somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়ার নানা রূপ - ৬

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৌলবাদের নৃশংসরূপ ফতোয়াবাজি পবিত্র ধর্মের আচ্ছাদনে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনগড়া সিদ্ধান্ত-যা ধর্মজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিভেদে কেবল ভিন্ন নয়, বিপরীতও হতে পারে ৷ তবে ফতোয়াবাজির বিকাশ এবং বিলয়ের মধ্যে আছে সমাজ ও রাজনীতিনিষ্ঠ বহুবিধ কার্যকারণ ৷ আর ফতোয়াবাজির বিলয় ঘটতে পারে মুক্ত-বুদ্ধির চর্চা, যুক্তিবাদিতা, সংস্কারমুক্ত ধ্যানধারণা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রগতিশীল রাজনীতি-সংস্কৃতিচর্চা এবং সর্বোপরি আধুনিক শ্রেণী-সচেতন মানবতাবাদী ভাবধারার ব্যাপক বিকাশের মাধ্যমে ৷ আমাদের বর্তমান সমাজে, সময়ে এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফতোয়াবাজি উন্মেষের কার্যকারণগুলোই ব্যাপকভাবে বিদ্যমান ৷ এর বিপরীতে ফতোয়াবাজি দমনের জন্যে যে মানবিক দর্শনের বিকাশ প্রয়োজন তার যথাযথ অনুপস্থিতি এবং এর চর্চাকারী সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অভাব ও অনৈক্য ফতোয়াবাজি প্রসারের সুযোগ করে দিয়েছে ৷

ফতোয়াবাজ একক ব্যক্তি বটে, কিন্তু কখনো অসংগঠিত নয় ৷ আর্থ-সামাজিক পশ্চাত্‍পদতা এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির নানা উপাদান নিরবচ্ছিন্নভাবে শক্তি যোগাচ্ছে ফতোয়াবাজদের ৷ সামন্তবাদের অবশেষ এখনো এদেশের গ্রামসমাজের সদরে-অন্দরে ক্রিয়াশীল বলে মূল বা প্রান্তিক পর্যায়ের স্থানীয় নেতৃত্ব সেই অশিক্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ৷

সমাজবিকাশের গতিধারা সাধারণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেও লক্ষ্য করা যায়, সর্ববিধ পশ্চাত্‍পদতাই কুসংস্কার এবং ফতোয়াবাজির লালনভূমি ৷ শিক্ষা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা যে সমাজে অবহেলিত, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে-সমাজ পশ্চাত্‍পদ এবং দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শোষকশ্রেণী যে-দেশে রাষ্ট্রশক্তির নিয়ন্ত্রক, সেখানে ফতোয়াবাজির উন্মেষ ও বিকাশ অতি সাধারণ ঘটনা ৷ রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তির অধিষ্ঠানই যে ফতোয়াবাজের উত্থান ও বিকাশে মূল সহায়ক তার জ্বলন্ত প্রমাণ ছিল কিছুদিন আগের আফগানিস্তান ৷

এদেশেও আমরা ফতোয়াবাজদের পুনরুত্থানের পটভূমি মূল্যায়ন করলে দেখতে পাই, পঁচাত্তর-পরবর্তী গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সঙ্গে এর যোগসূত্র ও কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান ৷ আধ্যাত্মিকতা এবং ইহজাগতিকতা, ধর্ম এবং রাজনীতি যখন আলাদা অবস্থান থেকে সমাজজীবনে সংযুক্ত থাকে তখন মৌলবাদ ও এর অপক্রিয়া উজ্জীবনের অবকাশ পায় না ৷ কিন্তু ধর্ম ও রাজনীতি একীভূত হলে বা সমাজে ধর্মের নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার সুযোগ থাকলে সেই সমাজ জীবনে ফতোয়াবাজির উত্থান ঘটে ৷

বাংলাদেশে ফতোয়াবাজি নিরসনকল্পে হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় রায়ের শেষ অংশে যে সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তা মূল্যায়নের দাবী রাখে ৷ ফতোয়াবাজির স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, তাঁদের পরিকল্পিত ও নির্দেশিত পথে সরকার সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই ফতোয়াবাজির নির্মম নির্যাতন থেকে গ্রামবাংলার হতদরিদ্র প্রান্তিক মানুষ, বিশেষতঃ অবলা নারীসমাজ মুক্তি পেতে পারে ৷ অথচ হাইকোর্ট কর্তৃক ফতোয়াবিরোধী রায় ঘোষিত হওয়ার পর লক্ষ্য করা যায়, এদেশের ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদীচক্র সেই রায়ের বিরুদ্ধে 'জেহাদ' ঘোষণা করে বসে ৷

গণতান্ত্রিক পন্থায় তারা রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন না-করে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ৷ যদিও ফতোয়াবিরোধী রায়ের অংশ বিশেষ স্থগিত ঘোষিত হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল পর্যন্ত করা হয়েছে, তবু আন্দোলনের নামে মৌলবাদীদের 'যুদ্ধংদেহি' জেহাদি তত্‍পরতা স্থগিত হয়নি ৷
বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ী ফতোয়াবাজরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ফতোয়া বৈধ রাখার যত অপচেষ্টাই করুক না কেন, ইসলামের পুণ্যভূমি সৌদি আরবের পবিত্র কাবা শরিফের শ্রদ্ধেয় ইমামের কাছ থেকে কিন্তু আমরা ভিন্ন বাণী পাই ৷ তিনি ফতোয়াকে অবৈধ বলেই ঘোষণা করেছেন ৷

কুয়েত সিটি থেকে এএফপি পরিবেশিত খবরটির শিরোনাম :

"ফতোয়ার ধর্মীয় বা আইনগত বৈধতা নেই : কাবা শরীফের ইমাম ৷" ফতোয়াতন্ত্রের আজন্মলালিত বিশ্বাসবিরোধী চোখ-ঝলসানো এই খবরটিতে বলা হয়েছে : "ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ কাবা শরীফের পেশ ইমাম শেখ সালেহ্ বিন হামিদ বলেছেন, 'কুয়েতি সঙ্গীত শিল্পী আবদুল্লাহ রুওয়াইশেদের বিরুদ্ধে একজন সৌদি ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া অবৈধ এবং তা কার্যকর করা বাধ্যতামূলক নয় ৷...' কাবা শরীফের ইমাম বলেন, 'গত সপ্তাহে সৌদি ধর্মীয় নেতা হমৌদ বিন শোয়াইবি কুয়েতের নেতৃস্থানীয় পপ সঙ্গীত শিল্পী রুওয়াইশেদের বিরুদ্ধে যে ফতোয়া দিয়েছেন, তার কোন সরকারি মর্যাদা নেই এবং এটা কোন ধর্মীয় মতামত কিংবা বিচারবিভাগীয় আদেশও নয় ৷' বক্তৃতা প্রদান সফরে কুয়েতে ওয়াজ করার জন্য এসে তিনি বলেন, 'যিনি এই ফতোয়া দিয়েছেন তার দায়-দায়িত্ব তাঁর নিজের৷ ধর্মীয় কিংবা আইনগত রায়ের বৈধতা এই ফতোয়ায় নেই' ৷" (যুগান্তর, ৬.৮.২০০১)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ১০:৫৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×