আজ ১৫দিন হলো জ্বরে পড়ে আছি, ছাড়ার কোন লক্ষণই দেখছিনা। বগুড়া এক কাজে গিয়ে রোদে ছোটাছুটি করে কিযে জ্বর বাধলো কিছুই বুঝতেছিনা। একটানা পনের দিন জ্বর নিয়ে কত কষ্টে আছি তা শুধু আমিই বুঝতেছি। 101, 103 জ্বর থাকেই। সেই সাথে আর এক সমস্যা কিছুই খেতে পারিনা। প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে অথচ খেতে গেলেই খেতে পারিনা। না খেলে বাঁচবো কেমনে? শরীরে শক্তিই বা পাবো কোথা থেকে? চুলায় রান্না কোন খাবারই রুচি হয়না তা বাড়ির হোক কি রেস্তরার’ই হোক। মুখে দিলেই বমি আসে। একটু একটু করে মুড়ি, চিড়া, কলা খাই সারাদিন। তাও অনেক কষ্টে। সাথে ছোলা বুটের চচ্চরি না কি বলে মা রেধে দেয় তা খাই। মা যে কী দুশ্চিন্তায় আছে আমায় নিয়ে। মা যত্ন না নিলে কবেই যে অক্কা পেতাম। এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শুধু মা’ই দিতে পারে। সারাদিন মাথায় জল দিয়ে দেওয়া, জল পট্টি দেওয়া, খাওয়ানো সব। এতো সীমাহীন ভালোবাসা মা কোথা থেকে পায় হা স্বার্থপর এই দুনিয়ায়??? নিজে আমার জন্য ঘুমাতেও পারেনা। রাতে উঠে উঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা। অথচ সেও অসুস্থ, কিছুদিন আগে তার বড় অপারেশন হয়েছে। মা’র ভালোবাসা বিশাল, সীমাহীন, অকৃত্তিম, নিঃস্বার্থ। মা’র আমি আর আমার ছোট ভাই সবকিছু, তার দুনিয়া। মা আমার মা।
আমার এই জ্বরের জন্য আমি এমন এক ডাক্তারের চিকিৎসা করাচ্ছিলাম যার কাছে বিগত সাত বছরে একবারও চিকিৎসা করাইনি। করাইনি কেননা আমার কাছে মনে হতো সে ডাক্তার হিসেবে উপযুক্ত নয়। ছোট বেলায় ওই ডাক্তারের কাছে যখন যেতাম ফিরে মা-বাবা কে বলতাম “যিনি নিজেই রোগীর সামনে সিগারেট খান তিনি কি চিকিৎসা করাবেন? আমি ওই ডাক্তারের কাছে যাবোনা।” ২০/২৫ বছর হলো সে আমাদের এলাকায় ডাক্তারি করছে। এম.বি.বি.এস. পাস করা, রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে আছেন। তবে তাকে রংপুরে না সারাদিন পীরগঞ্জেই পাওয়া যাবে। ভালোই নাম ডাক আছে তার, রোগীরা সারাদিন তার চেম্বারে ছুটে যায়, ১০০ টাকার ভিজিটের বিনিময়ে চিকিৎসা করায়। আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়, আমরা গেলে ভিজিট নেয়না ফ্রিতে দেখে। তবুও আমি তাকে ডাক্তার হিসেবে যোগ্যই মনে করতে পারছিনা, সাত বছর আগেও অনেক কারণে পারতাম না এখনো না। যদি সে ডাক্তারই হতো আমার জ্বর পনের দিন ধরে চলতো না। কেননা আমি জানি আমি যতই চিকন হইনা কেন অসুখ আমার হয়না বললেই চলে। আর এতোদিন জ্বর থাকার কোন মানেই হয়না। আমি তো চিকন শরীর নিয়ে সুস্থই থাকি সারা বছর। বিগত দুই বছরে আমার জ্বর হয়েছিলো বলেও মনে পরছেনা। ডাক্তার বদলালাম কাল দেখি আর এক ডাক্তার কি করে। আশা করি ভালো চিকিৎসাই পাবো।
রাজু নামে এক ডাক্তার ছিলেন যিনি মারা গেছেন। এম.বি.বি.এস. পাস না করুন তিনি তবে ডাক্তার হিসেবে চমৎকার ছিলেন। জন্মের সময় থেকে তারই চিকিৎসা বেশি করিয়েছি আমি। ওনি আমায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করতেন আর তার চিকিৎসায় ৪/৫দিনেই সেরে উঠতাম। তিনিও ভিজিট নিতেননা।
জ্বরটা রাখতে চাচ্চিনা আর। মা’টা খুব কষ্ট করতেছে। মাকে এতো কষ্টদিতে পারবোনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৪২