somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্গারেট থ্যাচারের চিরবিদায় : সাংঘর্ষিক রাজনীতি ও দেশ বিভক্ত করণের পরিণাম--শফিক রেহমান

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০১৩ সকাল এগারোটায় লন্ডনের সিটি এলাকায় সেইন্ট ক্লিমেন্টস ডেনস থেকে গ্রেট বৃটেনের সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট হিলডা থ্যাচার-এর মরদেহের কফিন নিয়ে সেইন্ট পলস ক্যাথিড্রাল অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে একটি মিছিল। এই কফিনটি ঢাকা থাকবে বিশ্বে সুপরিচিত ইউনিয়ন জ্যাক নামে গ্রেট বৃটেনের পতাকা দিয়ে। কফিনের চারপাশে থাকবে ফুল।

সেইন্ট ক্লিমেন্টস ডেনস থেকে সেইন্ট পলস ক্যাথিড্রাল পর্যন্ত যেতে উনিশ মিনিট সময় লাগবে। মিছিলটি যখন যাবে তখন কাছেই টেমস নদীর ওপরে অবসি'ত লন্ডন বৃজ থেকে মার্গারেট থ্যাচারের প্রতি শ্রদ্ধাসূচক উনিশ বার গান স্যালিউট বা তোপধ্বনি করা হবে। অর্থাৎ, যাত্রার প্রতিটি মিনিটের জন্য একটি তোপধ্বনি হবে। যদি মিছিলটি যেতে বেশি সময় লাগে তাহলে প্রতি মিনিটে একটি করে গান স্যালিউট চলতে থাকবে।

যাত্রা পথে তিনটি মিলিটারি ব্যান্ড ধর্মীয় এবং উচ্চাঙ্গ সুরে বাজনা বাজাবে। সামরিক বাহিনীর সাতশো সদস্য মিছিলে থাকবে। এই জাকজমকপূর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বৃটিশ সরকারের খরচ হবে এক কোটি পাউন্ড বা বাংলাদেশি প্রায় ১২০ কোটি টাকা। বৃটেনের বর্তমান মন্দাবস্থায় এত টাকা খরচের জন্য সরকারের সমালোচনা হয়েছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই খরচের কিছু অংশ বহন করতে চেয়েছে মার্গারেট থ্যাচার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা থ্যাচার ফাউন্ডেশন। যে সামরিক শ্রদ্ধা জানানো হবে সেটা এর আগে জানানো হয়েছিল বর্তমান রানী এলিজাবেথের মা এবং পৃন্সেস ডায়ানা-র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ে। বিরোধী দলের অন্যতম নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডেভিড ব্লাংকেট বলেছেন, উইনস্টন চার্চিলের পরে রাজপরিবারের বাইরে কোনো ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এমন সামরিক করন হয়নি।

বুধবার সেইন্ট পলস গির্জার ভেতরে থাকবেন ২,৫০০ আমন্ত্রিত ব্যক্তি যারা আসবেন বিভিন্ন দেশ থেকে। আমেরিকায় যে চার সাবেক প্রেসিডেন্ট জীবিত আছেন (জিমি কার্টার, বুশ সিনিয়র, জর্জ ডাবলিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন) এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ব্যারাক ওবামা-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন' বিভিন্ন কারণে তারা কেউই আসবেন না। তবে ভবিষ্যত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রূপে বিবেচিত হিলারি ক্লিনটন উপসি'ত হতে পারেন ওবামা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।


বৃটিশ মন্ত্রীসভায় একজনই পুরুষ

সেইন্ট পলস গির্জার বাইরে থ্যাচারের মরদেহ মিছিলের সময়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা এবং শেষ ধিক্কার জানানোর জন্য কতো মানুষ থাকবে তা নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃটিশ সরকার বিব্রত থেকেছে এবং পুলিশ সতর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রূপে মার্গারেট থ্যাচার ছিলেন উগ্রপন্থী। সভিয়েট ইউনিয়নে তার টাইটেল হয়েছিল আয়রন লেডি বা লৌহ মানবী । মার্গারেট থ্যাচার ছিলেন অনমনীয়। তিনি নিজেই নিজের সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, দিস লেডি ইজ নট ফর ইউ-টার্ন। অর্থাৎ, এই মহিলা কখনোই উল্টো দিকে ঘুরে যাবে না।

বস'ত, মার্গারেট থ্যাচার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধভাবে তার পথেই হেটেছিলেন এবং অনেক সময়ে একাই হেটেছিলেন। তার কিছু কর্মকাণ্ডে তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের সম্মতি না থাকলেও তিনি ছিলেন তার লক্ষ্যে অটল। তার তীক্ষ্ণ এবং কর্কশ বাক্যবাণের ভয়ে তার সহযোগীরা নিজেদের মত প্রকাশে ভীত ছিলেন। এসব কারণে বলা হতো, মার্গারেট থ্যাচারের মন্ত্রীসভায় মাত্র একজনই পুরুষ আছে এবং সেটা থ্যাচার।


বিতর্কের উর্ধে চারটি তথ্য

তবে মার্গারেট থ্যাচার সম্পর্কে চারটি তথ্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।

এক. বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান, দশ নাম্বার ডাউনিং স্টৃটে একমাত্র নারী প্রধামন্ত্রী ছিলেন তিনি, ৪ মে ১৯৭৯ থেকে ২৮ নভেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে এগারো বছর। তার আগে বা পরে আর কোনো নারী বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।

