**সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার: ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার ঝুঁকি**
আজকাল আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা একটি ভাইরাল ব্যধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে চিহ্নিত হয়, প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িকতা কেবল ধর্মীয় নয়, বরং এটি ভাষা, অঞ্চল, সংখ্যা গরিষ্ঠতা এবং অন্যান্য উপাদানের ভিত্তিতেও হতে পারে।
সাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞা প্রায়ই সংকীর্ণ চিন্তাধারার কারণে ধর্মীয় সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বাস্তবে, যখন কোনো সম্প্রদায় নিজেদের লাভ-লোকসান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং আর্থিক সুবিধাদি তাদের সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভাবতে শুরু করে এবং অন্য সম্প্রদায়ের তুলনায় নিজের সম্প্রদায়ের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে চায়, তখনই সাম্প্রদায়িকতা জন্ম নেয়। ধর্মের ভিত্তিতে হলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, ভাষার ভিত্তিতে হলে ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, এবং অঞ্চল ভিত্তিক হলে আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতা গড়ে ওঠে।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সংখ্যা গরিষ্ঠতা ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা (যেমন হিন্দু-মুসলিম বিভাজন) এবং অঞ্চল ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা প্রকট রূপ ধারণ করেছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণ বা ভাষা ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। যেমন, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা একটি দেশের ভেতর বিস্তার লাভ করে, যেখানে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। আমাদের দেশে বর্তমানে মুসলমানরা হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করছে, শুধু ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে। এ ধরনের সহিংসতা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা প্রমাণ করে।
অঞ্চল ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, বিশেষ করে গ্লোবালাইজড বিশ্বে, অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যেমন, পশ্চিমা দেশগুলি সম্পদ দখলের জন্য অন্য দেশ ধ্বংস করে বা তাদের নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচার করে, যা সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যের অপর একটি দিক তুলে ধরে। আবার ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালানো অঞ্চলভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ।
আজকের ডিজিটাল যুগে নতুন এক ধরনের সাম্প্রদায়িকতার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে: রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন নীতি ও আদর্শের কারণে সমাজে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত, দাঙ্গা, এবং সহিংসতা প্রতিদিন সংবাদপত্রে উঠে আসে। প্রতিটি দলের কর্মী তাদের দলের আদর্শকে সেরা মনে করে এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হয়।
রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা আরও গভীরভাবে সমাজকে প্রভাবিত করে, যেমন সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ বা ত্রাণ বিতরণে দলীয় বৈষম্য। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
এর ফলে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সমাধান নয়, বরং এর দুষ্ট প্রভাব কমানোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। একে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রয়োজন সংলাপ, সহনশীলতা এবং সমস্ত সম্প্রদায়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা সহজ নয়, তবে এটি সম্ভব তখনই, যখন আমরা সকলকে একত্রিত করতে পারব, সমাজে সাম্যের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।