এই ক্রিমিনাল ধর্মচক্রগুলির পরিচালকরা প্রত্যেকেই জীবনের কোন না কোন সময়ে, বিশেষতঃ ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায়, জামাতে ইসলামীর সাথে সম্পর্কিত ছিল ৷ এদের ওপর মওদুদীর প্রভাব লক্ষণীয় ৷ অনেকে আহলে হাদিসের লোক হলেও এরা কেউই মূলতঃ মওদুদীর প্রভাবমুক্ত নয় ৷
এই ধর্মচক্রগুলির অর্থের অভাব নেই ৷ দেখা যাবে যে, এগুলি পরিচালনার জন্য অর্থ তো আছেই, তারপরও এদের নেতাদের নিজেদের ব্যক্তিগত তহবিলেও জমা হয়েছে কোটি কোটি টাকা ৷ ইতিমধ্যে ব্যাংক একাউন্টের তদন্তে পাওয়া গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আহলে হাদিসের নেতা ডক্টর গালিব, ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক ডিরেকটর মওলানা মসউদ, জামা'আতুল মুজাহিদীন নেতা আবদুর রহমান প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক ৷
ধর্মব্যবসার মাধ্যমে এরা নিজেদের জন্য অর্থ সম্পদের পাহাড় তৈরী করেছে ৷ শুধু এই তিনজনই নয়, এদের মত আরও অনেকেই আছে, বিশেষতঃ এই সব চক্র সংগঠনের মাঝারী পর্যায়ের লোক, যারা একইভাবে ধনসম্পদের মালিক হচ্ছে ৷
এই ধর্মচক্রগুলির জন্য অর্থ সরবরাহ হয় কিভাবে ও কোথা থেকে? সব রকম প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে, মূলত মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে, বিশেষত কুয়েত, কাতার, আবুধাবী, সউদী আরব ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকেই এই অর্থ সরবরাহ হয়ে থাকে ৷ মধ্য প্রাচ্যের এই মুসলমান প্রধান দেশগুলিতে অবস্থিত বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশের ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লাদের সংগঠনগুলিকে অর্থ সরবরাহ থেকে স্বাভাবিকভাবে এই ধারণার উত্পত্তি হয় যে, এই দেশগুলি নিজেরা অথবা আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গী ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন, বিশেষতঃ আল-কায়দাই এই সরবরাহ করে ৷
বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার যোগ্য ৷ প্রথমেই মধ্য প্রাচ্যের উপরোক্ত দেশগুলোর দিকে যদি তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে যে, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী জোটের দ্বারা ইরাক আক্রমণ ও দখল এবং সউদী আরবের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা ও সংকট সেখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যাতে এই দেশগুলি নিজেদের সমস্যায় নিজেরাই জর্জরিত ৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশের মতো একটি দেশে ইসলামী মৌলবাদীদের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এই দেশগুলোর কোনটিই কোনভাবে লাভবান হতে পারে না ৷ কুয়েত বা কাতার তো তেমন দেশই নয়, এমন কি সউদী আরব আগে জামাতে ইসলামীকে প্রভূত পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করলেও এখন তাদেরও আর সেই উত্সাহ নেই ৷ তারা ঘর সামলাতেই ব্যস্ত ৷
অন্যদিকে আছে আল-কায়দার প্রশ্ন ৷ উত্তেজনার বশবর্তী এবং আন্তর্জাতিক মতলববাজী প্রচারণার শিকার না হয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে যদি বিষয়টি বিবেচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন আল-কায়দার চরিত্রের সাথে বাঙলাদেশের ধর্মচক্র পরিচালনাকারী মোল্লাদের চরিত্রের কোন মিল নেই ৷ এদের মধ্যে সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনাও বলা যেতে পারে শূন্য ৷ এরা উভয়েই ইসলামী মৌলবাদী এই ধারণার বশবর্তী হয়ে আল-কায়দা এবং বাংলাদেশের মোল্লাদেরকে গাঁটছড়ায় বেঁধে পরিস্থিতি ব্যাখ্যার চেষ্টা একেবারেই অবাস্তব ৷
হইহল্লাকারীদেরকে বাদ দিয়েও এই অবাস্তব চিন্তা যাঁরা করেন তাঁদের আল-কায়দার চরিত্র ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশী মোল্লাদের চরিত্র ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশেষ কোন ধারণা নেই ৷