দুই. বৃটেনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পরপর তিনটি নির্বাচনে তার দলকে বিজয়ী করেছিলেন।

তিন. থ্যাচার ছিলেন রূপান্তরকারী নেত্রী। তিনি তার দেশ, তার দল কনজারভেটিভ পার্টি, এমনকি তার বিরোধী দল লেবার পার্টিকেও বদলে দিয়েছিলেন।

চার. উইনস্টন চার্চিলের পরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী রূপে তিনি বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।


মুদির দোকানীর মেয়ে

মার্গারেট থ্যাচার যে এত সুদূরপ্রসারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন সেটা ছিল কল্পনাতীত। কারণ, প্রথমত তিনি ছিলেন নারী এবং গত শতাব্দির সূচনায় বৃটেনে রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা ছিল সীমিত। দ্বিতীয়ত তার জন্ম হয়েছিল মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার পিতা অ্যালফ্রেড রবার্টস কোনো অভিজাত বংশের ছিলেন না। সেই সময়ে কনজারভেটিভ পার্টি, যেটি টোরি পার্টি নামেও পরিচিত, সেখানে ঠাই পেতেন অভিজাত বংশীয়রা অথবা উচ্চবিত্ত পরিবারের ব্যক্তিরা।

অ্যালফ্রেড রবার্টস ছিলেন মুদির দোকানদার। মধ্য ইংল্যান্ডে লিংকনশায়ারে গ্র্যানথাম নামে একটি ছোট শহরে তার দুটি মুদির দোকান ছিল। তিনি ও তার স্ত্রী বিয়েটৃস ইথেল তাদের দুই মেয়ে, মিউরিয়েল (১৯২১-২০০৪) ও মার্গারেটকে নিয়ে থাকতেন রেল লাইনের পাশে একটা ছোট বাড়িতে। অ্যালফ্রেড রবার্টস সচ্ছল ছিলেন কিন' ধনবান ছিলেন না। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন লিবারাল বা উদারপন্থী দলের কাছাকাছি এবং একবার গ্র্যানথামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

স্কুল জীবনে মার্গারেট বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। পড়াশোনার বাইরে হকি খেলা, সাতার, পিয়ানো বাজনা ও কবিতা আবৃত্তিতে তিনি সুনাম অর্জন করেন। স্কুল জীবনরে শেষে মার্গারেট অক্সফোর্ডের সোমারভিল কলেজে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পান এবং চার বছর পরে ১৯৪৭-এ তিনি কেমিস্টৃতে সেকেন্ড ক্লাস অনার্স ডিগ্রি পান। এরপর মার্গারেট কোলচেস্টার শহরে বিএক্স প্লাস্টিকস কম্পানিতে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কাজ শুরু করেন। বছর খানেক পরে আইসিআই নামে একটি মালটিন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরির অ্যাপ্লিকেশন করে ব্যর্থ হন। সেই সময়ে তার ইন্টারভিউ নেয়ার পরে তার সম্পর্কে আইসিআইয়ের কর্মকর্তারা লিখেছিলেন, একগুয়ে, জেদি এবং নিজের মতামত যে সঠিক সে বিষয়ে বিপজ্জনকভাবে দৃঢ়চেতা।

ধারনা করা হয়, একটি নামী কম্পানিতে একটি ভালো চাকরি পেতে ব্যর্থ হবার পর মার্গারেট রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন এবং লন্ডনে ডার্টফোর্ড এলাকায় থাকা শুরু করেন। জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি জে. লায়ন্স অ্যান্ড কম্পানিতে রিসার্চ কেমিস্ট পদে কাজ নেন। ১৯৫০ এবং ১৯৫১-র সাধারন নির্বাচনে তিনি ডার্টফোর্ড থেকে টোরি প্রার্থী রূপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুবারই তিনি লেবার প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেও ভোটের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারেন। ১৯৫১-তে তিনি ডেনিস থ্যাচারকে বিয়ে করেন। ডেনিস আগের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। স্বামীর অর্থায়নে মার্গারেট আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৫৩-তে ব্যারিস্টার হন। ওই বছরেই তার দুই যমজ সন্তান, কন্যা ক্যারল এবং পুত্র মার্ক -এর জন্ম হয়।

১৯৫৫-র সাধারন নির্বাচনে মার্গারেট প্রার্থী হননি। সেই বছরের শেষের দিকে একটি উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি পরাজিত হন। তখন থেকে মার্গারেট একটি নিরাপদ টোরি আসন খুজতে থাকেন।



টোরিদের নিরাপদ এলাকা ফিঞ্চলি

উত্তর লন্ডনে ফিঞ্চলি এলাকাটি ছিল টোরি দলের জন্য নিরাপদ। এই এলাকায় উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা বাস করেন। ৮ অক্টোবর ১৯৫৯ -এর নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে মার্গারেট থ্যাচার ফিঞ্চলির এমপি নির্বাচিত হন। ৯ এপৃল ১৯৯২ পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে বত্রিশ বছর যাবৎ তিনি এই এলাকার এমপি ছিলেন।

সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে উত্তরে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে উচু ভূমিতে অবসি'ত ফিঞ্চলি-র মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে তিনটি শীর্ণ খাল যদিও একটিকে বলা হয় ব্রেন্ট নদী। এখানে রিজেন্টস পার্ক এভিনিউ, ব্যালার্ডস লেইন ও হাই রোড নামে চওড়া রাজপথ আছে। ব্যালার্ডস লেইনেই ছিল মার্গারেট থ্যাচারের এমপি অফিস বা সার্জারি। এই অফিস থেকে হাজার গজ দূরে অ্যাডিংটন ড্রাইভে ছিল আমাদের বাড়ি। আশির দশকে আমাদের বাড়িতে বারো দিনের ব্যবধানে দুইবার চুরি হওয়ার খবর আঞ্চলিক পত্রিকায় পড়ে মার্গারেট থ্যাচার এসেছিলেন খোজখবর নিতে। থ্যাচার আমাদের উপদেশ দিয়েছিলেন আমরা যেন সব মূল্যবান সামগ্রী, যেমন- অলংকার, রিস্টওয়াচ, ফাউনটেইন পেন প্রভৃতিতে নাম খোদাই করে রাখি। তার মতে এসব চুরি হলে যদি কোনোদিন উদ্ধার হয় তাহলে প্রকৃত মালিকের কাছে পৌছানো সম্ভব হবে।



ফিঞ্চলি এলাকায় ঢোকার মুখে রিজেন্টস পার্ক রোডে আছে লা ডেলিভারেন্স (মুক্তি) নামে ব্রঞ্জের একটি কালো নগ্ন নারী মূর্তি যার হাতে উচু করে ধরা আছে একটি তলোয়ার। এই মূর্তিকে অনেকে নেকেড লেডি (Naked Lady) বলেন। এটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ফিঞ্চলিবাসীর অংশ নেয়ার প্রতীক। প্রায় প্রতিদিন সকালে এখনো এই নেকেড লেডির পদতলে ফুলের তোড়া নিবেদিত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে নিহত প্রথম বৃটিশ সেনা, জর্জ পার, ছিলেন ফিঞ্চলির বাসিন্দা। ফিঞ্চলির আরো দুটি ল্যান্ডমার্ক হলো ১৯৩০-এর দশকে নির্মিত ফিনিক্স সিনেমা হল এবং দি টু ব্রাদার্স নামে বিখ্যাত ফিশ অ্যান্ড চিপসের রেস্টুরেন্ট।

ফিঞ্চলিতে ধনবান ইহুদি, ইনডিয়ান, পাকিস্তানিরা এবং ইরানিরা বাস করেন। এখানে বাস করেছিলেন কালজয়ী ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স, কমেডি মুভি অভিনেতা পিটার সেলার্স, স্থায়ী ব্লু-ব্ল্যাক কালির আবিষ্কারক হ্যারি স্টিফেন্স, কমেডিয়ান স্পাইক মিলিগান, পপ গায়ক জর্জ মাইকেল, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক ও সুভাষ চন্দ্র বসু-র প্রামাণ্য জীবনী লেখক সিতাংশু দাশ প্রমুখ। এখানেই বাস করতেন বাঙালি ব্যাংকার আবদুর রশিদ (যিনি পাকিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাংক, ব্যাংক অফ পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন), আবুল ফতেহ (ডিপ্লম্যাট ও অ্যামবাসডর যিনি মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন), রাজিয়া খান আমিন (সাহিত্যিক), আনোয়ারুল আমিন (আন্তর্জাতিক ব্যাংকার), মোকাম্মেল হক (বুরোক্র্যাট), তালেয়া রেহমান (বিবিসি ও লন্ডনের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট), ব্যারিস্টার ভিখারুল ইসলাম চৌধুরী (ব্র্যাকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) সৈয়দ রেফাত আহমেদ (বর্তমানে বাংলাদেশে সিনিয়র বিচারপতি) প্রমুখ। সেপ্টেম্বর ১৯৭১ থেকে আমি এই এলাকায় ছিলাম এবং বিভিন্ন কারণে মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছিল।



থ্যাচারের সহানুভূতি ও সাহায্য

প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে জুলাই ১৯৮৬-তে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পরে তিনি আমাকে বাধ্য করেন লন্ডনে চলে যেতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৫ এপৃল ২০১৩-তে এনটিভি-তে প্রচারিত একটি ইন্টারভিউতে এরশাদ মিথ্যা বলেন, আমাকে স্বৈরাচারী বলা হয়, কিন' আমি কোনো পত্রিকা নিষিদ্ধ করিনি।

আমি ফিঞ্চলিতে ফিরে গিয়ে চিন্তা শুরু করি কিভাবে লন্ডনে আবার একটি নতুন জীবন শুরু করবো। নিষিদ্ধ হবার সময়ে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের সার্কুলেশন ছিল প্রায় দেড় লক্ষ। সেই উচ্চতায় পৌছানোর পরে লন্ডনে দুই-এক হাজার সার্কুলেশনের কোনো সীমিত প্রভাবের পত্রিকা প্রকাশনায় আমি আগ্রহী ছিলাম না। সেই সময়ে বৃটেনে টেলিভিশন সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় চললেও কোনো বেসরকারি রেডিও স্টেশন ছিল না। বস'ত পৃথিবীর বহু দেশেই প্রাইভেট টিভি প্রথমে এসেছে। প্রাইভেট রেডিও পরে এসেছে। বাংলাদেশেও তাই।

তাই ছয় মাস পরে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭-তে আমি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চেষ্টা করি। কিন' ঢাকা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে আটক করে রাখে এবং আড়াই দিন পরে লন্ডনে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনার পরে মার্গারেট থ্যাচারকে এলাকার এমপি রূপে (তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং যিনি উচ্চকণ্ঠে গণতন্ত্র ও পত্রপত্রিকার স্বাধীনতার কথা বলতেন) অনুরোধ করি তিনি যেন আমাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে এবং সেখানে নিরাপদে থাকতে পদক্ষেপ নেন। যেহেতু আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি সেহেতু এটা করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না বলার পরে আমি তাকে অনুরোধ করি বৃটেনে একটি বেসরকারি রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স যেন তিনি আমাকে দেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তিনি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন।

