উপজেলা নির্বাচনের আংশিক ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। তৃনমূল পর্যায়ের নির্বাচন বিধায় নির্বাচনের ধরনটা একটু অন্যরকম। ৮৫ তে যখন এরশাদ সরকার ক্ষমতায় ছিলো, তখনও এই নির্বাচনকে প্রশাসন ততটা প্রভাবিত করতে পারত না যতটা প্রভাবিত করত সংসদ নির্বাচনকে। স্থানীয় তৃনমূল নেতারা তা হতে দিত না। যার ফলে তৃনমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনটির আপন বৈশিষ্ট্যে তার জায়গা করে নিয়েছিল।
বাংলাদেশের মানুষ প্রধানত আওয়ামী ও বিএনপি শিবিরে বিভক্ত বলে এই নির্দলীয় নির্বাচনটিও শেষতক আর নির্দলীয় থাকে নি। প্রায় সবাই এর দলীয় চরিত্রকে মেনে নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনের মত একেবারে তৃনমূল একটি নির্বাচনের ফলাফলেও দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন হয়েছে।
যা বলছিলাম। এই নির্বাচনে জামাত আশাতীত ভাল করেছে। নির্বাচনের ফলাফলে ঐটাই প্রথম চোখে পড়ে। আগেই বলেছি উপজেলা নির্বাচন একটু আলাদা। এখানে ১৯ দলীয় কোন একক প্রার্থী শেষতক ছিল না। বরং ছিল বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভাল রকম উপস্থিতি। যার ফলে জামাতের এই সাফল্যকে পুরো ১৯ দলের ক্রেডিট বলে হালকা করার সুযোগ নেই। ভোটাররা সচেতন ভাবেই জামাত গন্ধের প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছেন।
দেশ ও মিডিয়ায় এত জামাত বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন উপজেলা নির্বাচনে জামাতের এই সাফল্য? এর একটি কারন জামাত তৃনমূল পর্যায়ে কিছুটা গোছানো দল। গ্রামের সরল মানুষ গুলোকে বিভ্রান্ত করা কঠিন কিছু নয়। তবুও মূল কারন এটি নয়। মূল কারন হল, সরকারের অজনপ্রিয়তা এবং দমননীতি। সরকার যত কঠোর ভাবে জামাত দমন করেছে ততই মানুষ জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছে। দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ, যৌথ বাহিনীর অভিযানে জামাত-শিবিরের দীর্ঘ নিহতের তালিকা - এই সবের কারনে সাধারন মানুষের কাছে জামাত শিবিরের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি চলে এসেছে। এছাড়া সরকারের প্রতি বিতৃষ্ণা অন্যতম ফ্যাক্টর। সরকারের স্বৈরাচারী কার্যকলাপে সাধারন মানুষ এতটাই বিরক্ত যে আওয়ামী বোটকা গন্ধের চেয়ে জামাতী হালকা গন্ধ বরং বেশী সহনীয় লাগছে।
সরকারের লোকজনের আবোল তাবোল প্রলাপ যেন সব সীমা ছাড়িয়েছে। সেদিন মতিয়া বলেছেন, "প্রজার সুখই হাসিনার সুখ।" মতিয়া কি জেনেবুঝে কথাটি বলেছেন। প্রজা হল তারা যারা রাজার অধীনে বাস করে। আর গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যারা থাকে তারা হল নাগরিক এবং তারাই দেশের প্রকৃত মালিক। অর্থ্যাৎ মতিয়ার কথা অনুযায়ী এই সরকারের কাছে সাধারন জনতা প্রজাতুল্য মাত্র, নাগরিক নয়। অবশ্য মতিয়া বলতে পারেন বাংলাদেশ তো গনপ্রজাতন্ত্রী দেশ এবং সে বিধায় আমি জনতাকে প্রজা ডেকেছি। কিন্তু আসলে "সাবজেক্ট" (প্রজা) এবং "সিটিজেন" (নাগরিক) সমার্থক শব্দ নয়। সরকারের লোকজনের কাছে সাধারন মানুষ যে জিম্মি হয়ে রয়েছে তা তাদের অসতর্কতা মূলক আচরনেই প্রকাশ পায়।