আল কায়দা একটি ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন ৷ সউদী আরবও একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র ৷ কিন্তু উভয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত্ ৷ যাঁরা এই দুই-এর সম্পর্কে ওয়াকেফহাল তাঁরা জানেন যে, এরা উভয়েই ইসলামী মৌলবাদী হলেও সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি এদের দৃষ্টিভঙ্গী, নীতি ও বাস্তব সম্পর্ক পরস্পরের বিপরীত ৷ শুধু তাই নয়, ওসামা বিন লাদেন সউদী শাসক শ্রেণীর এক প্রভাবশালী অংশের লোক হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য এবং সউদী-মার্কিন সম্পর্ক বিষয়ে তীব্র মত বিরোধের কারণেই ওসামাকে সউদী আরব থেকে বহিষ্কার করা হয় ৷
আফগানিস্তানে সোভিয়েতপন্থী শাসন উত্খাতের ক্ষেত্রে ওসামা বিন লাদেন এবং মার্কিন ও পাকিস্তানের স্বার্থ অভিন্ন হওয়ায় পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনকে তাঁর সংগঠন গড়ে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে ৷ কিন্তু আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতপন্থী শাসন উচ্ছেদের পর থেকেই ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর সংগঠন আল কায়দার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পূর্ব অবস্থায় ফেরত্ যায় ৷ বিশেষতঃ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে বোমা হামলার পর এই সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে ৷ ওসামাকে ৯/১১ এর হামলার জন্য দায়ী করে সেই অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ ও দখল করে ৷
এর পর থেকে আল কায়দা নিয়মিতভাবে শুধু মার্কিন নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশের নানা ধরনের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ পরিচালনা করছে ৷ আল কায়দার দ্বারা সংগঠিত সন্ত্রাসের এটাই হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক ৷ এ দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশের মোল্লারা যে সংগ্রাম করছে তার সাথে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার কোন সম্পর্ক নেই ৷
যদি ধরে নেওয়া যায় যে, ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠান থেকে নিয়ে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বোমা বিস্ফোরণ এই মোল্লাদের কাজ তাহলে দেখা যাবে যে, এগুলির কোন বিশেষ ধরনের লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট নেই ৷ যশোরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খুলনায় কাদিয়ানীদের মসজিদ, গোপালগঞ্জে খ্রীষ্টান চার্চ, ঢাকার পুরানা পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির জনসভা, রমনা বটমূলে ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠান, সিলেটে শাহ জালালের মাজার, ময়মনসিংহের সিনেমা হল, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিস, ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ এবং সর্বশেষ ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় প্রায় পাঁচশো জায়গায় যে সব বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য লক্ষণীয় ৷ কিন্তু এই সাথে সব থেকে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এই অনেক ধরনের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে কোন সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যবস্তু নেই ৷ সাম্রাজ্যবাদ এই বোমা বিস্ফোরণের কোন ধরনের লক্ষ্যবস্তুই নয় ৷ কাজেই এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো যাদেরই কাজ হোক, তাদের সাথে যে আল কায়দার মত কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা চলে ৷ মধ্য প্রাচ্যের উপরোক্ত দেশগুলি এবং আল কায়দার মত ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন যদি বাংলাদেশের মোল্লা পরিচালিত ধর্মীয় চক্রগুলিকে অর্থ সরবরাহ না করে তাহলে এ কাজ কারা করছে, এটা বিশেষভাবে দেখা দরকার ৷
চলবে.....
বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের রাজনৈতিক ভূমিকা - ৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।