somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ আমার, আমাদের, আমাদের সবার প্রিয় জহির রায়হানের জন্মদিন....।

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জহির রায়হানকে নিয়ে অনেক কিছু লিখার ইচ্ছা, বার বার মনে হয় উনাকে নিয়ে বিশেষ কিছু লিখব, কিন্তু পারিনা। উনার মত বড় মাপের মানুষকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা হয় তো আমার এখনও হয় নি। তারপরও মন মানলো না, যা মনে আসে লিখি। জহির রায়হান নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলাম। উনাকে নিয়ে অনেক লেখা পেলাম। কপি-পেষ্ট করব, মনে সাই দিল না।
উনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের মাধ্যমে। আমার কাছে এই উপন্যাস জীবন্ত প্রতিচ্ছবি মনে হয়।এতবার পড়ি, তারপরও যেন পুরাতন হয় না। আমি অন্য কোন লেখকের বই ২বার সহজে পড়ি না, ব্যতিক্রম শুধু রবীন্দ্রনাথ আর জহির রায়হান। জহির রায়হানের প্রতিটা লেখা আমার কাছে অসাধারণ লাগে। উনার এক একটা উপন্যাস কিংবা গল্পের শেষটুকু এত অসাধারণ যে, একটা মায়া পড়ে যায়। মনে হয় পেছনে আমার আত্নাটাকে ফেলে এসেছি, তাই সে পেছন থেকে ডাকছে।
জহির রায়হানের গল্প নিয়ে সামান্য কিছু বলতে ইচ্ছে করছে-
১)অপরাধ- গল্পটিতে সালেহা চরিত্রটি ছিল বাংলার অসহায় নারীদের প্রতিচ্ছবি।
২)স্বীকৃতি -গল্পে চমৎকার একটা সূচনা- “জীবনকে অস্বীকার করিস না মনো। অস্বীকার করিসনে তোর আপন সত্তাকে, অনেক কিছু তোর করবার আছে এই জীবনে।”
৩)ইচ্ছা অনিচ্ছা- গল্পে চমৎকার একটি সংলাপ- “সোয়ামী নাই যার দুনিয়াই আন্দার তার।”
এই গল্পটা আমার মনটা অনেক খারাপ করে দিয়েছিল , ধর্মের দোহাই দিয়ে মোল্লারা শুধু মানুষের ক্ষতি করে গেছে – মানুষকে করেছে অসহায়।
৪)জন্মান্তর- গল্পে মন্তুর ভাবনাটা অসম্ভব ভাল লেগেছে- “জেল তার গুরু। এক কথায় স্বীকার করতেই হবে। একবার জেলে গেছে তো পাঁচ –দশটা নতুন রকমের প্যাঁচ, নতুন রকমের কলা – কৌশল আয়ত্ত করে বেরিয়েছে সে। গুরু মানবেনা কেন? গুরুই তো।”
৫)পোস্টার- গল্পে-আমজাদ সাহেব চরিত্রটি মধ্যবিত্ত জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি। এই গল্প থেকে বুঝতে পেরেছিলাম- বাবার মাথা কেন এত গরম থাকে।
৬)ইচ্ছার আগুণে জ্বলছি- এই লেখায় মনে হয় নিজেই জ্বলছি। নিচের লেখাটি শব্দ করে পড়তে অনেক ভাল।
“আহা, আমি যদি সেই তরুণকে নিয়ে একটা ছবি বানাতে পারতাম!
যার জীবন সহস্র দেয়ালের চাপে রুদ্ধশ্বাস।
আইনের দেয়াল।
সমাজের দেয়াল।
ধর্মের দেয়াল।
রাজনীতির দেয়াল।
দারিদ্রের দেয়াল।
সারাদিন সে ওই দেয়ালগুলোতে মাথা ঠুকছে আর বলছে আমাকে মুক্তি দাও।
আমাকে মুক্তি দাও।
আমার ইচ্ছেগুলোকে পায়রার পাখনায় উড়ে যেতে দাও আকাশে।
কিম্বা সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দাও। যেখানে তারা প্রাণভরে সাঁতার কাটুক।
সারাদিন সে শুধু ছুটছে, ভাবছে- আবার ছুটছে।
এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল।
ঈর্ষার দেয়াল।
ঘৃণার দেয়াল।
মিথ্যার দেয়াল।
সংকীর্ণতার দেয়াল।
কত দেয়াল ভাঙবে সে?
তবু সে আশাহত হয়।
ইচ্ছার আগুন বুকে জ্বেলে রেখে তবু সে ছুটছে আর ভাঙছে।
সহস্র দেয়ালের নিচে মাথা কুটে কুটে বলছে, মুক্তি দাও।
আমাকে মুক্তি দাও।”

চলচিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি উনাকে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে রাখবো। জহির রায়হান আমাদের চলচিত্রকে প্রাণ এনে দিয়েছিলেন।
জীবন থেকে নেওয়া চলচিত্রের নাম আজও সবার মুখে মুখে শুনতে পাই। মাঝে মাঝে ভাবি আমি কেন জহির রায়হান হলাম না!!!!!!
আমাদের সমাজের চারপাশের মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার হাসি কান্নার চিত্র উনার লেখাকে করেছে সমৃদ্ধ, সমাজের নানা বৈষম্য ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধেও উনার কণ্ঠ ছিল বলিষ্ঠ।
আর সেই মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি। হারিয়েছি একজন অভিভাবককে, হারিয়েছি একজন বন্ধুকে,যিনি বেঁচে থাকলে আমাদের চলচিত্র জগৎকে বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করতেন। তাঁর শূণ্যস্থান আজও আমরা পূরণ করতে পারে নি। তাঁর অভাব আজও আমরা অনুভব করি।
আজ এই প্রিয় মানুষটির জন্মদিন। অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে উনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইল আর মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা- আমার, আমাদের- আমাদের সবার প্রিয় জহির রায়হানের আত্নাকে যেন আল্লাহ শান্তিতে রাখেন।


(বি:দ্র: কোন ভুল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।)
৬১টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×