মুক্তচিন্তা এবং ব্লগার এ দুটো ব্যাপার নিয়ে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি অফলাইনেও অলোচনার ঝড় উঠছে। শাসকগোষ্ঠী ৫৭ ধারা আরোপ করে তাদের জন্য যেকোনো রকমের বিরক্তিকর চেতনার বিকাশ রোধে সক্রিয়। জঙ্গি সংঘটনগুলোও এখন মুক্তমনা ব্লগারদের তাদের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করে ফেলেছে। অর্থাৎ তারাও মনে করছে, এইসব ব্লগাররাই তাদের জিহাদের পথে মূল বাঁধা। তবে এদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই এসব খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না। তারা দেখছে, মুখে বলছে এসব ঠিক হচ্ছেনা। কেউ বলছে সরকার গনতান্ত্রিক আচরন করছেনা। আবার জঙ্গিরা ব্লগার হত্যা করলে বলা হচ্ছে এসব ইসলাম সমর্থন করেনা। অনেকেই হত্যার বিচার চান, তবে একই সাথে তারা আবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের তীব্র নিন্দাও জানিয়ে থাকেন। সামুর অধিকাংশ ব্লগাররাও এমন মনোভাব ধারন করে থাকেন।
সব মিলে যদি বলি, আমার মনে হয় এসব নিয়ে সবাই আসলেই একটা বিভ্রান্তিতে আছে। যার প্রমান এত কিছু ঘটার পরও আমাদের মধ্যে সম্মিলিত প্রতিবাদের কোন প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। বরং প্রতিবাদের ভাষা যেন আরো স্থিমিত হয়ে আসছে। এমন সমস্যা তখনই হয় যখন মানুষ নিজেই তার চেতনা এবং প্র্যাকটিসের জায়গায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমরা আসলেই কি মূল্যবোধ ধারন করছি, কি চাচ্ছি, আর সেসবকে কেন্দ্র করে কি চর্চা করছি তা যদি যৌক্তিকভাবে পর্যালোচনা করা হয় তবে দেখা যাবে আমাদের চাওয়া, বিশ্বাস এবং চর্চার মধ্যে অনেক বড় একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। মানুষ যখন বিভ্রান্ত হয়ে যায় তখন বাক স্বাধীনতাকে গলা চেপে হত্যা করার চেষ্টা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। মৌলবাদী চেতনার উত্থান হবে এই বিভ্রান্তির বাই প্রোডাক্ট হিসেবে। তাই সময় এসেছে এসব ব্যাপার নিয়ে নিজেদের মতামত স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরার। সেসব নিয়ে খুব তর্ক বিতর্ক হতে পারে। তবে অবশ্যই সেটা হতে হবে যৌক্তিক মতাদরশিক বিতর্ক। কারো যদি কোন বিভ্রান্তি থাকে তবে তা চর্চার মাধ্যমেই কাটিয়ে ফেলা যায়। বরং ক্রাইসিসের সময় চুপ করে থাকাটাই আরো ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্ম দেয়। এসব ব্যাপারে আমি আমার কিছু ধারনা এই পোস্টে তুলে ধরব। একই সাথে সামু ব্লগের পলিসি সম্পর্কে যা কিছু আমার কাছে বিভ্রান্তকর মনে হয়েছে তাও বলার চেষ্টা করব।
আমরা কেন ব্লগিং করি?