পরবর্তী বছরে যখন বৃটিশ সরকার চারটি ভিন্ন সেক্টরে রেডিও স্টেশনের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান করে তখন আমি পনেরটি ভাষায় কমিউনিটি রেডিও খোলার জন্য আবেদন করি। প্রায় চল্লিশটি কম্পানি এই সেক্টরে টেন্ডার পেশ করে। কিন' আমার মনে একটা ক্ষীন আশা ছিল যে ওইসব কম্পানি যতই বড় হোক না কেন শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবে আমার প্রতিষ্ঠিত স্পেকট্রাম রেডিও। কারণ বিবিসিসহ অন্যান্য সাংবাদিকতায় আমার অভিজ্ঞতা ছিল, প্রয়োজনীয় ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্টের জন্য চার্টার্ড একাউন্টেন্ট রূপে আমার যোগ্যতা ছিল এবং সর্বোপরি আমি ছিলাম বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার ভোটার।

আমার অনুমান সত্যি হয়েছিল। আশা পূর্ণ হয়েছিল। স্পেকট্রাম রেডিও লাইসেন্স পেয়েছিল। তবে মার্গারেট থ্যাচার একটা প্রতিদান চেয়েছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন রেডিও স্টেশনটির অফিস যেন আমি লাইসেন্স প্রাপ্ত অপর তিনটি রেডিও স্টেশনের মতো সেন্ট্রাল লন্ডনে স্থাপন না করে তার নির্বাচনী এলাকায় স্থাপন করি।

কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন তার এলাকায় যেন মানুষের কর্ম সংস্থান হয়। তাকে বলেছিলাম তার অনুরোধ রাখবো তবে আমিও একটি পাল্টা অনুরোধ করেছিলাম। রেডিও স্টেশনের জন্য আমি তার নির্বাচনী এলাকায় কোনো সরকারি ভবনে শস্তায় প্রয়োজনীয় ফ্লোর স্পেস চেয়েছিলাম। তাই হয়েছিল। ব্রেন্ট ক্রস শপিং সেন্টারের বিপরীতে এনডেভর হাউস থেকে ১৯৯০-এ স্পেকট্রাম রেডিও তার যাত্রা শুরু করেছিল।

ডিসেম্বর ১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১-এর সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া হন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এই পদে তিনি প্রথম বিদেশে যান আফৃকায় জিমবাবুয়ে-তে হারারে কমনওয়েলথ সম্মেলনে। ফেরার পথে লন্ডন হিলটন হোটেলে থাকার সময়ে তাকে আমি প্রথম ইন্টারভিউ করি। এর মাসখানেক পরে লন্ডনে আসেন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা এবং থাকেন বেকার স্টৃটে একটি ফ্ল্যাটে। আমি তারও ইন্টারভিউ তখন নিয়েছিলাম।

স্পেকট্রাম রেডিওর প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর এবং সিইও রূপে এই উপমহাদেশের বহু সেলিবৃটিকে ইন্টারভিউ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিলেন, পণ্ডিত রবি শংকর, অমিতাভ বচ্চন, অনিল কাপুর, মিঠুন চক্রবর্তী, সলিল চৌধুরী, ইমরান খান প্রমুখ। এ সবই সম্ভব হয়েছিল কারণ মার্গারেট থ্যাচার আমাকে রেডিও প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন। ১৯৯২-এ আমি স্পেকট্রাম ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসি এবং এপৃলে যায়যায়দিন পুনঃপ্রকাশ করি। ওদিকে স্পেকট্রাম এনডেভর হাউস ছেড়ে দক্ষিণ লন্ডনে চলে যায় এব্যং এখনো চলছে।



ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়

আমার মিডিয়া জীবনের উত্থান-পতনের সঙ্গে সবচেয়ে কাছাকাছি যে দুই ব্যক্তি জড়িয়ে ছিলেন তাদের দুজনারই পতন ঘটে মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে! বৃটেনে ২৮ নভেম্বর ১৯৯০ মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। আর বাংলাদেশে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রেসিডেন্টের পদ ত্যাগ করেন। এরশাদ পদ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন গণ আন্দোলনের মুখে। মার্গারেট থ্যাচার পদ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন তারই দলের এমপিদের বিদ্রোহের মুখে। অর্থাৎ, কোনো সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে থ্যাচারকে বিদায় নিতে হয়নি।

