somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামনে বিপদ পেছনে আপদ

২৮ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনার রশীদ
(আংশিক নয় পুরোটাই কপি পেষ্ট)
সব দেশের মানুষ বিপদে পড়লেও আপদে পড়ে মনে হয় শুধু এই বাংলাদেশের মানুষ। তাই এই আপদ শব্দটির সমভাব প্রকাশক কোন শব্দ অন্য ভাষায় পাওয়া যায় না। বিপদের পরে কাছাকাছি উচ্চারনের আরো একটি শব্দের বাহুল্য দেখে ভিন দেশি এক ইংরেজ কৌতুহলী হয়ে পড়েন । ঘটনাক্রমে এক বাঙালি লেখকের চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। তিনি সেই বাঙালী লেখকের বাংলা বিষয়ে দক্ষতা পরীক্ষার জন্যে প্রশ্ন করেন,
‘ আচছা বলুন তো দেখি , বিপদ আর আপদের মধ্যে পার্থক্য কি ? ’
একটু চিন্তা করে সেই লেখক জবাব দেন, ‘ একবার নৌকা করে পদ্মা নদী পার হচিছলাম। নদীতে হঠাৎ ঝড় ওঠে। নৌকাটা প্রায় ডুবতে বসেছিল। ওটা ছিলো নির্ঘাত এক বিপদ। আর বাঙালি হয়ে আজ এক বিদেশির কাছে আমার মাতৃভাষা জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হচেছ। এটাই আমার জন্যে একটা আপদ। ’

বাংলাদেশের জনগণের বিপদের তালিকা অনেক লম্বা। তবে আপদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। নীতিহীন,সুবিধাবাদী ও অপরিণামদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমাদের জন্যে বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সেই সুযোগে ১/১১ নামক আপদটি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সেই আপদটি ঘাড় থেকে সরালাম। কিন্তু এখন আবারও সেই আগের বিপদের গন্ধ পাওয়া যাচেছ।

আমরা চাই বিপদ ও আপদ- এই দুটি থেকেই মুক্তি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। একটি ছাড়াতে গেলে অন্যটি ঘাড়ে চেপে বসে। বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আমরা আপদের হাতে পড়ি। আবার আপদের হাত থেকে মুক্তি মিললে আগের বিপদে গিয়ে পড়ি। সমাজের সর্বত্র লাগামহীন দুর্নীতি আমাদের জন্যে সমূহ বিপদ সৃষ্টি করেছে । আবার এই দুর্নêীতিকে কেন্দ্র করে টিআইবিরা এমন প্রক্রিয়ায় প্রচারনা চালায় যে তা আমাদের জন্যে রীতিমত আপদ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষেত্রে মুখ বন্ধ রাখলে বিপদের মাত্রা বাড়ে । আবার মুখ খুললে আপদের সংখ্যা বেড়ে যায়।

১/১১ এর পর নতুন করে দেখতে পেলাম কি কি বিপদ নিয়ে আমরা বসবাস বা সহবাস করছি। শুধু চুনুপুটি বিপদ নয় - রুই,কাতলের মতো বড় বড় বিপদগুলিও চিহ্নিত করা হলো। পরম উৎসাহে সেই সব রুই- কাতলা প্রদর্শন করা হলো। জাতি দায়িত্ব না দিলেও অনেকেই রুই-কাতলের ব্যবসার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। এখন জানা যাচেছ ১/১১ এর সেই আড়তদারদের কেউ কেউ নিজেরাই ছিলেন একেকটা রুই-কাতলা। আগে তাও একটা স্বপ্ন ছিল তৃতীয় একটা শক্তি এসে জনগণকে এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে যাবে। এখন জনগণের সেই স্বপ্নটি হারিয়ে গেছে।

