somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘অচল’ ভারতীয় অ্যাম্বেসেডর প্রাণ পাচ্ছে বাংলাদেশে

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সংযোজন কারখানা বসিয়ে বাংলাদেশের গাড়ির বাজার দখল করে নিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ভারতের সি কে বিড়লা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান মটরস। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ‘অচল মাল’ হিসেবে পরিচিত অ্যাম্বাসেডর গাড়ি সংযোজন ও বিপণনের দায়িত্ব বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ইন্ট্রাকো গ্রুপকে দিয়েছে।



হিন্দুস্তান মটরসের ফরমায়েশ অনুযায়ী ইন্ট্রাকো গ্রুপ ইতিমধ্যে সাভারে প্ল্যান্টও বসিয়েছে। এই খবর দিয়েছে।



ভারতের ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকা শুক্রবার ‘বাংলাদেশ টু টেইক অ্যাম্বেসাডর টেক্সিস’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছেপেছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয় “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বাজারে দেশটির হিন্দুস্তান অ্যাম্বেসাডর গাড়ির বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও সি কে বিড়লা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান মটরসের অ্যাম্বেসাডর ব্রান্ডের গাড়ি নতুন জীবন পেতে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের ট্যাক্সিক্যাব মার্কেটে ভাগ বসাতে অ্যাম্বাসেডর গাড়ি সংযোজন সে দেশটিতেই হচ্ছে।”



প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীর অদূরে সাভারে ইতিমধ্যে প্ল্যান্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, সেখানে মাসে ২০০টি গাড়ি উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইন্ট্রাকো আশা করছে দুই বছরের মধ্যে এই প্লান্ট থেকে সংযোজিত অ্যাম্বেসাডর গাড়ি বাংলাদেশের রাজপথে নামতে পারবে।



বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে হিন্দুস্তান মটরস’র এমডি মনোজ ঝা বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা বাংলাদেশে কমপ্লিট বিল্ট ইউনিট (সিবিইউ) হিসেবে অ্যাম্বেসেডর গাড়ি রফতানি করছি। ইন্ট্রাকোর সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। ওরাই আমাদের গাড়ির সংযোজন ও বিপণন করবে।”



তিনি বলেন “বাংলাদেশের ট্যাক্সিক্যাবের বিশাল বাজার রয়েছে। আমরা আশা করছি ওখানে আমাদের গাড়ি বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।”



প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১০-২০১১ অর্থবছরে হিন্দুস্তান মটরস অ্যাম্বেসেডর গাড়ি বিক্রি করেছিল মোট ১০ হাজার ৯৭টি। এর আগের অর্থবছরে বিক্রি করেছিল ১১ হাজার ৩টি।



পত্রিকাটি লিখেছে “ভারতে একসময় গাড়িটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এটা এখন দেশটিতে অচল মাল হিসেবে চিহ্নিত। ২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে দেশটির ১৩টি বড় নগরীতে অ্যাম্বাসেডর গাড়ি নানা শর্ত সাপেক্ষে চলছে। কারণ এই গাড়ির ইঞ্জিন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। অ্যাম্বেসাডর গাড়ির ইঞ্জিন থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক বেশি।”



সম্প্রতি নগরীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক জাঁকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্ট্রাকো গ্রুপও ঘোষণা করেছে, তারা অ্যাম্বেসাডর ব্রান্ডের গাড়ি এককভাবে বাংলাদেশে বাজারজাত করবে। অনুষ্ঠানে অ্যাম্বেসাডর ব্রান্ডের গাড়ি উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টাচার্য, এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, হিন্দুস্তান মটরস’র এমডি মনোজ ঝা, ইন্ট্রাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী প্রমুখ।



এদিকে সূত্র জানায়, ভারতীয় গাড়ি এদেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারও দখল করে নিচ্ছে। প্রশাসনের একটি চক্রের সহায়তায় শুল্ক সুবিধায় ভারতীয় এসব গাড়ি অবাধে প্রবেশ করছে দেশে। পাশাপাশি সরকারিভাবে জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দেশে গাড়ি ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি সরকারের দ্বৈতনীতি। জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসায় লোকসানের মুখে পড়েছে গাড়ি ব্যবসায়ীরা। আশঙ্কাজনকভাবে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় গত দুই বছরে দেশের প্রায় অর্ধশত শোরুম বন্ধ হয়ে গেছে। আর এর অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত।



এদিকে বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা বলেছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ার পরও সরকার ভারতীয় গাড়ি আমদানিতে বেশ উত্সাহ দেখাচ্ছে। জাপানি রিকনডিশন্ড গাড়ি আমদানি নিরুত্সাহিত করার মাধ্যমে ভারতীয় গাড়ি ব্যবহারে জনগণকে প্রণোদনা দিতে চাইছে সরকার। জাপানি গাড়ির পরিবর্তে ভারতীয় গাড়ির আধিক্যে দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।



গাড়ি আমদানিকারক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে জাপানি রিকনডিশন্ড পিকআপ আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২৪০টি, যেখানে এক বছরে ভারত থেকে টাটা পিকআপ আমদানি করা হয়েছে ৫ হাজার ৭শ’। তাছাড়া জাপান থেকে সব ধরনের রিকনডিশন্ড গাড়ি আমদানিই ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে জাপানি রিকনডিশন্ড গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ২২৫টি, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮২৩টিতে। আর ২০১০-এর জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসেই ভারত থেকে মোট গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ৩৬ হাজার ১০০টি।



গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলেন “পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের গাড়ির বাজার ধীরে ধীরে ভারতীয়দের হাতে চলে যাচ্ছে।”


উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সুয়েপ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ২০০৩ সালে বাংলাদেশে গাড়ির দূষণের ওপর একটি জরিপ চালিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১১টি নতুন গাড়ির দূষণমাত্রা অত্যন্ত বেশি। এ গাড়িগুলো অধিক পরিমাণে কার্বন মনোঅক্সাইড নির্গমন করে থাকে। উল্লিখিত ১১টি গাড়ির মধ্যে ৯টিই ভারতের তৈরি সুজুকি মারুতি, সুজুকি জান এবং টাটা ইন্ডিকা। ফলে ভারতীয় গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।

Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×