থ্যাচারের স্বৈরতান্ত্রিক ভাবে সরকার পরিচালনা স্টাইল, সাংঘর্ষিক রাজনীতি, দেশ বিভক্তিকরনের রাজনীতি এবং মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের উপেক্ষার ফলে টোরি পার্টির মধ্যে বিদ্রোহের দানা বাধতে শুরু করেছিল। আসন্ন পরবর্তী সাধারন নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হবে এই আশংকায় টোরি এমপিরা চাইছিলেন থ্যাচারকে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে। নভেম্বর ১৯৯০-এ স্পেনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে যান থ্যাচার। এই সময়ে টোরি পার্টির অধিকাংশ এমপি এবং দলের অন্যান্য নেতারা পার্টির চেয়ারপার্সন পদে থ্যাচারকে চ্যালেঞ্জের সিদ্ধান্ত নেন। এটা থ্যাচারের জন্য অপমানজনক হলেও তিনি পার্টির চেয়ারপার্সন পদের নির্বাচনে অংশ নেন। প্রথম রাউন্ড নির্বাচনে থ্যাচার নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন এবং তিনি অনুমান করেন পরবর্তী রাউন্ডে তার বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে কোনো একজন প্রার্থীকে ভোট দিলে তিনি হেরে যাবেন। থ্যাচার তখন পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় সাড়ে এগারো বছর পরে তিনি যখন দশ নাম্বার ডাউনিং স্টৃট ছেড়ে চলে যান তখন তার দুই চোখে ছিল পানি। টিভিতে তার সেই ছবি তখন বিশ্বে বহুল প্রচারিত হয়েছিল। ছবিটা দেখে লতা মঙ্গেশকরের একটি বিখ্যাত গান তুমি পাথর চোখের যে বৃষ্টি আমার মনে পড়েছিল। সেই লৌহমানবীর চোখেও বৃষ্টি দেখেছিলাম এবং আবারো সেই সত্যটা বুঝেছিলাম - কারো ক্ষমতাই চিরস'ায়ী নয়।



বদলে দিয়েছিলেন বৃটেন

তবে এটাও সত্য যে, ভালো এবং মন্দ উভয় দিকেই, মার্গারেট থ্যাচার বৃটেনকে বদলে দিয়ে গিয়েছেন। এই পরিবর্তিত দিকগুলো হলো:

১. বৃটেনের ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র লন্ডনের মধ্যে একটি বিশেষ এলাকা যেটি সিটি নামে পরিচিত সেখানে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন থ্যাচার ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যেই। তিনি এক্সচেঞ্জ কনট্রোল তুলে নেন এবং বিদেশি পূজি আহবান করেন। লন্ডনের ডকল্যান্ডস -এ ক্যানারি হোয়ার্ফ-এ গড়ে ওঠে ঝকঝকে হাইরাইজ সব বিলডিং এবং সেখানেই হয় নতুন ফিনানশিয়াল সেন্টার। বিশ্বের পূজি ধাবিত হতে থাকে লন্ডনের নতুন সিটির-র দিকে।

২. টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইস্পাত, মোটর ইনডাস্টৃ, প্লেন ইনডাস্টৃ, এয়ারপোর্ট প্রভৃতি খাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেন থ্যাচার। তিনি নির্দেশ দেন, এসব ইনডাস্টৃ পরিচালনার জন্য নতুন গঠিত বেসরকারি কম্পানিগুলোর মালিকানা প্রথমে দিতে হবে সাধারন মানুষকে। থ্যাচার বলেন, প্রাইভেটাজাইশনের মাধ্যমে জনগনকে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার এই নির্দেশের ফলে সেই সময়ে আমিও টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, এয়ারপোর্ট প্রভৃতি কম্পানির শেয়ার কিনতে পেরেছিলাম।

৩. রাজনীতিতে আমেরিকান স্টাইলে বিজ্ঞাপনের বহুল ব্যবহার চালু করেন থ্যাচার। তিনি সাচি অ্যান্ড সাচি নামে বিখ্যাত অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মকে টোরি পার্টি ও নিজের প্রচারের জন্য নিয়োগ করেন। এই ফার্মের পরামর্শে থ্যাচার নিজের বাচনভঙ্গি, ভাষা, শব্দ সম্ভার প্রভৃতি পরিবর্তনের জন্য ইলোকিউশন লেসন নেন। বাংলাদেশে যেসব শীর্ষ পলিটিশিয়ান প্রতিনিয়ত লাশ, খায়েশ, গদি প্রভৃটি শব্দ ব্যবহার করেন কিংবা হেফাজতীরা লেঙ্গুর গুটাইয়া পলাইয়া গেছে জাতীয় বাক্য ব্যবহার করেন, তারা থ্যাচারের দৃষ্টান্ত অনুসরন করে মার্জিত, ভদ্র ও শালীন হতে পারেন। থ্যাচার নিজের চেহারাও বদলে ফেলেছিলেন কসমেটিক সার্জারি করে। বাংলাদেশের বহুরূপী পলিটিশিয়ানরা সেই দৃষ্টান্তও অনুসরন করতে পারেন।

৪. থ্যাচার তার ভোট ব্যাংক গড়ার জন্য দক্ষিণ ইংল্যান্ডে বাসবাসকারী ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। ফলে উত্তর ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড উপেক্ষিত হয় এবং দেশের উত্তর অঞ্চলের ইনডাস্টৃগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। পরবর্তী সময়ে সার্ভিস সেক্টর এবং সিটি-তে রমরমা অবস্থার ফলে সামগ্রিকভাবে দেশ উন্নতির দিকে গেলেও বৃটেন তার উত্তর অঞ্চলের ইনডাস্টৃয়াল বেইস চিরতরে হারায়।

৫. থ্যাচার কঠিন হাতে বৃটেনের শ্রমিক আন্দোলন দমন করেন। ট্রেন ইউনিয়নের ক্ষমতা ও ভূমিকা সংকুচিত করেন। ১৯৮৪-৮৫ তে খনি শ্রমিকদের হরতাল দমনের মাধ্যমে থ্যাচার জানিয়ে দেন, দেশ চালাবে সরকার - ট্রেড ইউনিয়নগুলো নয়। এখন বৃটেনে ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিক সদস্য সংখ্যা ১৯৮০-র তুলনায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

