্ভব না হলেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এখন আমাদের সিদ্ধান্তই আমাদের ব্যর্থতা ও সফলতা'র একমাত্র চাবিকাঠি। এখনই এই আমাদেরই কিছু করতে হবে, কিছু করার লক্ষ্যে প্রথমেই আমাদের সচেতন হতে হবে।
আমাদের প্রধান সমস্যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এর কারনেই দেশের প্রশাসন অথর্ব, অর্থনীতি স্থবির, জনগন দূর্নীতিপ্রবন, আইনশৃঙ্খলা তামাশায় রুপান্তরিত!
আর রাজনীতির অন্যতম সমস্যা হলো অতীতমুখী প্রবনতা।
দেশের সিংহভাগ মানুষ বর্তমান রাজনীতির উপর চরম বিরক্ত হলেও কোনভাবেই কাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম না। কারন সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সুনিদৃষ্ট দাবী সহকারে জনগণের সংগঠিত হওয়া। ৪০ বছরের ধারাবাহিক দুঃশাষনের ফলে সৃষ্ঠ দারিদ্র ও দূর্নীতির মত মোটাদাগের সমস্যা চিন্হিত হওয়ায়, আমরা আজ আমাদের দাবী সম্পর্কে সচেতন হলেও সেই দাবী প্রকাশ করার মত কোন উপায় খুজে পাচ্ছি না! তার প্রধান কারন আমরা, জনগণ ব্যাপক মাত্রায় বিভক্ত, এবং শাষকদের দেখানো নানা অজুহাতের প্রচারে অতি মাত্রায় বিভ্রান্ত! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাধারন মানুষের দাবী আদায়ে সংগঠিত হবার কোন বিকল্পই নেই।
এই বিভক্তি আমাদের ভেতর কোন্দল সৃষ্ঠি করে বার বার আমাদের লক্ষ্যচ্যুত করে দেয়। তাই পরিবর্তনের দাবী করা কোটি মানুষের অবস্থা আজ তৈলাক্ত বাঁশে সেই বানরের মত! আর আমাদের বানরের বানিয়ে রাখতে বর্তমানে সেই সাম্রাজ্যবাদি যুগের ব্যাবহৃত কৌশল ব্যাবহার হচ্ছে। অতীতের সমস্যা সমাধান না করে সেই সমস্যা টিকিয়ে রেখে জাতিকে অতীতমুখি, বিভ্রান্ত এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অসচেতন করে রাখা একটি কৌশলই। সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে অর্জিত কুটকৌশল ও কলোনিয়াল শিক্ষায় শিক্ষিত আমরা খুব দ্রুত এবং তুচ্ছ সব ইস্যুতে অতিমাত্রায় বিভক্ত হয়ে যাই। যেই শাষননীতি বাস্তবায়ন করে বিদেশী দস্যুরুপী শাষকরা আমাদের জনগণের ভেতর বিভক্তি নিশ্চিত করে আমাদেরকে সকল সেক্টরে ঠকিয়েছে!!!
আমাদের জাতীয় বিভক্তি সংস্কৃতি'র অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে "রাজাকার ইস্যু", দেশের প্রধান ২টা দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, একপক্ষ অপরপক্ষকে ঐতিহাসিক অপরাধের দায়ে অপরাধীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয়া নিয়ে অভিযুক্ত করে, এবং তারই জের ধরে আরো অনেক অভিযোগের পথ উন্মোচন করে। আর দেশের সিংহভাগ জনগণও তাদের "ব্লেম গেমে"র উত্তেজনায় আকৃষ্ট হয়ে দলীয় মুখপাত্র সেজে নিজেদের ভেতরেও সেই বিভক্তি নিশ্চিত করে! এভাবেই সমগ্র জনসংখ্যা সহ, সার্বিক রাজনীতিটাই অতীতমুখী হয়ে গেছে!
এই অচল ও অপ্রয়োজনীয় অতীতমুখী ট্রেন্ড থেকে বের হতে হলে, দারিদ্র ও দূর্নীতি'র আঘাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ আমাদের নিজেদের মাঝে দুরত্ব কমিয়ে আনতে হলে, প্রথমেই রাজাকারদের বিচার সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই "রাজাকার ইস্যু" খতম করতে হবে। বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন আমাদের দায়িত্ব রাজাকার বিচারের অপরিসীম গুরুত্ব বুঝা, এবং এই বিচারের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারকে চাপ দিয়ে এই টার্মেই উল্লেখযোগ্য রাজাকারগুলোর বিচার সম্পন্ন করা।
এই রাজাকার বিচার শুধু আমাদের জাতির লজ্জা মোচন করে আমাদের মানসিক সুস্থতাই নিশ্চিত করবে না বরং আমাদের ভেতরের বিভাজনও কমিয়ে আনবে। আমরা ইতিহাসের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আগামীর দিকে তাকাতে পারবো। তাই, সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু করতে হলে রাজাকার বিচারটাই আমাদের জন্য প্রথম পদক্ষেপ, নইলে ইতিহাসের হাত থেকে নিস্তার নাই!
প্রথমে প্রথম পদক্ষেপ সম্পন্ন হবার সাথে সাথেই পরবর্তী করনীয় সামনে নিয়ে আসার দায়িত্বও আমরা সফলভাবেই পালন করবো ইনশাল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:০৩