নিত্য নতুন বিপদ এসে এই লাইনটি উত্তরোত্তর লম্বা করে তুলছে। টিপাইমুখ বাধ নিয়ে আমরা এখন সবচেয়ে বড় বিপদে আছি। কারন ইন্ডিয়ার শাসক শ্রেণীর মাথা থেকে এই ভুতটি সরানো এত সহজ হবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রী সহ গুটিকয় মন্ত্রীর কথা আমাদের জন্যে আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে । আগে ইন্ডিয়া বাঁধ দিক, পরে উনারা যাচাই করে দেখবেন এটা আমাদের জন্যে সমস্যা হয় কি না। এর চেয়ে যুক্তির কথা আর কি হতে পারে ?
সরকারের ভাব সাব দেখে মনে হয় সমুদ্রসীমা নির্ধারনের ব্যাপারেও ‘ দেখি না কি হয় ’ পলিসি গ্রহন করা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রীদের যুক্তি এখানেও প্রযোজ্য। আগে সীমানাটা টানুক না । পরে আমরা দেখবো আমাদের ভাগে কতটুকু পড়েছে। এদিকে জাতিসঙ্গে আমাদের দাবী পেশ করার শেষ সময় আরো এগিয়ে এসেছে। সারা জাতির এই ব্যাপারে আদৌ কোন দুশ্চিন্তা রয়েছে বলে মনে হয় না।

আমাদের ভাবখানা এমন যে স্থলের উপরেই বিভিন্ন বিপদের কোন কূল কিনারা করা যাচেছ না। এখন আবার জল নিয়ে খামাখা হাঙ্গামা করে লাভ কি ? বরং বড় ভাই(ইন্ডিয়া) বা মেঝ ভাই (ইয়ানমার) খুশী হয়ে যা দেয় তা নিয়েই চলে আসা বুদ্ধিমানের কাজ ।
সমুদ্র সম্পর্কে আমাদের ধারনা যে এটা শুধু পানি আর পানি । যার তলই নেই - সেই অতল জলের জিনিস নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে খামাখা তালাতালি করা ঠিক নয়। কারন পররাষ্ট্র নীতি বা তার আদব কায়দা বিবেচনায় আমাদের মতো ভালো ছেলে এই ভুবনে আর ২য়টি নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ,কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়- এই নামতা বা আপ্তবাক্যটি সুশীল বালকের মতো আমরা সকাল বিকাল জপি। ছোট ভাই, মেঝ ভাইদের সামনে এই নামতাটি কম আবৃত্তি করলেও বড় ভাইকে দেখলে এই আবৃত্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেই। কাজেই এমন আদরের ছোটভাইকে কেউ সোহাগ না করে পারে না।

কিন্তু জটিল বিশ্ব রাজনীতির অত্যন্ত রূঢ় কথাটি হলো - একজনের পশ্চাৎদেশে অন্যজনের হাতটি রেখে দেওয়া হয় এবং সময় সুযোগমতো সেই হাতটি ব্যবহার করা হয় । আমার সঙ্গে আমার প্রতিবেশী তখনই ভালো ব্যবহার করতে বাধ্য হবে , যখন বুঝতে পারবে এরকম না করলে তার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। ইলিশ মাছ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মূচর্ছনা বা এজাতীয় কোন গলিত আবেগ দিয়ে পররাষ্ট্র নীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয় না। এটা নির্ণিত হয় বাস্তব ও রূঢ় কিছু সমীকরণের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে এই সমীকরণগুলি বুঝতে আমরা খুবই কাঁচা রয়ে গেছি।