৬. আগে বৃটেনে দোকানপাটগুলো সকাল নটা থেকে বিকেল পাচটা পর্যন্ত খোলা থাকতো এবং সপ্তাহে দেড় দিন বন্ধ থাকতো। থ্যাচার আইন করে দোকানপাট তাদের মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখার অনুমতি দেন।

৭. উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সমঝোতায় এগিয়ে যান থ্যাচার গুড ফ্রাইডে শান্তি চুক্তি ১৯৯৮ -এর মাধ্যমে।

৮. প্রধানমন্ত্রী হবার আগে থ্যাচার এক সময়ে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তখন বৃটেনের স্কুলে ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য বিনা দামে দুধ দেওয়া হতো। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে থ্যাচার এই রীতি বন্ধ করে দেওয়ায় তার নাম হয়েছিল, থ্যাচার, দি মিল্ক স্ন্যাচার (Snatcher), অর্থাৎ, দুধ ছিনতাইকারী থ্যাচার। প্রধানমন্ত্রী হবার পরে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। স্কুলের হেডমাস্টার ও পরিচালকবৃন্দ নিয়োগে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সংকুচিত করা হয়।

৯. ফুটবল ম্যাচে দর্শকদের উচ্ছৃংখলতা ও সহিংসতা কমানোর জন্য ফুটবল দর্শক আইন ১৯৮৯, পাস হয়। দাড়িয়ে থাকার বদলে স্টেডিয়ামে সকল দর্শকের বসে খেলা দেখার জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ফলে কালক্রমে বৃটেনে অল-সিটার স্টেডিয়াম হয়। বাংলাদেশে যারা ইংল্যান্ডের পৃমিয়ার লিগের ম্যাচগুলো দেখছেন তারা নিশ্চয়ই এটা লক্ষ্য করছেন।

১০. মার্গারেট থ্যাচার ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন বা ই-ইউ-এর সুবিধা নিতে চাইলেও ই-ইউ-এর সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন নি। তিনি বৃটেনের অস্তিত্ব এবং মুদ্রা (পাউন্ড)-কে ই-ইউ এবং ইওরো মুদ্রার মধ্যে বিলীন করে দিতে চাননি। ফলে এখনো বৃটেনে বিতর্ক চলছে ই-ইউতে তাদের থাকা নিয়ে।

১১. দেশের জনমত গঠনে থ্যাচার সাহায্য নিয়েছিলেন মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক-এর। দি টাইমস, দি সানডে টাইমস, সান, নিউজ অফ দি ওয়ার্ল্ড প্রভৃতি মারডক মালিকানাধীন পত্রিকাগুলো থ্যাচার তথা টোরি পার্টিকে ক্ষমতায় রাখতে বড় সাহায্য করেছিল। যেমন এখন বাংলাদেশে প্রায় সব মিডিয়াই আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করছে।

১২. হাউজিং আইন ১৯৮০ পাসের মাধ্যমে থ্যাচার সরকারি ফ্ল্যাট ও বাড়িগুলো পাবলিকের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এর ফলে পরবর্তীকালে বৃটেনে ফ্ল্যাট ও বাড়ির দাম ৩০% বেড়ে যায় এবং হাউজিং সঙ্কট এখনো চলছে। বৃটেনের গর্ব ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা ব্যবস'াকে থ্যাচার সংকুচিত করেন।

১৩. দক্ষিণ আমেরিকায় ফকল্যান্ডস দ্বীপ বৃটেন তার নিজের মালিকানায় রাখার জন্য আর্জেন্টিনার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে অবশ্যম্ভাবী রূপে বৃটেন বিজয়ী হয়। ফলে থ্যাচারের জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং বৃটিশ সেনাবাহিনীর সম্মান বাড়ে। কিন' এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে গালফ, কসোভো, আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধে বৃটেন জড়িয়ে পড়ে এবং তাতে নিহত হয় বহু বৃটিশ সেনা।

১৪. ফকল্যান্ডস যুদ্ধের একটি ভালো দিক ছিল যে আর্জেন্টিনাতে সেনা শাসনের অবসান ঘটে। অন্যদিকে সভিয়েট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরবাচেভ-এর সঙ্গে থ্যাচারের সুসম্পর্ক পূর্ব ইওরোপে এবং সভিয়েট ইউনিয়নে কমিউনিস্ট শাসন অবসানে বড় ভূমিকা পালন করে। কিন' সাউথ আফৃকাতে কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিকামী নেতা নেলসন ম্যানডেলা-কে থ্যাচার সন্ত্রাসী উপাধি দিয়েছিলেন। এসবের তাৎপর্য এই যে থ্যাচার বিশ্ব রাজনীতিতে নন্দিত ও নিন্দিত, উভয়ই ছিলেন।

১৫. বৃটেনে সাংঘর্ষিক রাজনীতি অনুসরণ করে থ্যাচার দেশকে বিভক্ত রেখেছিলেন। একদিকে তার আমলে বেকার সংখ্যা ত্রিশ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চল ও লন্ডনের সিটিতে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছিল। একদিকে তিনি ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে ধনীদের সহায়ক হয়েছিলেন। অন্যদিকে পোল ট্যাক্স বসিয়ে গরিবদের ক্ষুব্ধ করেছিলেন। তার আমলে শোষিত ও বঞ্চিত বৃটিশরা এসব ভুলে যায় নি। সেই সময়ে যারা বেকার ছিল তাদের সন্তানরা এখন চল্লিশের কোঠায় এবং তারাই এখন সম্মিলিতভাবে থ্যাচারকে ধিক্কার জানাচ্ছে।