আমরা কেন ব্লগিং করি এ নিয়ে সবারই কিছু ভিন্ন মতামত থাকতে পারে। সবার ব্লগিং করার উদ্দেশ্যও একনা। ব্লগে চর্চার দিক থেকেও একজনের সাথে অপরের পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন, কেউ ব্লগে সাহিত্য চর্চা করে থাকেন, কেউবা দিনলিপি লিখেন নিজের মনে। অনেকেই তাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে ফিচার লিখতে পছন্দ করেন। নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পছন্দ করেন। তবে এসব চর্চা ব্লগে খুব একটা বিতর্কের জন্ম দেয়না। এসব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা মৌলবাদী সংঘটনগুলোর কোন সমস্যা হয়না। কারন তারা মনে করে থাকে মানুষের এসব মনস্তাত্ত্বিক চর্চা তাদের টিকে থাকা কিংবা বিকাশের জন্য হুমকি না। এসব ব্লগারদের আমরা মডারেট ব্লগার বলে অভিহিত করতে পারি। কিন্তু অপর দিকে কেউ কেউ ব্লগিং করে থাকেন সম্পূর্ণই অন্য উদ্দেশ্য থেকে। তারা ব্লগিংকে শুধুই ব্লগে সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য লিখেন না। তাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে কোন একটা মতবাদকে প্রতিষ্ঠা কিংবা বাতিল করে দেওয়ার প্রয়াস থেকে। সেটা হতে পারে রাজনৈতিক কিংবা কোন ধর্মীয় মতবাদকে কেন্দ্র করে। যেসব ব্লগার খুব সিরিয়াস ভাবে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মতবাদকে প্রতিষ্ঠা কিংবা বাতিলের জন্য ব্লগকে প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যাবহার করে থাকেন তাদের সাথেই মাঝেমাঝে স্টেট মেকানিসম, রাজনৈতিক দল এবং মৌলবাদী সংঘটনগুলোর সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যা হতে পারত মুক্ত চেতনার বিকাশে আমাদের দেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া, তা হয়ে গেছে ব্লগারদের মুক্তচিন্তা দমিয়ে রাখার এক নিষ্ঠুর আয়োজন।
পলিটিক্যাল কনসাসনেস বনাম দলকানা স্বভাব
একজন ব্লগারের পোস্টে এই ব্যাপারটা নিয়ে মন্তব্য করেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, যারা বলে যে, আমরা রাজনীতি ঘৃণা করি, তারাও রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে যেতে পারেনা। যে সমাজের সব অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আইন প্রনয়ন জাতীয় ব্যাপারগুলো রাজনীতিবিদরা নিয়ন্ত্রন করে, সে দেশে আসলে কেউ চাইলেও এই বলয়ের বাইরে অবস্থান করতে পারবেনা। এ দেশের অনেক মানুষেরই ধারনা রাজনৈতিক সচেতনতা মানেই কোন একটি নির্দিষ্ট দলের চাটুকারিতা করা। তাই নতুন প্রজন্মের অনেকেই যেসবকে ঘৃণার চোখে দেখে। কিন্তু তাদের জীবনও সেই যাদের তারা দেখতে পারেনা, তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। এ জন্যই দরকার দলবাজির বাইরে এসে রাজনৈতিক ভাবে সচেতেন হওয়া। নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য তা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথও নেই।
এ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্লগাররা সক্রিয় ছিল এবং আছে। কিন্তু এখানেও একটা ব্যাপার প্রায়ই দেখা যায়। সেটা হচ্ছে দলবাজি। যেটা অনেকটাই জ্ঞানপাপীদের মত কাজ হয়ে যায়। অর্থাৎ আমি অমুক দল সাপোর্ট করি বলে তারা যাই করবে তাই ভালো। সেই দলের বিরোধিতা যারা করবে তারাই খারাপ, এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেড় হয়ে সবকিছুই যৌক্তিক ভাবে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করতে হবে।
আমি দলবাজি বলতে দলকানাদের কথা বলেছি। যেমন কেউ যদি দলকানা হয়ে বলে বঙ্গবন্ধু প্রথম রাষ্ট্র প্রতি ছিলেন না অথবা জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। আবার অপরদিকে কেউ যদি বলে জিয়ায়ুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। এমন মনোভাব নিয়ে যদি কেউ বছরের পর বছরও তর্ক করে, তাহলেও কোন লাভ নাই। আলোচনা করতে হবে পলিসি নিয়ে। আমি এই দল করি বলে এই দলের কোন পলিসির সমালোচনা করা যাবেনা, এমন ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে কোন কাজের কাজই হবেনা। পলিটিক্যাল কনসাসনেস মানেই দলবাজি না। পলিটিকাল কনসাসনেস মানে যুক্তি দিয়ে পলিসিগুলোকে যাচাই বাছাই করা।
