somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৈমন্তী (মানুষের ছোট গল্প)

২১ শে নভেম্বর, ২০০৭ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন কিন্তু আমি সবুর করিতে চাহিলাম না। কারণ আমার মস্তকের টাকটি বাড়াবাড়ি রকমের বাড়িয়া যাইতেছে, আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টিও পার হইয়া যাইবে। কন্যা দেখিতে যেমনি হউক কিন্তু তাহার বাবার ব্যাংক ব্যালান্সের আপেক্ষিক গুরুত্ব কম নহে। অতএব কাল বিলম্ব না করিয়া বিবাহের পিড়িতে বসিবার জন্য উদগ্রীব হইয়া উঠিলাম।

আমাদের দেশে যে পুরুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোন মোহ অবশিষ্ট থাকে না। বাঘের সামনে পড়িলে মানুষের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাব সেইরুপ হইয়া উঠে। অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক স্ত্রীর সামনে নতজানু হইয়া থাকিতে তাহারা দ্বীধা করে না। বোধকরি এই কারণেই আমাদের মতো নবীন বেকারদিগের বিবাহের কথা শুনিলে গায়ে কম্প দিয়া জ্বর আসে। সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিশেষ উদ্বেগ জন্মে নাই। বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনে যেন দক্ষিনের হাওয়া বহিতে লাগিল। যে চাকুরি বিহীন বেকার তাহার পক্ষে এই ভাবটা দোষের। কিন্তু কি করিব, কবি বলিয়াছেন, “এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার সময় তার।”

কিন্তু এ কী করিতেছি? এ কি একটা গল্প যে উপন্যাস লিখিতে বসিলাম। এমন বেসুরে যে আমার লেখা শুরু হইবে এ আমি কি জানিতাম? মনে ছিল, কয় বৎসরের বেদনার যে মেঘ কালো হইয়া জমিয়া উঠিয়াছে, তাহাকে নাসিকা ঝাড়িবার মতো করিয়া ব্লগে ঝাড়িয়া ফেলিব। কিন্তু না পারিলাম বাংলায় শিশুপাঠ্য লিখিতে, কারণ তাহা লিখিলে উনি মুখে একখানা মুগ্ধবোধ বসাইয়া দিবেন; আর না পারিলাম কাব্য রচনা করিতে, কারণ তাহাকে দেখিলেই মনের সকল কাব্য মৃত পুষ্পসম ঝরিয়া যায়। সেই জন্যই দেখিতেছি, আমার ভিতরের সদা চঞ্চল বানরটি অট্যহাস্যে আপনাকে আপনি পরিহাস করিতেছে। না করিয়া করিবে কী। তাহার যে অশ্রু শুকাইয়া গিয়াছে।

যাহার সঙ্গে আমার বিবাহ হইয়াছে, তাহার সত্য নামটি দিব না, কারণ সে টের পাইলে আমার খবর হইয়া যাইবে। শোসনের গুতোয় তাহার নাম যে তাম্রপটে অক্ষয় হইয়া রহিয়াছে সেটা আমার ললাট। শত চেষ্টাতেও তাহা মুছিতে পারিব না।

আমার এ লেখা যেমনই হউক তাহার একটা নাম চাই। আচ্ছা তাহার নাম দিলাম হৈমন্তী। রবি'দার হৈমন্তী গল্পকে ফলো করিয়া নাম ধার্য করিলাম।

তৃতীয়বারের মতো বি.এ.-তে ফেল মারিয়া, পড়াশুনোয় ক্ষান্ত দিয়াছি, আমার বয়স তেত্রিশ (অবশ্য সার্টিফিকেটে পঁচিশ) এমন সময়ে আমার বিবাহ হইল। বেকার অবস্থায় বিবাহ, দলের মতে বা দল সংস্কারকের মতে উপযুক্ত কিনা তাহা লইয়া তাহারা হরতাল-কার্ফু ডাকুক, কিন্তু আমি বলিতেছি বেকার অবস্থায় বিবাহ মোটেও সুবিধার নহে।

বিবাহের অরুনোদয় হইল একখানি ফটোগ্রাফের আভাসে। লুকাইয়া রসময় গুপ্ত পড়িতেছিলাম। ঠাট্টার সম্পর্কের এক আত্মীয়া চটিখানি কাড়িয়া লইয়া, হৈমন্তীর ছবিখানি টেবিলে রাখিয়া কহিল, “এই বার সত্যিকারের পড়া পড়ো-- একেবারে ঘাড়মোড় ভাঙিয়া।”

হাল ফ্যাসন অনুযায়ী, সে খোপা বাঁধে নাই, গায়ে গহনাও ঝুলায় নাই কিন্তু ফটোশপের কারসাজিতে তাহার রুপ ফুটিয়াছে ভালই। দেখিয়া আসল চাহারা বুঝিতে পারি নাই।

পঞ্জীকার পাতা উল্টাইতে লাগিল। একসময় আসিয়া পড়িল সেই কুক্ষন। সেদিনের সানাইয়ের প্রত্যেকটি তান আমার মনে বেদনার সুর তুলিতেছে। সেদিনের পর হইতে জীবনের সকল সুখ দুরিভুত হইয়াছে। আহা! আমার সেই তেত্রিশ (সার্টিফিকেটে পঁচিশ) বছরের জীবন যদি অক্ষয় হইয়া থাকিত!!! সেদিনকার বিবাহের সেই হট্টোগোলের মাঝে তাহার হাতখানি যখন আমার হাতে পড়িল তখন আমার মনে হইল, 'পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।' হায়! তখন কি জানিতাম ইহাই আমাকে পাইয়াছে!!!

তাহার পরের কাহিনী আর লিখিতে পারিতেছি না। বেদনা বিধুর সে কাহিনী রবি'দাও লিখিতে পারিবে কি না সন্দেহ, আমিতো তাহার তুলনায় ছারপোকা।

ঐ যে, হৈমন্তী আমার সন্ধান করিতেছে। মনে হয় ঘর ঝাড়ু দিতে বলিবে। ঝাড়ু দিতে অপারগতা প্রকাশ করিলে আমার উপরেই ... । থাক, আর বলিয়া কাজ কী!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ বিকাল ৫:৩৭
৯৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×