এই ব্যাপারে আমরা হয়ে পড়েছি সেই সাপের মতো। গুরুর পরামর্শে যে সাপ ভালো হয়ে রাস্তার পাশে রশির মতো পড়ে থাকে। তার এই ভালোমানুষি ভাব রাস্তার পাশের কয়েকজন দুষ্ট ছেলের নজরে আসে- আরে আজব তো ! যত খোচাখুচি করা হোক - এই সাপ তো আর নড়ে না। এতে উৎসাহিত হয়ে ছেলেরা সাপটিকে ধরে রশির মতো করে প্যাচের পর প্যাচ দিতে থাকে। তাতে সাপের শরীরের সব হাডডি ভেঙে যায়। সাপ গিয়ে তার গুরুর কাছে নালিশ করে, গুরুজী , আপনার পরামর্শ মতো ভালো মানুষ হতে গিয়ে দেখুন আমার কি দুর্দশা হয়েছে। সব শোনে গুরুজী বলে, ‘ বেয়াক্কেল, আমি তোকে কামড় দিতে নিষেধ করেছিলাম সত্য ,কিন্তু মাঝে মাঝে ফোঁস করতে তো নিষেধ করি নাই। ’
আজকে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে এই ভাঙা কোমড় নিয়ে আদৌ আমরা দাঁড়াতে পারবো কি না সেই প্রশ্ন আজ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই ভাঙা কোমড় নিয়ে কিংবা সুশীল ছেলের সেই নামতা দিয়ে সমুদ্র সীমা নির্ধারনের কঠিন দরকষাকষিতে কিভাবে টিকে থাকবো - তাই এখন দেখার বিষয়।

রাশিয়া একসময় ৫৮৬৪১২ বর্গমাইলের বিশাল আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয় মাত্র ৭·২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। বিক্রির সময় অনেকে ভেবেছিল এতগুলি টাকা দিয়ে শুধু বরফের চাক কিনে সেক্রেটারী অব স্টেট উইলিয়াম সেওয়ার্ড কি বোকামিই না করেছে । এজন্যে অনেকেই এটাকে ‘ সেওয়ার্ড ফু্িল্ল ’ নাম দেন। অথচ এই বিক্রির কয়েক বছর পরেই বিরাট স্বর্ণের খনি সহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ আবিস্কৃত হয়। সেখানে পাওয়া যায় এক বিরাট খনিজ তেলের রিজার্ভ। সেই সময়ের মানুষের পক্ষে সারা বছর বরফে ঢাকা এই অঞ্চলের মাটিতে থাকা বিশাল সম্পদ সম্পর্কে ধারনা করা সহজ ছিল না । কিন্তু আজ বিজ্ঞানের অনেক উন্নতির পর মানুষের চিন্তাধারা অনেক প্রসারিত হয়েছে। আমরা এখন জানতে পেরেছি সমুদ্র এলাকা কি অপার সম্ভাবনাময় হতে পারে । তাই সম্ভাব্য কনফ্লিক্ট এড়াতে সারা বিশ্বে সমুদ্র সীমা নির্ধারনের জোড় তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা চলমান বিশ্বের সেই তাগিদটি ধারন করতে পারি নাই। মরণ এক ঘুমে সারা জাতি অচেতন হয়ে রয়েছে।

তাই হাজার হাজার বর্গমাইল সমুদ্র এলাকা হারানোর কথা শোনে আমাদের মনে কোন ভাবের উদয় হয় না। ভবিষ্যতে এক দিন একর,বিঘা হিসাবে সমুদ্র এলাকা মাপা শুরু হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রতি একর সমুদ্র এলাকার মূল্য একদিন স্থলভাগের চেয়েও বেশী হয়ে যেতে পারে। সামনের পৃথিবীতে মানুষের খাবার দাবার এবং বাসস্থান সহ অনেক কিছুর জোগান আসবে এই সমুদ্র থেকে ।
কাজেই আমরা এখনও সজাগ না হলে আমাদের এই অসচেতনতার মাশুল বহন করতে হবে যুগ যুগ ধরে আগত আমাদের পরবর্তি বহু প্রজন্মকে। জনগণকে এই ব্যাপারে সচেতন করার অন্য কোন বিকল্প নেই। জনগণই পারে তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু টিকিয়ে রাখতে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের একটা টিম তৈরি করতে হবে এর টেকনিকেল বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার জন্যে । অন্যথায় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর কুটনৈতিক ও টেকনিকেল দক্ষতার সামনে আমরা টিকতে পারবো না। গণমাধ্যমের এই ক্ষেত্রে একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