এখানে দুটো ব্যাপার খুব ক্লিয়ারলি বুঝতে হবে। রাজনীতি থেকে একজন মানুষ যতই দূরে থাকুক অথবা বলুক যে তার কোন আগ্রহ নেই – সে নিজেও রাজনৈতিক ভাবে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ভুক্তভোগী হবে। যে প্রজন্মের অনেকেই বলেছিল যে রাজনীতি নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই, তারাই আবার শাহবাগে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। শাহবাগে গনজাগরন ছিল রাজনৈতিক কনসাসনেসের একটি অসাধারন উদাহরন।
এখন আসি বিভ্রান্তির ব্যাপারটা নিয়ে। কিভাবে বিভ্রান্তির জন্ম হতে পারে। অযৌক্তিক প্রোপাগান্দা রাজনৈতিক বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। যেমন কেউ যদি বলে গোলাম আজম, নিজামি ৭১ এ গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলনা তবে সেটা মিথ্যা প্রোপাগান্দা হবে। কেউ যদি বলে বঙ্গবন্ধু প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেননা, তবে সেটা ইতিহাস বিকৃতি হবে। আবার উপরে যেমন বলেছি কেউ যদি বলে ৭১ এ জিয়াউর রহমান রাজাকার ছিলেন, সেটাও হাস্যকর যুক্তি হবে। অর্থাৎ সোজা ভাষায় যা বলতে চাচ্ছি কোন ঐতিহাসিক তথ্যকে পরিবর্তন করে উপস্থাপন করলেই বিভ্রান্তি আসে। এসব চর্চাকে কোনভাবেই মুক্তচিন্তা বলা যাবে না। মুক্তচিন্তা হচ্ছে তথ্যকে ঠিক রেখে বরং প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা। মুক্তচিন্তা মানে যা ইচ্ছা তা বলা নয়। মুক্তচিন্তা হচ্ছে যেকোন বিষয় নিয়ে মুক্তমনে যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করা। এক্ষেত্রে তথ্যের আলোকে নিজের ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করা যেতে পারে। সেসব ভাবনাকে অনেক কিছুর আলোকে যাচাই বাছাইও করা যেতে পারে। তা না করে শুধু তথ্য নিয়ে ঘুরলে রাজনৈতিক কনসাসনেস তৈরি হবেনা। কিন্তু সামুতে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি যা দেখেছি তা হচ্ছে একধরনের এড়িয়ে চলার মনোভাব। এখানে গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু ভাবা হলে তাকে খুব একটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়না। বরং তথ্যের আলোকে গতানুগতিক ভাবনা চিন্তাকেই উৎসাহিত করা হয়। এমন মনোভাব ভয় থেকেও হতে পারে। কারন কোন শাসকগোষ্ঠীই চায়না তাদের বলয়ের বাইরে গিয়ে কেউ তাদের পলিসির বিরোধিতা করুক। যেমন উদাহরন হিসাবে বলতে পারি, তেল, গ্যাস বিদ্যুৎ জাতীয়করণের আন্দোলনে ব্লগারদের উপরও রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবুক নেমে এসেছিল। কারন তাদের কনসাসনেস শাসক গোষ্ঠীর পলিসিতে আঘাত করেছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে চুপ করে বসে থাকে। সেক্ষেত্রে আমি বলব কোনটা রাজনৈতিক সচেতনতা আর কোনটা রাজনৈতিক মিথ্যাচার তা যাচাই করার মত ক্ষমতা আমাদের সবারই আছে। তাই চাইলেই দুটো ব্যাপার আলাদা করে সক্রিয় ভূমিকা পালন কয়া যায়।
মুক্তচিন্তা বনাম ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত
অনেকেই এমন ধারনা করে থাকেন, ব্লগার মানেই নাস্তিক। ব্লগার মানেই ইসলাম নিয়ে আক্রমণাত্মক লেখা! আমরা জানি শাহবাগের আন্দোলনের সময় জামাতকে রক্ষা করার জন্য এই প্রোপাগান্দা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবং সাধারন মানুষ খুব ভালো ভাবেই বিভ্রান্ত হয়েছিল। এইজন্য সরকারকে ব্লগার গ্রেপ্তার করে দেখাতে হয়েছিল যে, তারা কোন ভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সহ্য করবেনা। সামুর অনেক ব্লগাররাও সব ভুলে নাস্তিক ব্লগারদের নিয়েই খুব সক্রিয় হয়ে গেলেন। এমনকি অভিজিত রয় কিংবা অন্যান্য মুক্তমনা ব্লগার হত্যার পরও আমরা দেখতে পাই, একের পর এক পোস্ট আসতে থাকে। কিন্তু সেসব পোস্টের বিষয় বস্তু কি? মুক্তচিন্তার নামে ধর্মকে আঘাত করা ঠিকনা। এসব আসলে মুক্তচিন্তা না! এসব হচ্ছে আমেরিকা যাওয়ার কিছু কৌশল মাত্র! যদিও সবাই দোষীদের বিচার চান। কিন্তু তারা মনে করে থাকেন এক হাতে তালি বাজেনা। এসব মুক্তমনারাও নিশ্চয়ই এমন কিছু করছে যা জঙ্গিদের বাধ্য করছে তাদের হত্যা করতে।
