সপ্তাহে অন্তত একবার ওকে দেখতে যাওয়া টা হচ্ছে একরকম অলিখিত চুক্তি ওর সাথে। ওর নাম দিয়েছি আমি চারুমতি । মাঝে মাঝে ওকে চারু বলেও ডাকি আমি। নামটা রেখেছি বুদ্ধদেব গুহ এর একটা উপন্যাশ চারুমতি থেকে, যার নায়িকা চারুমতি। ওর বাবার সাথে যে কোন ভাবে পরিচয় হয়েছিল। তারপর থেকেই, বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে ভদ্রলোকের সাথে একরকম আন্তরিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে তার বাসায় নিয়মিত যাওয়া।
আমাকে দেখলেই ওর চোখ দুটোতে আমি যে খুশি দেখি টা ভাষায় বোঝানোর মত না। ওর চোখ দুটো আসলেই অনেক সুন্দর। মানুষ সাধারণত হাসলে তা তার মুখে ফুটে ওঠে। কিন্তু ওর চোখ আর মুখ দুটোই সমান হাসে। সপ্তাহে যখন ওকে দেখতে যাই, ওর বাবা মা আমাকে বেশ খুশি হয়, যা ওর ব্যবহার দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। তাছাড়া আর তো কোন কাজ নেই আমার। বাসায় গেলেই দেখি ওর ছলাকলা। বারবার এ রুম থেকে ও রুমে ছুটোছুটি করা। আর বারবার আড় চোখে তাকানো বেশ উপভোগ করি। মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে আমি কি করি। কিন্তু আমিতো আশায় থাকি, কখন ও এসে উঁকি দিয়ে দেখবে। মাঝে মাঝে এসেই চিমটি দেবে আমাকে। ওর নখে এত ধার যে, মাঝে মাঝে চামড়া কেটে যেতে চায়। তারপরেও সয়ে যাই, ওর হাসিভরা মুখটা দেখবো ব,লে। হাসলে ওর বাম গালে যে টোল পরে, তা আসলেই দেখার মত। তো সেদিন, এক সুযোগে ওকে ধরে ফেললাম। ও ছুটে যেতে চাইছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। অবশেষে একটা আবদার করলাম, “চারু, আমার কপালে একটা চুমু দাও।”
“না, না” বলেই হাসছিল।
আবারও বললাম, “দাওনা, একটা” তবুও ও দেবেনা । বারবার মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে না না বলছিল আর খিক খিক হাসছিল।
তবুও বলতে বলতে অবশেষে দিল, একটা নয়, দুটো।
কপালে নয়, কপোলে।
ঠোঁট দিয়ে নয়, হাত দিয়ে।
ঠাস, ঠাস শব্দ শুনলাম কানে, ব্যাথা পেলাম গালে।
ভাবছি এই ২ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটার নরম হাতে এত জোর !
কিন্তু ওর মুখে যে হাসি দেখলাম তখন, তাতে ব্যাথা যে মুহূর্তেই কোথায় উধাও হয়ে গেল, তা আর খুঁজে পেলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