আমরা চুপ থাকলে আমাদের প্রতিবেশী এই বড় ভাই আর মেঝ ভাই মিলে আমাদেরকে অনেকটা লেন্ড লক্ড অবস্থায় ফেলে দিবে তাতে কোন সন্দেহ নাই । বিশাল সমুদ্র এলাকা হাত ছাড়া হওয়া ছাড়াও আমাদের নেভি কখনও নীল সমুদ্রে যেতে পারবে না। আমরা কখনই ব্লু ওয়াটার নেভি তৈরি করতে পারবো না।
আমাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করার সাথে সাথে আমাদের শক্তিগুলি সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিশাল আকারের হলেও আমরা কিন্তু ক্ষুদ্র নই। জনসংখ্যার বিচারে আমরা পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলির মধ্যে এক থেকে দশের ঘরেই আছি। তাছাড়া আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেখানে মডারেট এই মুসলিম দেশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এটা সত্যি যে একটা সময় পর্যন্ত ইন্ডিয়াকে কৌশলগত সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আমেরিকার চিরন্তন স্বভাবমতো সে কখনই চাইবে না যে কোথাও তার কোন স্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়িয়ে যাক। কাজেই যে ইন্ডিয়াকে এখন আমেরিকা প্রশ্রয় দিচেছ সেই ইন্ডিয়াই তার অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তির বিকাশের মাধ্যমে একদিন আমেরিকার স্বার্থের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য ।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রও চাইবে না যে আমরা এমনভাবে সি- লকড হয়ে পড়ি। অর্থাৎ সেই গণনা থেকে সেও চায় না যে একদিকে মিয়ানমার এবং অন্যদিকে ইন্ডিয়া কন্টিনেন্টাল সেলফ এর সকল জাযগা দখল করে আমাদেরকে আটকে দিক । একইভাবে ব্লু ওয়াটার একসেস বিবেচনায় আমাদেরকে লকড করে ফেললে এবং সাউথ এশিয়ার প্রতিটি দেশকে এভাবে কব্জায় নিয়ে ফেললে তা চায়নার জন্যেও স্ট্রাটেজিকেল হুমকি সৃষ্টি করবে।

কাজেই আমরা যদি আন্তর্জাতিক বলয়ে নিজেদের এই দাবি নিয়ে অগ্রসর হতে পারি তবে আশা করা যায় আমরা এক ঘরে হয়ে পড়বো না। কাজেই এই মুহুর্তে দরকার ইস্পাততুল্য জাতীয় ঐক্য ও সচেতনতা। কিন্তু আমাদের এই প্রয়োজন ও আকাঙ্খার বিপরীতে ইদানিং কিছু নিত্য নতুন আপদের সৃষ্টি হচেছ । কিছু অহেতুক বিতর্ক সামনে আনা হচেছ। এই অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যও আর অস্পষ্ট থাকছে না। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন , ‘ জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। জিয়াউর রহমান কোন ক্যাম্পে কোথায় যুদ্ধ করেছেন তা জানতে চাই। ’ তিনি এক ক্যাম্পে গিয়ে নাকি জিয়াউর রহমানকে ফাইটিং মুডে দেখতে পান নি। কিন্তু ইদানিং সাজেদা চৌধুরীরা যে বিশেষ ফাইটিং মুডে রয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।

