আইসিসি প্রধান কামালের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ঝড় উঠার কারন তিনি আইসিসি প্রধান।
কামালের মন্তব্যকে সমালোচনা করে যারা লিখেছেন তাদের অনেকের মন্তব্য প্রথম আলোর পাঠকের মন্তব্য হিসেবে প্রকাশ হয়েছে। বিপরীত মন্তব্য প্রকাশ করায় প্রথম আলোকে ধন্যবাদ রইল।
এখন এক এক করে আমি মন্তব্যগুলোর জবাব দিচ্ছি।
জনৈক পাঠক এস এম বিল্লাহ লিখেছেন:
"ক্রিকেট একটি ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে ফুলবল অথবা হাডুডু খেলার মতো কোথাও কখনো মারামারি হতে দেখা যায় না। ক্রিকেটে আম্পায়ার কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিলে তা নিয়ে আপত্তি করার সুযোগ আছে এবং নির্দিষ্ট উপায়ে তার নিষ্পত্তি করার সুযোগও রয়েছে। তবে আম্পায়ারের এমন একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে আইসিসি প্রধানের কথিত মন্তব্য ও পদত্যাগের হুমকি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই ধরণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় দেশের ক্রিকেটপ্রেমী জনগণ তাৎক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হতে পারে; কিন্তু তা ক্রিকেটের সুশীল চরিত্রের সাথে বেমানান মনে হয়। "
আমার জবাব:
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা তখনই হবে যখন তা দুই পক্ষের প্রতি সম আচরনমূলক হবে। এক পক্ষকে দুর্বল পেয়ে সেই দুর্বল দলের প্রতি বিষম আচরন কোনভাবেই ভদ্রোচিত হতে পারেনা। খেলার মাঠে বাংলাদেশ দল আম্পায়ারের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছে। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ ব্যতিরেকে আর কোন দল এরকম ভদ্রতা দেখাত কি না তা সন্দেহ। কিন্তু এই ভদ্রতাকে দুর্বলতা হিসেবে গন্য করা হবে - তা তো হতে দেয়া যায় না। ক্রিকেটীয় সুশীল চরিত্র ধরে রাখার জন্যই বাজে আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। আম্পায়ারিং ক্রিকেটের বাইরের কোন অংশ নয়। ক্রিকেটের স্বার্থেই এরকম বাজে আম্পায়ারিং বন্ধ করা প্রয়োজন। সেই উদ্যোগটা আসা উচিত ছিল আইসিসির কাছ থেকেই। অথচ আইসিসির কাছ থেকে তার উল্টোটাই শোনা যাচ্ছে। বাজে আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ তারা এক কথায় নাকচ করে দিচ্ছেন। দেখুন রিচার্ডসনের বক্তব্য:
রিচার্ডসন বলেছেন, ‘ আইসিসির সভাপতি হিসেবে ম্যাচ অফিশিয়ালদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে কামালের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। কারণ, তাঁদের সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ম্যাচ অফিশিয়ালদের ‘‘অ্যাজেন্ডা’’ ছিল কিংবা তাদের সামর্থ্যের বাইরে অন্য কিছু করেছে, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।"
একটি ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং এর কারনে আইসিসি প্রধানের পদত্যাগের হুমকি অবশ্যই শোভন নয়। কিন্তু আইসিসি যখন বাজে আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ রাখেনা তখন তা কতটা শোভন?
প্রথম আলোতে আরেকটি মন্তব্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লিখেছেন:
"আইসিসির প্রেসিডেন্ট হিসেবে কামাল সাহেবের বক্তব্য আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় নি। আম্পায়ারিং খারাপ হয়েছে। সেটা অন্য ম্যাচেও হয়। শ্রীলঙ্কার অশোকা ডি সিলভার কথা তো এখনও মনে আছে। সে সময়ও অনেক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে। তখন তো আইসিসিকে দোষারোপ করা হয় নি! ফুটবলে রেফারির ভুলের পরিমান অঢেল। তখন কোন দেশ বা ফিফার উপর দোষ চাপানো হয় না। এখন আইসিসি ভারত প্রভাবিত বলে আম্পায়ারের দোষকে পাতানো ম্যাচ বা অন্যান্য অভিযোগ করাকে আমি অত্যন্ত হীনমন্যতা বলে মনে করি। আম্পায়াররা পাতানো থাকলে তামিমের আউটে তারা থার্ড আম্পায়ারকে ডাকতো না। ইংল্যান্ডের জর্ডানের রান আউটও বিতর্কিত ছিল, এবং বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। তার মানে কি ঐদিন আম্পায়ার বাংলাদেশের পক্ষে ছিল? "
আমার জবাব:
আইসিসি প্রেসিডেন্ট ঠিক কি বলেছেন তা সঠিক বিবরন কোথাও পাচ্ছি না। তিনি যদি সরাসরি পাতানো খেলা বলে থাকেন, তবে তা ঠিক বলেন নি কারন এর পক্ষে এখনও কোন প্রমান নেই। কিন্তু বাজে আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তিনি রাখেন। আম্পায়ারের ভুল কি ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত - এটা বলার অধিকারও তিনি রাখেন।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাজে আম্পায়ারিং যেমন নিন্দনীয়, তেমনি অন্য দলের বিরুদ্ধে বাজে আম্পায়ারিংও নিন্দনীয়। দেখার বিষয় হল, বাংলাদেশ সেদিন বেশ কয়েকটি বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে - যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বিশেষত "নো বল" এর সিদ্ধান্তটি একেবারেই অপরিপক্ক। সেজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, এসব ভুল কি অনিচ্ছাকৃত ভুল, নাকি ইচ্ছাকৃত? যদি অনিচ্ছাকৃতও হয়ে থাকে, তবে এরকম নির্জলা ভুল করার পরেও আম্পায়াররা কি খেলা পরিচালনার সুযোগ রাখেন?
আইসিসি থেকে কামালের পদত্যাগের প্রশ্নই উঠেনা। এই হুমকি দেয়াটাও ঠিক সমর্থন করা যাচ্ছে না। তবে জঘন্য মাত্রার আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০৮