থ্যাচারের মৃত্যুতে উল্লাস

১৯৯০-এ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার পর মার্গারেট তার স্বামী ডেনিসকে নিয়ে দক্ষিণ লন্ডনে ডালউইচ -এ বসবাস করতে থাকেন। দি ডাউনিং স্টৃট ইয়ার্স নামে একটি আত্মজীবনী লেখায় মনোনিবেশ করেন। ২০০২-এ তার একটি ছোট স্ট্রোক হয়। এরপর থেকে তিনি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তির রোগে ভুগতে থাকেন। ৫২ বছর সুখী দাম্পত্য জীবনের পর ২০০৩-এ ডেনিস ক্যানসার রোগে মারা যাওয়ার পরে মার্গারেট একা হয়ে পড়েন। আরো অসুস' হয়ে পড়েন। তার মেয়ে ক্যারল জানান, এক পর্যায়ে মার্গারেট বাক্যের শেষে ভুলে যাচ্ছিলেন বাক্যের প্রথমে কি বলেছিলেন। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি ভুলে যান যে তার স্বামী মৃত। সেবা শুশ্রুযার সুবিধা ও নিরাপত্তার কারণে মার্গারেট থ্যাচার জীবনের শেষ কটি দিন লন্ডনের রিৎস হোটেলে কাটান। সেখানেই ৮৭ বছর বয়সে ১৩ এপৃল ২০১৩-তে তিনি মারা যান।

তার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হবার পরপরই গ্লাসগো, লিভারপুল, লন্ডনসহ বৃটেনের বিভিন্ন শহরে কিছু মানুষ আনন্দ উল্লাস করে। বিভিন্ন স্থানে পথ পার্টি বা স্টৃট পার্টি হয়। মানুষ পরষ্পরকে শ্যামপেইন খাওয়ায়। নাচে। একটি গান, ডিং ডং! দি উইচ ইজ ডেড অর্থাৎ ডিং ডং! ডাইনিটা মারা গেছে, দ্রুত পপ চার্টের লিস্টে দুই নাম্বার পজিশনে পৌছায়। ফুটবল ম্যাচে দর্শকদের একটি অংশ গানটি গায়।

থ্যাচারের মৃত্যুতে উল্লাসকারীরা তাদের ব্যানারে লেখে :

ইউ ডিড নট কেয়ার

হোয়েন ইউ লেড।

উই ডোন্ট কেয়ার

দ্যাট ইউ আর ডেড।

অর্থাৎ, তুমি যখন দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলে তখন আমাদের কথা ভাবোনি। এখন তুমি মৃত। আমরা তোমার কথা ভাবি না।

লন্ডনের দক্ষিণে বৃক্সটন এলাকায় সারা রাত জুড়ে পার্টি চলে। সেন্ট্রাল লন্ডনে ট্রাফালগার স্কোয়ারে প্রায় ৩,০০০ থ্যাচার বিরোধীদের নাচ চলে। তাদের পাহারা দেওয়ার জন্য উপসি'ত ছিল ১,৭৫০ পুলিশ। লিভারপুলের পথে গান হয়, লেটস অল ডু দি কংগা, থ্যাচার ইজ এ গনার (এসো সবাই কংগা নাচি, থ্যাচার গেছে চলে)।

ফেইসবুকে ৩,০০০ ব্যক্তির ম্যাগিজ গুড রিডান্স পার্টি-র উদয় হয়েছে। ম্যাগি অর্থাৎ মার্গারেটের সংক্ষিপ্ত নাম। ম্যাগি মরে যাওয়ায় বাচা গেছে পার্টি উদ্যোগ নিয়েছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনে আরো অশ্রদ্ধা জানানোর জন্য। এতে বৃটিশ সরকার বিব্রত হচ্চে। রুচিবান ব্যক্তিরা এই ধরনের আচরন প্রকাশে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন। কিন' লিবার্টি সংস্থার ডিরেক্টর শমি চক্রবর্তী বলেছেন, এটা কুরুচির পরিচায়ক হলেও বুঝতে হবে যে থ্যাচারের মৃত্যুটা একটি রাজনৈতিক ঘটনা।



বাংলাদেশে একই অবস্থা

বৃটিশ মিডিয়ার সমালোচনা করে রেসপেক্ট পার্টির এমপি জর্জ গ্যালোওয়ে (যিনি এক সময়ে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের এমপি ছিলেন এবং বাংলাদেশে এসেছিলেন) বলেন, মনে রাখতে হবে লেবার পার্টির নেতা হ্যারল্ড উইলসন চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। লেবার পার্টির আরেক নেতা ক্লিমেন্ট অ্যাটলি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত বৃটেনকে পুনর্গঠিত করেন। ... উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে মার্গারেট থ্যাচারের তুলনা করাটা খুবই হাস্যকর। চার্চিল এই দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিলেন। আর থ্যাচার এই দেশের যেটা ভালো সেটা ধ্বংসের সব চেষ্টা করেন। তিনি বৃটেনের শিল্প উৎপাদন ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ধ্বংস করেন। তার ফলেই বৃটেনের বর্তমান দুর্দশা। এই দেশের মানুষ খুব রেগে আছে। মানুষের মনের এই অবস্থা বৃটিশ টিভি এবং বিবিসি দেখলে বোঝা যাবে না। জানা যাবে না।

বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে, এই দেশের পত্রপত্রিকা (নয়া দিগন্ত বাদে) পড়ে এবং এই দেশের টিভি (দিগন্ত টিভি বাদে) দেখে জর্জ গ্যালোওয়ে এখন বাংলাদেশে এলে হয়তো একই রকম মন্তব্য করতেন ।

