আজকাল অনেক প্রেমিক নিজেকে সম্রাট শাহজাহান ভাবে আর প্রেমিকা নিজেকে ভাবে মমতাজ। বানাতে চায় প্রেমের তাজমহল।
তাজমহল নাকি প্রেমের প্রতিক।
এই তাজমহলের কারণে অনেক মানুষ সম্রাট শাহজাহানকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে, কেউ কেউ আবার আদর্শ প্রেমিক ভাবে।
কিন্তু কেউ কি কখনও তাজমহল বানানোর পেছনের মানুষগুলোর কথা ভাবে? তাজমহলের জন্য ঘাম ঝড়ানো, রক্ত ঝড়ানো মানুষগুলোর কথা জানে? তাদের নামই বা কয়জন জানে?
আমরা কি সবাই জানি নদীর তীরে হাজার বছর টিকে থাকা এই আশ্চর্য্য তাজহমহলের নকশা কে বানিয়েছিলেন?
কাদের মেধা দিয়ে নির্মিত হয়েছিলো এই আশ্চর্য্য? কারা বানিয়েছিলেন এই বিখ্যাত তাজমহল?
কয়জনই বা জানি ওস্তাদ আহমেদ লাহুরি নাম, আবদুল করিম মামুর খান, মাকরামাত খান যারা সে সময়ের সবচেয়ে নিখুঁত, পারদর্শী ও উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং নকশাকার ছিলেন। কয়জনই বা আবদুল হকের নাম জানি, যাঁরা তাজমহলকে বিখ্যাত করেছেন।
ইতিহাসের সেই সব দিনে গেলে জানা যাবে- এই তাজমহল বানাতে মানুষের কষ্টার্জিত অর্থই ব্যবহার করা হয়েছে, লাখ লাখ মানুষের রক্ত, ঘাম ব্যবহার হয়েছে।
এই তাজমহলের কারণে অনাহারে কাটাতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হাত কেটে ফেলা হয়েছে, সেই সব কৃতি মানুষদের। তাদের অপরাধ ছিলো, তারা তাজমহলকে আশ্চর্য্যতে পরিণত করেছে, সৃষ্টি করেছে আশ্চর্য্য , বিখ্যাত করেছে তাজমহলকে, বিখ্যাত করেছে সম্রাট শাহজাহানকে।
যারা যাদের সমস্ত জ্ঞান ঢেলে দিয়ে তাজমহলকে আশ্চর্য্য রুপ দিয়েছিলেন, ইতিহাস কি পারতোনা, শাহজাহানের সাথে তাদের নামও সমভাবে উচ্চারিত করতে?
আমি কখনই তাজমহলকে প্রেমের প্রতিক হিসেবে দেখিনা। এটা কখনও শাহজাহানের প্রেমের প্রতিক হতে পারেনা। এটা শাহজাহানের নিষ্ঠুরতার প্রতিক, বর্বরতার প্রতিক, বিলাসিতার প্রতিক।
যারা তাজমহল দেখতে যান, তারা কি শুধু শাহজাহান-মমতাজের প্রেমই দেখতে পান, প্রেমের নিদর্শন দেখেন?
কখনই কি লাখ মানুষের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান না? দেখতে কি পান না লাখ মানুষের অনাহারের কষ্ট?
আমরা ইতিহাস রচনা করেছি শাসক শ্রেণীর পক্ষ নিয়ে, ইতিহাসে শুধু শাসক শ্রেণীর আশ্রয় হয়েছে। অসহায় মানুষের আশ্রয় ঘটেনি। আমরা কখনও অসহায় মানুষদের প্রাধান্য দিতে চাই না।
বার বার কি কারণে অসহায় মানুষদের কথা হারিয়ে যায়?
আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছি সেই সব অসহায় মানুষের প্রতি, আর করেও যাবো।
তাই হয়তো অভিশাপস্বরুপ বার বার শোষণের শিকার হচ্ছি।
আমার কাছে তাজমহল নির্মাণ আশ্চর্য্য নয়, তাজমহলে লাখ মানুষের আর্তনাদ শুনতে না পাওয়াটাই আশ্চর্য্য।