আল কুরআনের অনেক ভবিষ্যৎ আছে, আজকে ৩ টি দেওয়া হলো-
পারস্যের উপর রোমানদের বিজয়ঃ
রোমকরা পরাজিত হয়েছে নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যে। অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহর হাতেই। সেদিনমুমিনগণ আনন্দিত হবে। [সূরা রুম ২-৩]
পারস্য ও রোমানদের মধ্যে তখন বিবাদ চলছিলো। মক্কার কুরাইশদের মত পারস্যবাসীর কাছেও কোন কিতাব ছিল না। উভয়েই পরকালে অবিশ্বাসী ছিল। অন্যদিকে মক্কার মুসলিমদের সাথে রোমান খ্রিস্টানদের মিল ছিল এদুটো দিকে। প্রথমত মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় জাতিই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। ঈসা, মূসা, ইব্রাহিমসহ পূর্ববর্তী নবীদের সবাইকেই উভয় জাতিই নবী হিসেবে মানে। সে হিসেবে মক্কার মুসলিমরা চাইতো যাতে রোমানরা বিজয়ী হয়। কুরাইশরা চাইতো পারস্যবাসীর বিজয়। এরই মাঝে রোমানরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। রোমানদের নেতা পালিয়ে যায় অন্যত্র। এতে করে মুসলিমরা খুবই আশাহত হয়, আর মক্কার মুশরিকেরা দাম্ভিকতা দেখাতে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (সা)কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন যে শীঘ্রই রোমানরা পারস্যকে পরাজিত করবে। রোমানদের ঠিক ঐ মূহুর্তে যে অবস্থা ছিল তাতে কয়েক বছরের মধ্যে পারস্য জয়ের বিষয়টা একদমই কল্পনার অতীত। মক্কার মুশরিকরা এ নিয়ে উপহাস করতে লাগে মুসলিমদেরকে।এই আয়াতগুলো নাযিল হয় ৬২০ সনে। এই আয়াত নাজিল হওয়ার ঠিক ৭ বছর পর ৬২৭ সনে রোমানরা অবিশ্বাস্যভাবে পারস্যকে পরাজিত করে। কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়।আরও একটি বিষয় খুবই চাঞ্চল্যকর। এই আয়াতের আরেকটি অর্থ হয়, “রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবচেয়ে নিচু জায়গায় (আদনা-আল আরদঃ পৃথিবীর নিম্নতম স্থান)। – রোমানরা
ইরানীদের কাছে যে জায়গায় পরাজিত হয় সেটা হল ডেড সি বেসিন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আজকে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর নিম্নতম স্থান হল ডেড সি বেসিন, এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৪২৩ মিটার নিচে অবস্থিত।
ইরাম শহর এর রহস্যঃ
সূরা আল ফজর, আয়াত নং ৭ এখানে ইরাম নামক একটি শহরের ধ্বংস এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইরাম নামক কোন শহর এর নাম পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। এজন্য ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগণ ঐ শহরটির সম্বন্ধে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। বহুদিন ধরেই বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল কুরআন। ১৯৭৩ সালে সিরিয়ার এরলুস নামক একটি প্রাচীন শহর খননের সময় কিছু শিলালিপি পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিপি পর্যবেক্ষন করে সেখানে ৪০০০ বছরের পুরনো একটি সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। শিলালিপিগুলোতে উল্লেখ্য পাওয়া যায় ইরাম নামক একটি শহরের নাম, যে শহরের সাথে তৎকালীনএরলুস শহরের লোকজন ব্যবসা-বানিজ্য করতো। এই সত্যটা অবিস্কার হলো মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। এর আগে কেউ এই শহরের রহস্য৷জানতোনা। অথচ কোরআন শহরটির কথা বলে গিয়েছে ১৪০০ বছর আগে।
ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণঃ
ফেরাউন ডুবে মারা গেছে আর মৃত্যুর পরও তার শরীর অক্ষত রাখা হবে, পরবর্তী সীমালংঘনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে।আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। [সূরা ইউনুস ( ৯০-৯২)।
১৮৯৮ সালে এক ফেরাউনের লাশ উদ্ধার হয়। ধারনা করা হয় এটিই কুরআনে বর্ণিত সেই ফিরআউন। লাশটি বর্তমানে মিশরের কায়রোতে দ্যা রয়েল মমী হলে একটি কাচের সিন্দুকের মধ্যে রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২০২ সেন্টিমিটার। ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও তার লাশে কোন পচন ধরে নি। এটা কি মোটেও যৌক্তিক? মুহাম্মদ (সঃ) এর যুগের আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মধ্যে, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা তার লাশ যে সংরক্ষিত হবে এরকম ভবিষ্যতবানী করা এবং তা মিলে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৪৯