আভিজিত রায়কে হত্যা করার পর সামুতে একজন ব্লগারের পোস্ট স্টিকি করা হয়। সেই পোস্টের বিষয় ছিল যে, ইসলাম এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সমর্থন করেনা। এখানে অনেকেই বলবেন যে এমন পোস্টের তখন দরকার ছিল। কিন্তু আমার কাছে সেটাকেই একটা বিভ্রান্তিকর আচরন বলে মনে হয়েছে। ব্যাপারটা এমন ছিল যে শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় মতবাদের আলোকেই ঠিক করতে হবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিকনা। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। এমন সময়ে মূল বিষয়ে ফোকাস না করে কেন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের দ্বান্দ্বিক ব্যাপারগুলো নিয়েই আলোচনা করতে হবে? কারন অবশ্যই আছে। সে কারনটা অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। আরো স্পষ্টভাবে বললে সেটাকে ধর্মীয় অনুভূতি বলা যায়।
ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে নিজ ধর্মের প্রতি একধরনের ভালোলাগার আবহ তৈরি হয়। এ দেশের অনেক মানুষই ধর্মীয় রীতি নীতির খুব একটা চর্চা না করলেও তারা ধর্মভীরু। অর্থাৎ তারা তাদের বিশ্বাসের উপর কোন রকমের আঘাত পছন্দ করেনা। এ ব্যাপারটি এ দেশের শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত উভয় শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। ব্লগার হত্যার পর মডারেট মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া দেখেও ব্যাপারটি খুব সহজেই বুঝে ফেলা যায়। তারা কোন ভাবেই এটা ভাবতে পারেন না যে, উক্ত ব্লগার দোষী নয়। অবশ্যই তারা কেউ এমন হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেন না। কিন্তু তারা মন থেকে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদও করতে পারেননা। বরং মুক্তচিন্তা বিকাশের নামে ধর্ম নিয়ে লেখালেখিকে তাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়।
বিজ্ঞানের বিকাশের সময় থেকেই বিজ্ঞানের সাথে ধর্মীয় মতবাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। আমরা জানি একসময় “ পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে” এ কথাতেই চার্চের ভিত কেঁপে উঠেছিল। তারা তখন সাধারন মানুষকে এ বলে বিভ্রান্ত করেছিল যে, এসব হচ্ছে ধর্মের উপর আঘাত। বিজ্ঞানীরা পালিয়ে গোপন জায়গায় তাদের গবেষণা চালাত। সাধারন মানুষও তাদের শয়তানের পূজারী মনে করত। কিন্তু একসময় চার্চকে পরাজয় মানতে হয়েছিল। কারন যারা সত্যের অনুসন্ধানি, তাদেরকে বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে আঘাত করতেই হয়। আমরা যদি পর্যালোচনা করে দেখি যে, কিভাবে সভ্যতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে তবে দেখব কিছু মানুষ অনেকের বিশ্বাসে আঘাত হেনে তা ভেঙে ফেলতে পেরেছিল বলেই তা হয়েছে।
তাই এখানে কিছু ব্যাপারে সবার বিভ্রান্তি কাটানো দরকার বলে মনে করি। ধর্ম একটি সামাজিক কাঠামোর অন্যতম উপরিকাঠামো। তাই ধর্ম নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ এমনকি ধর্মীয় মতবাদকে বাতিল করার প্রয়াসও খুব যৌক্তিক। এভাবেই সভ্যতা বারবার বিবর্তিত হয়েছে। বরং আমি মনে করি বিশ্বাসীদেরও এসব বিতর্কে অংশগ্রহণ করে নিজেদের বিশ্বাস কিংবা ধর্মীয় যুক্তিকে যাচাই বাছাই করে নেওয়া উচিৎ। এভাবেই বরং বিকাশ সম্ভব। যেমন ধর্ম নিয়ে যদি লেখা যায় তবে সেই ধর্মীয় মতবাদের বিরুদ্ধে কেন লেখা যাবে না? একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রচারে কেউ যদি লিখে থাকেন, যদি সেটা অন্যায় না হয়, তবে একটি ধর্মীয় মতবাদকে বাতিল করার যৌক্তিক আলোচনা কেন অন্যায় হবে? এসব ব্যাপার নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করি।
জঙ্গিরা এখন মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যা করছে। তারা কারন হিসাবে বলছে যে, তারা আসলে ইসলামের শত্রু। কয়েকদিন পর তারা বলবে সব ব্লগাররাই ইসলামের শত্রু। কোন মুসলিম ব্লগার কবিতা লিখতে পারবেনা। গল্প লিখতে পারবেনা। তাদের যদি এখুনি সমূলে ধ্বংস না করা যায় তবে শেষ পর্যন্ত এমনটাই হবে। তাই যত দ্রুত আমরা আমাদের বিভ্রান্তি কাঁটাতে পারব, তত দ্রুতই আমরা প্রগতির পথে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারব।
পরিশেষে
এটা একটা মনোস্তাত্ত্বিক লেখা। গবেষণামুলক কিছু না। তাই আমার যুক্তির পক্ষে রেফারেন্স টেনে লেখা বড় করিনাই। শুধু নিজের ধারনাগুলো শেয়ার করেছি। সামু সম্পর্কে বলার সময় কিছু পুরানো উদাহরন টেনেছি। কারন সেসব বেশী প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তবে আরো অনেক বিস্তারিত ভাবে অনেক কিছুই বলা যেত। সেসব নিয়ে অন্য কোনদিন লিখব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