somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর অর্ধেকই যৌন হয়রানির শিকার X(

০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব সভ্যতার জন্য নতুন এক ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস। পত্রিকাটি খবর দিয়েছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেড সেভেন থেকে টুয়েলভ ক্লাসের ছাত্রীদের অর্ধেকই যৌন হয়রানির শিকার। অন্তত গত শিক্ষাবছরের ওপর পরিচালিত গবেষণা রিপোর্ট তাই বলছে। যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের শতকরা ৮৭ ভাগের ওপর পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। এদের বেশিরভাগই এখন স্কুল কামাই করা শুরু করেছে; তার ওপর পাকস্থলির সমস্যা তো লেগেই আছে। অনেকের আবার রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে তারা জীবন কাটাচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি অলাভজনক সংগঠন হচ্ছে ‘দি আমেরিকান এসোসিয়েশন অব ইউনিভারসিটি উইমেন’। তারাই এক হাজার ৯৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এ গ্রুপটি যৌন হয়রানিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে-“যৌন হয়রানি হচ্ছে এমন অপ্রত্যাশিত যৌন আচরণ যা শারীরিক কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়।”

গ্রেড সেভেন থেকে টুয়েলভ ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ছেলেরা যেখানে শতকরা ৪০ ভাগ যৌন হয়রানির শিকার সেখানে মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ৫৬ ভাগ। তবে, মাধ্যমিক স্কুলে এ অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। সেখানে ছেলেদের হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাই বেশি। তবে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে- কম আয়ের পরিবারের শিশুরাই সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার। আর এদের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে বেশি।

এ সম্পর্কে ‘দি আমেরিকান এসোসিয়েশন অব ইউনিভারসিটি উইমেন’র পরিচালক ক্যাথেরিন হিল বলেছেন,“যৌন নির্যাতনের ঘটনা সর্বব্যাপী এবং স্কুলের জন্য এটা একটা স্বাভাবিক অংশ হয়ে গেছে।”

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ২০১০-১১ শিক্ষা বছরে গড়পড়তা শতকরা ৪৮ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার। শতকরা ৪৪ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী বলেছে, তারা মানুষের হাতে নির্যাতিত হয়েছে। এরা নানা ধরনের অপ্রত্যাশিত মন্তব্য, কৌতুক কিংবা ইচ্ছকৃত স্পর্শ অথবা ভয়ভীতির মাধ্যমে যৌনাচারের শিকার হয়েছে। শতকরা ৩০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী অনলাইনে ই-মেইল, ফেইসবুক এবং অন্য মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা মন্তব্য, কৌতুক অথবা ছবি পাঠানো হয়েছে কিংবা যৌন সম্পর্কিত নানা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীরা বেশি শিকার

মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সংখ্যা শতকরা ৫২ ভাগ। এরা সবাই শারীরিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আর শতকরা ৩৬ ভাগ অনলাইনে। এর বিপরীতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রদের শতকরা ৩৫ ভাগ শারীরিক যৌন হয়রানির শিকার এবং ২৪ ভাগ অনলাইনে।

গ্রেড নাইনের এক ছাত্রী জানিয়েছে,“আমাকে সবাই বেশ্যা বলে ডাকে। কারণ আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে।” আবার গ্রেড এইটের এক ছাত্র জানিয়েছে,“আমাকে সমকামী বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে কারণ আমি বাস্কেটবল টিমে খেলি।”

ইউনিভারসিটি এসোসিয়েশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হলি কার্ল জানিয়েছেন, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, “আমরা চাই না যে স্কুলগুলো যৌন নির্যাতনের ঘটনা ভুলে যাক এবং এ সম্পর্কে চুপ থাকুক।”

গবেষণা রিপোর্টে বলা হচ্ছে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা তা হলো- অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন বিষয়ক মন্তব্য, ইশারা কিংবা কৌতুক। এগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার করা হয় মেয়েদের ক্ষেত্রে। শতকরা ৪৬ ভাগ মেয়ে এমন মন্তব্য, ইশারা কিংবা কৌতুকের শিকার। সেখানে এ ধরনের ঘটনার শিকার শতকরা ২২ ভাগ ছেলে। শতকরা ১৩ ভাগ ছাত্রী অপ্রত্যাশিত স্পর্শের শিকার, আর ছেলেরা এ ধরনের ঘটনার শিকার হয় শতকরা তিন ভাগ। শতকরা তিন দশমিক পাঁচ ভাগ ছাত্রী জানিয়েছে, শারীরিকভাবে কোনো না কোনো যৌনকাজে লিপ্ত হতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। এমন ঘটনার শিকার শতকরা শূন্য দশমিক দুই ভাগ ছাত্র। এ ছাড়া, শতকরা ১৮ ভাগ ছেলে ও মেয়েকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ‘গে’ অথবা ‘লেসবিয়ান’ (সমকামী) বলা হয়েছে।

যৌন হয়রানির শিকার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জরিপ পরিচালনাকরীরা জিজ্ঞাসা করেছেন, কোন ঘটনা তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। জবাবে ছেলেরা বলেছে, সমকামী বলে ডাকা সবচেয়ে কষ্টকর। একই প্রশ্নের জবাবে মেয়েরা বলেছে, যৌন বিষয়ক অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য, কৌতুক কিংবা ইশারা-ইঙ্গিত তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক ছিল।

পরিণতি ভয়াবহ

মার্কিন মুল্লুকে এই যে অবাধ যৌনাচারের পরিণতি কিন্তু ভয়াবহ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার মেয়েরা মারাত্মক নেতিবাচক পরিণতির কথা বলেছে। এমন মেয়েদের শতকরা ৩৭ ভাগ বলেছে, তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর আর স্কুলে যেতে চায়নি। ছেলেদের বেলায় এ সংখ্যা ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। শতকরা ২২ ভাগ মেয়ে বলেছে তারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যায় ভুগেছে শতকরা ১৪ ভাগ। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন মেয়েদের শতকরা ৩৭ ভাগ বলেছে তারা পেটের পীড়ায় ভুগছে আর ছেলেরা ভুগছে শতকরা ২১ ভাগ।
অনলাইন এবং শারীরিক দুইভাবেই যেসব ছাত্র-ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের শতকরা ৪৬ ভাগ বলেছে তারা আর স্কুলে যেতে চায়নি, ৪৪ ভাগ পাকস্থলির সমস্যায় ভুগছে এবং শতকরা ৪৩ ভাগ ছাত্রছাত্রীর পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

যৌন হয়রানির শিকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জরিপকারী দল প্রশ্ন রেখেছিল-কোন ধরনের ছাত্রছাত্রী বেশি হয়রানির শিকার হয়। এর জবাবে তারা জানিয়েছে, সুন্দর চেহারার ছাত্ররা নিরাপদ। কিন্তু সুশ্রী-কুৎসিত সব ধরনের মেয়ে এবং মেয়েলি স্বভাবের ছেলেরা যৌন নির্যাতনকারীদের প্রধান টার্গেট। ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছে, সুঠাম দেহের মেয়েরা এবং যাদের শরীর তুলনামূলক আগেই বেড়ে ওঠে তাদের ঝুঁকি বেশি।

এ সম্পর্কে সংস্থার পরিচালক মিসেস ক্যাথেরিন হিল বলেন, যদিও যৌন হয়রানির ঘটনা সবাইকে প্রভাবিত করে তবে মেয়েদের জন্যই বিষয়টি বেশি জটিল। তিনি বলেন, ছেলেরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, কিন্তু মেয়েরা সরাসরি হয়রানির শিকার হয়।

নিউয়ক টাইমসের মূল রিপোটটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:২২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×