somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডায় ৭০ দিন - ১৮ তম পর্ব

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ১৮ তম পর্বঃ

লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ

কানাডার বাঙালি সমাজ পরস্পরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো একটা রেওয়াজে পরিণত করেছে। তদুপরি বাংলাদেশ থেকে কারো কোন আত্মীয় বিশেষ করে বাবা- মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী বেড়াতে এসেছেন জানতে পারলে তো কথাই নেই, বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। এখানে সবাই যে একে অন্যের আপন, একান্ত আত্মীয় ! বিদেশে না এলে এ ব্যাপারটি বোঝার উপায় নেই। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে নুরুন নবীর বাসায় আমাদের নিমন্ত্রণ। নুরুন নবী শুভর বন্ধু এবং সহকর্মী। ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চলে যাচ্ছে আলবার্টা ইউনিভার্সিটিতে-- পিএইচডি করতে। দাওয়াত না নিলে মনে কষ্ট পাবে। আমাদের সাথে টিটু দম্পতিও ছিলো। টিটু বুয়েটের শিক্ষক। ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। খাওয়া দাওয়ার পর আমরা সবাই গেলাম ডানডাস স্ট্রীটে। সেখানে লন্ডন পাবলিক লাইব্রেরী হলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উৎসবে।

আজ লন্ডন নিবাসী বাংলাদেশী এবং ভারতীয়রা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা নিবেদন করবে তার অমর সৃষ্টির মাধ্যমে--তার কবিতায়, গানে, নাটকে। কাবুলিওয়ালা মঞ্চায়ন হবে। বাংলা, হিন্দী এবং ইংরেজী--এই তিন ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন হচ্ছে। মূলতঃ ভারতীয়রাই উদ্যোক্তা। দর্শক অধিকাংশই ভারতীয় এবং বাংলাদেশি। কানাডিয়ান দর্শক শ্রোতাও রয়েছে কিছু।

লন্ডন পাবলিক লাইব্রেরীর Wolf Performance Hall। হল পূর্ণ দর্শক। আমরা দোতলার মাঝামাঝি স্থানে আসন নিলাম। ধ্রুব-র দুই মাস বয়স--সেও দর্শক হয়ে গেলো তার জীবনের প্রথম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ! তাও রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা নিবেদনে ! দাদির কোলে বসে ধ্রুব।পাশে শুভ ও লুসি। অন্যপাশে টিটু দম্পতি।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ঘন্টা খানেক পূর্বেই। আমরা দেরীতে আসায় অনুষ্ঠানের বেশ কিছু অংশ মিস করেছি। এখন গান হচ্ছে। ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো গুন গুনিয়ে,’ গাইছে ত্রিনা চক্রবর্তী--ভারতীয় গায়িকা। তার মোহনীয় কন্ঠের সুরে হলে নেই পিন পতনের শব্দ। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। এরপর একে একে ‘আমি চিনিগো চিনি তোমারে’ ‘সাথী মোর রজনী, পুরানো সেই দিনের কথা, ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ ইত্যাদি বহ শ্রুত ঠাকুরের জনপ্রিয় গানসমূহ। এসব গান যতোই শুনি ততোই ভালো লাগে, ততোই মুগ্ধ হই। মনে হয় প্রতিবারই নতুন শুনছি। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আবেদন বাঙালি হৃদয়ে চির শাশ্বত, চিরজাগ্রত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি হৃদয়ে চির অমর।

বিরতির পর ‘কাবুলিওয়ালা’ মঞ্চায়ন হলো ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়ে। পরিচালনায় ছিলেন নীলা চঞ্চলকার। বাবার ভূমিকায় অজয় মাইশুর, শিশু মিনির ভূমিকায় পূর্নিমা এবং রহমানের ভূমিকায় সাইলেন্দ্ররের অভিনয় দর্শক মুগ্ধ করেছে।

এরপর আবার ত্রিনা চক্রবর্তীর কন্ঠে, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি’ গানটি। লন্ডন ড্রিমসের শিল্পীদের ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারা’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এরপর ‘ পরান চাই চক্ষু না চাই,’ গানের সঙ্গে শিল্পী ভিলোরী এবং ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে’, ‘ওরে গৃহবাসি’ গানের সাথে সমবেত নাচ দর্শক শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে। কিছুক্ষনের জন্যে আমরা ভুলে গেলাম আমরা বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ! একটি ভিনদেশের রঙ্গমঞ্চে আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখছি, তার সৃষ্টিকে দেখছি ! যেখানে বাংলাদেশি থাকবে, যেখানে বাঙালি থাকবে, যেখানে ভারতীয়রা থাকবে সেখানে রবীন্দ্রনাথ থাকবে ! রবীন্দ্রনাথ মানুষের হৃদয়ের মাঝে, মানুষের আত্মার মাঝে !

শিল্পীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন রাজ্যের। বাংলাদেশের ও দুই চারজন ছিলো। এরা প্রায় সবাই কানাডার ইমিগ্র্যান্ট--লন্ডনে বসবাসকারি।

পরিশেষে ভারত, বাংলাদেশ এবং কানাডার জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হলো। উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরম আনন্দ এবং প্রশান্তিতে বাসায় ফিরলাম।

(ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×