সকালে উঠে পত্রিকা দেখলাম। মান্না ভাই নিখোজ হয়েছেন। খবরটা আমার মধ্যে কোন অনুভূতির জন্ম দিলনা। অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে যারা সরকারের সমালোচনা করবে, তারা তো নিখোজ কিংবা লাশ হবেই - এতে যেন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।
জানিনা মান্না ভাই আর কোনদিন ফিরবেন কিনা। কারন এ দেশে গভীর রাতে সাদা পোশাকধারীরা কাউকে বাসা থেকে নিয়ে গেলে সে আর ফেরত আসে না।
মান্না ভাইয়ের "অপরাধ" হল দুটি ফোনলাপ। একটিতে তিনি "বিশ্বাবিদ্যালয়ে লাশ" চেয়েছেন (?)। অন্যটিতে তিনি "জেনারেলদের সাথে কথা" বলতে চেয়েছেন (?)।
এ নিয়ে আওয়ামী সমর্থক টিভি মাধ্যমগুলো উঠে পড়ে লেগেছে। মান্না লাশ চান, মান্না ১/১১ চান ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ কারো মনে হল না যে মান্না যখন "গেলো দুই তিনটা - কি করা যাবে" বলেছিলেন, তখন আসলে বাংলাদেশের পুলিশী রাষ্ট্রের স্বরূপটাই তুলে ধরেছিলেন। যে রা্ষ্ট্রে নেই কোন মানবাধিকার। পুলিশের গুলিতে নিহত অগনিত লাশের মিছিলে দুই একটি লাশের হিসাবটা খুব বেশী গোলমেলে নয় - এটিই হয়ত বা মান্না ভাই বোঝাতে চেয়েছিলেন।
পৃথিবীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের স্বরূপটাই কি এমন নয়? এ ক্ষেত্রে মৃত্যু ভয়কে পাশ কাটিয়ে কি ছাত্ররাই এগিয়ে আসে না? আমাদের ভাষা শহীদরা কি তেমনটি করেন নি?
এরপর আসা যাক জেনারেলের সাথে কথোপকথন। এখানে মান্না মূলত শ্রোতা। একজন কথা বলতে চেয়েছে। মান্না বলেছেন "ঠিক আছে"। এতেই সবাই ধরে নিল যে তিনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য জেনারেলদের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। অথচ মান্না কোথাও বলেন নি যে তিনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য জেনারেলের দ্বারস্থ হতে আগ্রহী।
কেউ ভাবল না যে মান্নার মত একজন মানুষের কাছে দিনে অগনিত ফোন আসে যাতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি ভদ্রভাবে আলাপচারিতায় অংশ নেন।
দুটি ফোনালাপ দিয়ে মানুষের চরিত্র প্রকাশ পায় না। বিশেষত ফোনালাপের অনেক বিষয়ই যেখানে স্পষ্ট নয়। অথচ এই ফোনালাপ ইস্যু দিয়েই তাকে কাবু করার একটি চেষ্টা চলছে।
যা অত্যন্ত বিন্দনীয়।