তাছাড়া টিপাইমুখ বাঁধ, সমুদ্রসীমা নির্ধারনের মতো বড় বড় চ্যালেঞ্জগুলি যখন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য কামনা করছে । এই জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাটুকু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করেছেন ও একই সময়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী সাহস দিয়েছেন , ‘ ভয় পাবেন না। আমরাও আপনাদের সঙ্গে থাকবো। ’ তখন সাজেদাদের হঠাৎ এই ফাইটিং মুড জাতির জন্যে চিন্তার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে।
যে মুক্তিযুদ্ধ এই জাতিকে সবচেয়ে বড় একতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল দেখা যায় সেই মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা হচেছ জাতির ঐক্য বিনষ্ট করতে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এই দ্রুত সফলতার পেছনে অনেকগুলি কারন ছিল। তখনকার নেতৃত্বের মাঝে বিদ্যমান একটা চমৎকার বোঝাপড়া বা টিম ওয়ার্ক এই বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। একটা সফল টিম ওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য হলো একজনের ভুল বা সীমাবদ্ধতাকে অন্যজন ভরিয়ে দেয়। তাই মূল নেতা পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকলেও অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এই টিমের নিঃসন্দেহে একজন ক্যাপ্টেন বা কান্ডারী ছিল। এই কান্ডারীর ছত্র ছায়ায় তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ নজরুলের মতো কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জেনারেল ওসমানী ও জেনারেল জিয়ার মতো কিছু সামরিক নেতৃত্ব বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন।

কিন্তু একা এই কান্ডারীর কৃতিত্ব দেখাতে গিয়ে বাদ বাকী সকলের বিশেষ পারঙ্গমতাকে খাটো করার চেষ্টা করা হচেছ। এর প্রথম শিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ নেতৃত্বদানকারী তাজউদ্দীন আহমেদ । স্বাধীনতা আন্দোলনের মুল নেতার শারীরিক অনুপস্থিতিতে তিনি পুরো মুক্তিযুদ্ধকে পরিচালনা করেছেন। সঙ্গত কারনেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তিনি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। অর্থাৎ বিশেষ পরিস্থিতি তাকে এই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি পালন করিয়েছে। একই ভাবে এক বিশেষ পরিস্থিতি জিয়াকেও একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করিয়েছে। এখন যে নামেই ডাকা হওক না কেন এই কৃতিত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

স্বাধীনতার স্থপতিকেও নিচে টেনে এনে আজ ঘোষক বানানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। শুধু ক্যাপটেইনই গোল দিবে তা নয়- অন্য কেউ প্রয়োজনীয় গোলটি দিতে পারে। ইতিহাসের এই বাস্তব সত্যটিই আমরা মানতে পারি না। গোলদাতার অবদান স্বীকার করলে ক্যাপটেনের গুরুত্ব ও মর্যাদা কখনই কমে না। বরং আরো বেড়ে যায়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকেই জাতীয় এই ঐক্যটি সহজেই সৃষ্টি করা যায়। চিহ্নিত এই গোষ্ঠিটির এখানেই আপত্তি। কোনভাবেই এই জাতিকে এক হতে দেয়া যাবে না। এদেশে উদার গনতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। ক্ষমতার জীয়ন কাঠিটি জনগণের হাতে নয়। রাখতে হবে অন্য কোথাও।
আমরা দেখলাম বিশেষ এক পরিস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমেদকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়। জিয়াকে তার জায়গা থেকে নিচে নামানোর জন্যে যে টানাটানি শুরু হয়েছে- তা সেই একই কারন থেকে । এখন শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই না- জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা খেতাবটিও ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্ট শুরু হয়ে গেছে।

