মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে বলছি।
আস সালামু আলাইকুম। জানিনা আমার এ লেখা আপনার চোখে পড়বে কিনা। তবুও নিজের ভেতরের তাগিদ থেকে এ চিঠি লেখা। নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করবার অদম্য আকাংখা আমাকে বাধ্য করেছে কিছু কথা বলতে।
দেশের পরিস্থিতি কারো অজানা নয়। সংঘাত সহিংসতা নিরাপত্তাহীনতা সবার ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে রয়েছে। এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য বর্তামান ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগের যত না দায়ভাগ, তার চেয়ে বেশী দায়ভাগ রয়েছে গত মইনের সরকারের যাদের আপনি ইতিমধ্যেই ক্ষমা করেছেন। মইনের সরকারের কীর্তিকলাপের জন্য জাতি একটি বিরোধী দল বিহীন একতরফা সংসদ পায়। অথচ বাংলাদেশের মানুষের জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন সেই সংসদ ছিল না। এর সুদূর প্রসারী প্রভাবে বর্তমান সরকার হয়ে উঠে স্বৈরাচারী, অগনতান্ত্রিক, দলবাজ এবং জুলুমবাজ। প্রশাসনের প্রতিটি স্তর যেন দলবাজির উৎকৃষ্ট জায়গা। মানুষ এসব ভালভাবে নেয় নি। মানুষ সরকারের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। তাই শিবির যখন রাস্তাঘাটে পুলিশ পিটিয়ে চলে যায়, তখন সরকার সমর্থকরা শুধু "রাষ্ট্রদ্রোহিতা" বলে চেচাতেই থাকে, কিন্তু সমাধান আর করতে পারে না। মানুষের চাপা ক্ষোভের আরো প্রতিফলন ঘটেছে চার সিটি কর্পরেশনের নির্বাচনে। এর কোনটিই এত বেশী মাত্রায় হত না যদি সংসদে সরকার এবং বিরোধী দলের ব্যালেন্স থাকত।
উপরের কথাগুলো বলা জরুরী ছিল। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মত এবারো সহিংসতা হচ্ছে। যেহেতু এবারকার সরকারের স্বৈরাচার ও বিরোধী দল দমন অতীতের সকল রেকর্ড ভংগ করেছে, সেজন্য সহিংসতা তুলনামূলক ভাবে বেশী হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই সংঘাত অনাকাংখিত যদিও বাস্তবতা।
প্রিয় নেত্রী, পুলিশ বিজিবি সহ রাষ্ট্রের সব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান দলীয় নির্দেশে আপনাদের তাড়া করে ফিরছে। এমতাবস্থায় সরকারের যে কোন আলোচনা প্রস্তাব আপনাদের কাছে ফাজলামি এবং বিরক্তিকর লাগছে। যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে আপনাকে আরেকটু সহনশীল ও আপোষকামী হতে হবে। নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও বংগবন্ধু শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও সেসময় উনার দলের ভেতরে এর তীব্র বিরোধিতা চলছিল।
প্রিয় নেত্রী, আপনি একজন মুসলিম। আল্লাহর রাসুল হুদায়বিয়ার অপমানজনক সন্ধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন যদিও সেসময় মুসলিমরা ছিল শক্তিশালী। কালের প্রেক্ষিতে তা সঠিক প্রমানিত হয়েছে। সন্ধি এবং শান্তি ইসলামের প্রান।
এইসব কথার একটিই উদ্দেশ্য। আপনি আলোচনা এবং সংলাপকে অগ্রাধিকার দিন। যত সংঘাত হবে তত মানুষের জান প্রান হানি ঘটবে। এসবের পেছনে সরকার দায়ী না বিরোধী দল দায়ী সেসব বিতর্কে কি ক্ষতিগ্রস্তদের কোন লাভ হবে? কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও শান্তিপূর্ন সমাধানের চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, জনমত এখন বিএনপির অনুকূলে। কিন্তু মানুষ যদি বুঝতে পারে সংঘাতের পেছনে বিএনপি অহেতুক উস্কানী দিচ্ছে তাহলে সেই জনমত ঘুরে যাওয়া কোন বিচিত্র বিষয় নয়।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। দেশকে সেদিকে পরিচালিত করা আপনাদের দায়িত্ব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৩৫