মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া নিজেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছেন। খালেদা জিয়া কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা একাডেমিক ব্যক্তিত্ব নন, বরং একজন রাজনীতিবিদ। জন সাধারনের স্বাভাবিক আবেগ অনুভূতিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা তার অনেক দায়িত্বের মধ্যে একটি। একটি নিতান্ত সাধারন জনসভায় তার "মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে" দাবী করা বক্তব্য সাধারন মানুষের অনুভূতিকে যে আহত করবে তা কি তিনি ধারনা করতে পারেন নি?
এতকাল যারা শহীদদের সংখ্যা নিয়ে তর্ক করত, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার জন্যই তা করত। শর্মিলা বসু তার "ডেড রেকনিং" বইটিতে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে তর্ক করেছেন তার মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর নির্যাতনকে লঘু করে দেখানো। খুব স্বাভাবিক বোধগম্য কারনে বাংলাদেশে জামাত শিবির এই বই নিয়ে উল্লাস করে থাকে। যেখানে সেখানে যত্র তত্র শর্মিলা বসুর বইয়ের কোট করে পাক বাহিনীর অপকর্ম হালাল প্রমান করার চেষ্টা করে। এই মহলটি বাংলাদেশের মূল ধারার জনসাধারন কর্তৃক পরিত্যক্ত। এদিকে ঐরকম বক্তব্যের দ্বারা খালেদা জিয়া যে নিজেকে শর্মিলা-জামাতের কাতারে নিয়ে গেলেন সেটা বুঝতে কি তিনি ব্যর্থ হয়েছেন?
খালেদা জিয়া ঠিক কি কারনে কথাগুলো বলেছেন তা নিয়ে বেশ জল্পনা কল্পনা হচ্ছে। একটা হতে পারে, তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হাইজ্যাকের অপচেষ্টা থেকে বিরক্ত হয়ে কথাগুলো বলেছেন। অন্যদিকে এটাও হতে পারে যে, তিনি পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্কের প্রেক্ষিতে এরকম কথা বলেছেন। দ্বিতীয় কারনটি যদি হয়ে থাকে তবে তা ক্ষমার অযোগ্য। কারন পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রাখার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যের বিষয়ে আপোষ করে নেব।
আওয়ামী লীগ খুব সফলভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করনের দিকে এগোচ্ছে। যদিও স্বাধীনতা বিরোধীদের কমবেশী লালন পালন দুই দলই করেছে। আমেরিকা চীনের সাথে দুই দলেরই রয়েছে চরম দহরম মহরম। বিএনপিতে যেমন সাকা রয়েছে তেমনি আওয়ামী লীগে রয়েছে ফয়জুল হক। কিন্তু এটা সত্য যে আওয়ামী লীগে রাজাকার থাকলেও তাদের অবস্থান সুষ্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির নিয়ন্ত্রনে। অথচ বিএনপিতে খালেদা জিয়া এখন সেই ঢোলই বাজাতে চাইছেন যা এতকাল জামাত বাজিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল পটভূমিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে বিএনপি শুধু নিজের পায়েই কুঠরাঘাত করবে না, বরং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনকে আরো পাকাপোক্ত করবে। দুঃখের বিষয় হল খালেদা নিজেই সেই সুযোগ উন্মুক্ত করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