পদ্মা-মেঘনা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়ানোর পর জুনিয়র তাজউদ্দিনের মন্ত্রীত্ব এবং তার নিজের ও পারিবারিক সম্মানবোধ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে । অনেক চাপা যন্ত্রনা অনুভব করলেও উপলব্ধি করা যায় যে পার্টি বিপদে পড়বে ভেবে মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। আট চল্লিশ দিন মুখে কুলুপ এটে পরে সামান্য খুলেছেন। তার মুখ নিঃসৃত দুয়েকটা কথা পার্টির জন্যে আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের নেতেত্বর অনেকেই যে এখনও ৬০ এর দশকে দাঁড়িয়ে আছেন তা আবারও প্রমাণ করলেন সাজেদা চৌধুরী। তাদের পৃথিবীটাই থেমে আছে ষাট আর সত্তরের দশকে। তখনকার বালক এখনও বালক, তখন কার মেজর এখনও মেজর। সত্তরে কারো স্যালিউট খেয়ে আশিতে এসে সেই স্যালিউট ফিরিয়ে দিতে হতে পারে- তা তারা কখনও মানতে চান না। তিনি পদত্যাগী স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীকেও মনে করছেন বাচ্চা ছেলে। এতো বড় দায়িত্ব দেয়ার সময় তিনি বাচচা ছিলেন না- এখন পদত্যাগের সময় চল্লিশ বছর বয়সেও বাচচা হয়ে পড়েছেন। কাজেই তার কথার সূত্র ধরেই বলা যায় - দেশ, দেশের মানুষ ও তার ইতিহাসকে নিয়ে তারা আসলেই ছেলে খেলা শুরু করেছেন।

জিয়ার প্রতি অবজ্ঞা দেখাতে গিয়ে সাজেদা জানিয়েছেন যে লেফটেনেন্ট জেনারেল সমমর্যাদার হওয়ার দরুন মেজর জিয়ার স্যালিউট তিনি খেয়েছেন। মেজর জিয়ার এই স্যালিউট খাওয়ার পরেও তিনি ঠাহর করতে পারেন নি , জিয়া কোথায় যুদ্ধ করেছেন ? নিশ্চয় তিনি পাকিস্তানী শিবির থেকে জিয়ার এই ‘ পরম উপাদেয় স্যালিউট ’টি খেয়ে আসেন নি। যুদ্ধের তপ্ত এলাকায় এদেশের মাটির সন্তানদেরকে নিয়ে মেজর জিয়ারা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে ভিজে, কচুরী পানায় মাথা ঢুবিয়ে , কখনও রোদে পুড়ে যুদ্ধ করেছেন ; তখন এমন কিসিমের অনেক লেফটেনেন্ট জেনারেল গ্রীন জোনে বসে কিভাবে যুদ্ধ করেছেন সেই ইতিহাস দেশবাসীর অজানা নেই ।

যুদ্ধের ময়দানের মতো প্রেমের ময়দানেও এই দুই ধরনের লেফটেনেন্ট জেনারেল দেখা যায়। এক ধরনের লেফটেনেন্ট জেনারেলরা প্রেমিকার উদ্দেশ্যে কবিতা লিখে খাতার পর খাতা ভরে ফেলে। কিন্তু ভিলেন বা ডাকাত কর্তৃক প্রেমিকা আক্রান্ত হলে এদের আসল পরিচয় পাওয়া যায়। কবিতা দিয়ে প্রেমিকার মন ভরা গেলেও সেই কবিতা দিয়ে তো আর ডাকাত বা ভিলেন তাড়ানো যায় না। জীবনের মায়াটিই তখন বড় হয়ে দেখা দেয়। তখন অন্য ধরনের লেফটেনেন্ট জেনারেল বা মেজররা এগিয়ে যায়। কাজেই প্রেমিকাকে আর বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না - কে খাঁটি প্রেমিক।

কাজেই জাতির অনেক খাটি প্রেমিক এই সব লেফটেনেন্ট জেনারেলদের বর্তমান কীর্তি কলাপ পর্যবেক্ষণ করছে । সন্দেহ নাই , জাতিকে অহেতুক এসব বিতর্কে জড়িয়ে অন্য কোন গোষ্ঠিকে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচেছ । সময়ে এই সব সুখের পায়রা লেফটেনেন্ট জেনারেলদের ছাপিয়ে খাটি প্রেমিকরা এগিয়ে আসবেই। তারা যে কোন ব্যানারে যেখানেই থাকুক না কেন ।
ইমেইলঃ [email protected]
(সুত্র, মৌচাকে ঢিল,আগষ্ট ২০০৯ সংখ্যা)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×