বুধবার যতোই এগিয়ে আসছে ততোই মৃত থ্যাচার বিরোধিতা বাড়ছে। মেট্রপলিটান পুলিশ আগাম সতর্কতা স্বরূপ বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করেছে তারা যেন সত্বর যোগাযোগ করে। কিছু ব্যক্তি ও কিছু সংস্থা ইতিমধ্যে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দিয়েছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনে তারা কি করবে। একটি গ্রুপ জানিয়েছে, থ্যাচারের কফিন মিছিল যখন যাবে তখন তারা পথের দুই দিকে কফিনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাড়াবে। পুলিশ আশংকা করছে তাদের এই পশ্চাৎপৃষ্ঠ প্রদর্শন হয়তো না নগ্ন পশ্চাদ্দেশ প্রদর্শনে রূপান্তরিত হতে পারে।

মার্গারেট থ্যাচার অনুসৃত সাংঘর্ষিক রাজনীতি ও দেশ বিভক্তকরণ নীতির পরিণামে বৃটিশ যুক্তরাজ্য আর যুক্ত না-ও থাকতে পারে। রাজনৈতিক পন্ডিত উইল হাটনের মতে টোরি পার্টি আর এখন নিজেদের জাতীয় পার্টি রূপে দাবি করতে পারে না। এটা হয়ে গেছে আঞ্চলিক পার্টি। যার ফলে বৃটেনের উত্তর অঞ্চলের বহু শহরে কোনো টোরি কাউন্সিলর এখন নেই। যার ফলে, স্কটল্যান্ড থেকে মাত্র একজন টোরি এমপি নির্বাচিত হতে পেরেছে। অচিরেই স্কটল্যান্ডে ভোটাভুটি হবে এবং স্কটিশরা সি'র করবে তারা ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে কি না। সেক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন স্কটল্যান্ড একটি স্বাধীন দেশ রূপে আবির্ভূত হবে।



বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে কি হবে?

এখন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে চলছে সাংঘর্ষিক রাজনীতি এবং দেশ বিভক্ত করণের প্রক্রিয়া। এক. উত্তরে চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে দক্ষিণে ফটিকছড়িতে ঘটেছে ব্যাপক সহিংসতা। কতো জন নিহত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। সরকার সমর্থক মিডিয়া এসব খবর দিচ্ছে না। দিলেও সীমিতভাবে দিচ্ছে। দুই. দেশ বিভক্ত করণের প্রক্রিয়ায় সরকারি ইন্ধনে সংখ্যালঘুদের উপাসনা স্থান আক্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী সরকার একদিকে চাইছে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক ঠিক রাখতে, ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে, কোটা সিসটেমে দলীয় ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণ দলীয় রাখতে, সেনাবাহিনীকে বারবার হুশিয়ারি দিতে, দুই বড় পার্টি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রাখতে এবং সর্বোপরি ইসলাম বিরোধী শাহবাগি ব্লগারদের সর্ববিধ পৃষ্ঠপোষকতা করে গোটা দেশকে বিভক্ত রাখতে।

কিন' বাংলাদেশে ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলামীর নেতারা তাদের তের দফা দাবির সঙ্গে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি যোগ করেছেন। আগামী ৩০ এপৃলের মধ্যে তাদের এই চৌদ্দ দফা দাবি সরকার মেনে না নিলে ৫ মে-তে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার হুশিয়ারি তারা দিয়েছেন। গত ৬ এপৃল ২০১৩-তে ঢাকায় শাপলা চত্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে ৫ মে-তে ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার সম্ভাবনাকে কেউ উড়িয়ে দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে কি হবে? গ্লাসগো পোর্ট তথা স্কটল্যান্ডের মতো চিটাগাং পোর্ট তথা দেশের দক্ষিণ অঞ্চল কি আলাদা হয়ে যাবে? আগামী কয়েক দিনের ঘটনা এই কঠিন প্রশ্নেরই উত্তর দেবে।



প্রধানমন্ত্রীত্ব দেয় কি?

মার্গারেট থ্যাচারের জীবিত অবস্থায় তার সম্মানার্থে পার্লামেন্ট ভবনে একটি ব্রঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেটি উদ্বোধনের সময় থ্যাচার মন্তব্য করেন, মূর্তিটা লোহার হলে বেশি পছন্দ করতাম। যাই হোক, ব্রঞ্জের মূর্তিও চলবে। এটাতে মরচে ধরবে না।

মূর্তিপূজা বিরোধী হেফাজতে ইসলামীদের কারণে বাংলাদেশে হয়তো কোনো প্রধানমন্ত্রীর মূর্তি সংসদ ভবনে স্থাপিত হবে না। তবে সাধারন ভোটাররা হয়তো বিবেচনা করবে, প্রধানমন্ত্রীত্ব পলিটিশিয়ানকে দেয় কি?

ভালোবাসা নাকি ঘৃণা?

সম্মান নাকি অশ্রদ্ধা?

ভক্তি নাকি কটূক্তি?

অর্থ নাকি নিরাপত্তাহীনতা?

ক্ষমতা নাকি বিদ্রোহ?

উত্তরটা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর পরমতসহিঞ্চুতা, ক্ষমাপরায়নতা, সত্যবাদিতা, শালীনতা, ধর্মভীরুতা এবং উদারতার ওপর।

facebook.com/ShafikRehmanPresents
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×