somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু গল্প-কিছু কথা............

১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তরুণ আর তরুণী প্রেমে পড়লো। নতুন প্রেম, নতুন অনুভূতি, নতুন সব কথা, নতুন অপেক্ষা, নতুন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা,নতুন ভাবে কথা বলার ধরণ, মানে সবকিছুই নতুন নতুন।

যারা প্রেম করেনা, বা যাদের প্রেম করার অভিজ্ঞতা নেই, তাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসতে পারে, তরুণ-তরুণী পার্কে, নদীর তীরে অথবা মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কি কথা বলে?
ভাই তেমন কোন স্পেশাল কথা বলে না, ধরেন তারা বলে- খাইছো কিনা, কি খাইছো?
তারপর শুরু হয় মাটি, আকাশ, বাতাস, বৃষ্টি ঝড়, সাগর, গরু-ছাগল সবকিছুই নিয়ে কোন না কোন কথা।

প্রেমিকা হয়তো বললো- “জানো, আজ না বড় আপুর বড় মেয়েটা বমি করেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে।”
সেদিন প্রেমিক সেই চিন্তা দূর করতেই নিজেকে সেই দিনটি বিলিয়ে দিবে।
অথবা বলবে- “এই বলো না, দেশের সরকার কবে ভাল হবে, এভাবে কি দেশ চলে?”
অথবা বলবে- “আমি না আজ অনেক অনেক খুশি। কেন খুশি জানো?”
-না, কেন খুশি তুমি?
-“আজ ফিল্মফেয়ারে শাহরুখ খান সেরা অভিনেতার পুরুষ্কার পেয়েছে। লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স।”
এভাবে চলেই তাদের ভালবাসার জীবন। একেকটা দিনে একেকটা ভালবাসার ইট দিয়ে দিনে দিনে গড়ে তুলে ভালবাসার ঘর। শুধু ছাদটাই বাকী থাকে।
অনেক দিন তো প্রেম হল, এখন আরো একান্তই নিজের করে নেওয়ার পালা, ভালবাসার ঘরে ছাদ দেওয়ার সময়, মানে বিয়ে।

তরণ তরুণীর হাত ধরে সন্ধ্যায় পাড়ার রাস্তায় হাটছে।
তরুণ তরুণীকে বলছে , আমি খুব টেনশনে আছি, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছিনা।
-কেন?
-ক্যারিয়ার নিয়ে টেনশন। কিভাবে কি করবো, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। এখন জব পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে গেছে। কতদিন যে আর বেকার থাকতে হবে?
-হা হা হা, তুমি এই টেনশনে রাতে ঘুমাতে পারো না? হা হা হা..... এত টেনশনের কি আছে বাবু। সব আস্তে ধীরে হবে। আমি তোমার সঙ্গে থাকলে কোন টেনশন থাকবেনা। যত টেনশন আমার সাথে শেয়ার করবে। আর আমার সাখে শেয়ার করবে না তো কার সাথে শেয়ার করবে?
-“সবচেয়ে বড় টেনশন তো তোমাকে নিয়ে।”
-“আমাকে নিয়ে আবার তোমার কি টেনশন।”
-“এই তো তোমাকে কখন বিয়ে করে ঘরে আনবো।”
-“ও কত ভালো তুমি, আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করো। আমি না সত্যি অনেক ভাগ্যবতী। এই জানো, আমি না তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। কি স্বপ্ন জানো?”
-“কি স্বপ্ন?”
-“গাধা বুঝোনা কি স্বপ্ন!, আমাদের নিজেদের সংসার হবে। ড্রইং রুমটা অনেক বড় হবে, পারটেক্সে ফার্ণিচারের সোফা থাকবে, বড় একটা প্লাজমা টিভি থাকবে। তুমি আমি কাধে কাধ মিলিয়ে দিল ওয়ালে দুলাহানিয়া লে জায়েঙ্গে দেখবো। আর হ্যা আমাদের রান্নাঘরটা কিন্তু অনেক বড় হতে হবে। তুমি অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য অনেক অনেক গোলাপ নিয়া আসবে। ইস কত মজা হবে। বলো অনেক মজা হবে না বলো?”
-“হুম মজা হবে। (কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ।)”
-“মমমমমমমম হুহু হু.... এই শুনছো? আমাদের বিয়েটা কবে হবে? আমার বান্ধবী লিসা না গত কালকে ওর বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছে। জানো মজার ব্যাপার কি?”
-“কি (উদাস সুরে)”
-“লিসার বয়ফ্রেন্ড , ওদের বাসর ২ হাজার গোলাপ দিয়ে সাজিয়েছে। আমাদেরটা কিন্তু ২হাজারের বেশি হতে হবে।”
এভাবে চলতে থাকে তরুণীর স্বপ্ন, আর তরুণের টেনশন বা দুশ্চিন্তা।

একটা সময় তাদের বিয়ে হয়। যে স্বপ্ন তরুণী দেখেছিলো, তার কিছুই পূরণ হয় নি। এই নিয়ে প্রতিদিন তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি। কখনও তরুণী ব্যাগ গুছিয়ে বাবার বাড়ি যাবার উপক্রম হয়।কখনও বাথরুমে বসে বসে অশ্রু বিসর্জন দেয়, আবার কখনও নিজেদের শোবার ঘরে দরজা লাগিয়ে অতীতের কথা চিন্তা করে।
তরুণ মাসের বেতন পেয়েছে, এই মাসে ঘরে একটা ফ্রিজ কিনতে হবে। তরুণ আর তরুণী চললো, ফ্রিজের দোকান।
দোকানের কাছে এসেই তরুণীর চোখে অকৃত্রিম এক লাজুক হাসি। এই হাসিতেই বলে দেয়- অনেক দিনের সাধনা, অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আজ কেউ তার স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারবেনা।
তরুণ তার পিছন পিছন যাচ্ছে, আর ম্যানিব্যাগের ভিতর বার বার তাকাচ্ছে, আজ তার ম্যানিব্যাগে শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। হয়তো মাস শেষ হবার আগেই কোন কলিগের কাছে টাকা ধার নিতে হতে পারে।
কিন্তু এই সব নিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেই কিবা লাভ? বিবাহিত জীবনে মনের টেনশনের চাইতে ঘরের টেনশন বেশি।ঘরের টেনশনকে ব্যালান্স করতে না পারলে- হয়তো শুনতে হতে পারে পাশের ফ্ল্যাটে তানিয়া ভাবীর হাজবেন্ডের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। পাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের তানিয়া ভাবীর হাজবেন্ডরা বরাবরই সেরা।

কিন্তু কি দুর্ভাগ্য, কোন নারীই পাশের বাড়ির তানিয়া ভাবীর মত হাজবেন্ড পায় না।
আর এভাবেই সুখ-দু:খ, চাওয়া-পাওয়া-না পাওয়ার মধ্যেই জীবন কেটে যায়।
শুধু মাঝে অবসরের একটু ফাকে- একটু ভাবনা আসে আবার যদি ছোট শিশুটি হয়ে বাবার হাত ধরে হাটতে পারতাম, বাবার কোলে বসে আইসক্রিম খেতে পারতাম। শুধু আর একবার!
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×