somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাফল্য: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সাফল্যের সংজ্ঞা পরিবর্তিত

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাফল্য—এ যেন এক জটিল শব্দ, যার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ছবি আঁকে। প্রশ্নটি খুব সাধারণ মনে হলেও এর উত্তর কখনো সরল হয় না। কেউ অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যে সাফল্যের মাপকাঠি খুঁজে পান, কেউবা খ্যাতির মোহে নিজেকে সফল বলে ভাবেন। তবে বাস্তবতা বলছে, সাফল্য তার রূপ পাল্টায় জীবনের প্রতি মুহূর্তে, বয়সের প্রতিটি ধাপে।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সাফল্যের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হয়। তরুণ বয়সে আমাদের চোখে সাফল্য মানেই বড় স্বপ্নের ক্যানভাস। কিশোর বয়সের রঙিন চেতনায় সাফল্য মানে—উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যশ, আর প্রতিযোগিতায় জয়ের আনন্দ বা প্রতিযোগিতার অনুপ্রেরণা। আমরা ভাবি, সমাজে নিজের জন্য একটি অনন্য উচ্চতর স্থায়ী স্থান করে নেওয়াই জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য। তাই দৌড় শুরু হয়, লক্ষ্য একের পর এক পাল্টে যায়। কেউ হয়তো স্বপ্ন দেখেন প্রকৌশলী হওয়ার, কেউ চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার, আবার কেউবা বড় কোনো ব্যবসা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর থাকেন।

কিন্তু জীবনের বাস্তবতায়, অনেকে সেই স্বপ্নগুলোর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হন। জীবনের অমোঘ বাস্তবতা সব সময় সহজ থাকে না। অনেকেই স্বপ্নগুলোর সঙ্গে আপস করে চলতে শিখেন। আর যারা সেই স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হন, তাদের মধ্যেও একসময় প্রশ্ন জাগে—এই প্রাপ্তির শেষ কোথায়?- হয়তো সেই চাওয়ার শেষে কিছুই নেই। এক সময় তারা অনুভব করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে, তখন উপলব্ধি হয় যে, প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। আজ যা সাফল্য মনে হয়, কাল তা অতীতের সাধারণ একটি ঘটনা মাত্র।

জীবন বোধের গভীরে প্রবেশ করতে পারলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আসলে সাফল্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। আমাদের জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো এক শান্ত মুহূর্তে একটি গভীর অনুভূতি এসে মনে হয়, এই ব্যস্ততার মাঝে থেমে গিয়ে কিছু সহজ, নির্ভেজাল সুখ খুঁজে নেওয়া হয়তো সবচেয়ে বড় সাফল্য। প্রাপ্তির হিসাবটা যখন জীবনে ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে, তখন হঠাৎ করেই যে অনুভব হয়, তা হলো, মা-বাবার মুখের হাসি, স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা, আর নিজেকে তাদের মতো করে গড়ে তোলা—এটাই বড় সাফল্য।

জীবনের সাফল্য তখন আর ধন-সম্পদে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সেই সাফল্য নির্ধারিত হয়, যখন পরিবারের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে পারি, যখন মা-বাবার চোখে সন্তুষ্টির হাসি দেখতে পাই, যখন স্ত্রী-সন্তানের পাশে দাঁড়াতে পারি। বড় বড় স্বপ্ন না পাওয়ার বেদনা ভুলে আমরা তখন নতুন এক জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পথ চলতে থাকি। যে সাফল্যকে আমরা এতদিন বাহ্যিক অর্জনের মধ্যে খুঁজেছি, তা যেন একসময় ফিকে হয়ে যায়। মা-বাবার মুখে সন্তুষ্টির হাসি, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য, আর জীবনের প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলো তখন গভীর মূল্যবোধের দিকে নিয়ে যায়। বাস্তবিক অর্থে, জীবনের প্রতিটি স্তরে, যেখানে নিজেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, যেখানে আত্মার শান্তি পাওয়া যায়, সেই জায়গাটাই আসল সাফল্যের ঠিকানা মনে হয়।

তবে, সাফল্য কখনো ধরা দেয় না বাহ্যিক অর্জনের ভিত্তিতে। এটা পাওয়া যায় জীবনের প্রতিটি স্তরে, যখন আমরা নিজেকে আত্মিক পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারি। জীবনের প্রকৃত সফলতা সেই মুহূর্তে খুঁজে পাওয়া যায়, যখন আমরা থেমে যাই, চারপাশে তাকিয়ে দেখি, এবং উপলব্ধি করি যে আসলে আমাদের জীবনটি কতখানি অর্থবহ। সেই মুহূর্তগুলো, যা হয়তো একসময় অতি সাধারণ মনে হয়েছে, এখন সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠে।

এই ছোট ছোট অনুভূতির সমষ্টি একদিন আমাদের সামনে তুলে ধরে জীবনের প্রকৃত সাফল্যের পথ। সাফল্যের মাপকাঠি তাই শুধু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, নয় কোনো বাহ্যিক পরিমাপ। এটি সেই জায়গা, যেখানে আত্মার শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে নিজেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। জীবন তার গভীরতায় প্রবেশ করলে, তখনই আমরা বুঝতে পারি—সাফল্য আসলে বহুমাত্রিক, প্রতিটি মুহূর্তের নিজস্ব বোধ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্যাবলেট খেলেই নির্মূল হবে রক্তের ক্যানসার? নতুন ওষুধ আসছে দেশে, দাম কত?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬





ট্যাবলেট খেলেই আর ক্যানসার ছড়াবে না? রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন ওষুধ আসতে চলেছে দেশে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধটি বানিয়েছে। আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার ওয়ার্কশপ রয়েছে ভারতেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

খোমেনীর স্বৈরশাসনের সূচনা: ধর্মীয় বিপ্লব থেকে রক্তাক্ত দমন

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮

খোমেনীর স্বৈরসাশন ও ইরানের কালো ইতিহাস:
============================

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে যে 'ধর্মনির্ভর রাষ্ট্রশাসন' প্রতিষ্ঠিত হয়, তার মূল স্থপতি ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নামে তিনি দেশটিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংরক্ষিত নারী আসন: সংস্কারের নামে চাপিয়ে দেওয়া, না কি গোপন এজেন্ডার বাস্তবায়ন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৭


বাংলাদেশে সংস্কারের নামে আজ যে কাণ্ড চলছে, তা দেখে পুরনো প্রবাদটি মনে পড়ে—"অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।" একটি ইন্টেরিম সরকার, যাদের চেয়ারে বসা একটি জটিল ক্ষমতার সমীকরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন ইরানকে হালকাভাবে নেওয়া ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ভুল?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০২



ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মত করে একটু বেশিই হালকা ভাবে নিয়েছে মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী দেশ ইরানকে। ইরানকে আক্রমণ করতে হলে ইরানের ৩টি শক্তিশালী প্রক্সি কে আগে মোকাবিলা করতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এটা কি একজন সরকারি কর্মচারীর পোশাক হতে পারে?

লিখেছেন মুনতাসির, ১৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:০৮




টি শার্ট পরিহিত ব্যক্তি একজন সরকারী কর্মচারী এবং তিনি সরকারী কাজে এই পোশাকে যদি গিয়িছিলেন। কর্মচারীদের পোশাকের কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি? কারও জানা থাকলে বলবেন দয়া করে।

স্ক্রিনশট টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×