আমার এক একটা দিন ভুলে ভরা, আমার এক একটা দিন অগুছালো
আমার দিনগুলি কেটে যায় এলোমেলো এলোমেলো ।
কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না, তবে শুরু করছি।
সকালে অফিস..... টেনশন..টেনশন আর টেনশন...
বিয়েটা কখন হবে? কখন ঘরে বউ আসবে? বউ থাকলে সকালে এককাপ গরম চা আর খবরের কাগজ নিয়ে এসে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতো, না উঠতে চাইলে গরম চায়ে আমার হাতটা ডুবিয়ে দিতো। সকালের নাস্তা করানোর পর, খাবার দিয়ে দিতো, আর সুন্দর মিষ্টি একটা শাসন করতো খবরদার বাইরের খাবার খাবেনা। কি আর করা, মোবাইল অ্যালার্মের উপর নির্ভরশীল।
রাত সাড়ে ১১টায় সকাল সাড়ে ৬টার অ্যালার্ম দিয়ে রাখলাম। অ্যালার্ম দিয়ে রাখলেও বসের ভয়ংকর মুখখানির কথা চিন্তা করতে করতে ঘুম যাই। সকাল ৬.০০-৬.২০ এর মধ্যে ঘুম ভেঙে যায়।
সকালে উঠি....গোসল করে সাড়ে ৭ টার ভিতরে গাড়িতে উঠি, সাড়ে ৮টায় অফিসের কাছে চলে আসি, সকালের নাস্তা আশেপশের দোকানে করি। ৯ টার আগেই অফিসে ঢুকি, দেখি নজরুল আগেই এসে সব ঠিক করছে। সে সকাল ৭টায় অফিস আসে, আবার কখনও কখনও সকাল ৬টায় আসতে বাধ্য হয়।
সারাদিন অফিসে বস নাই, তাই ভারী কোন কাজ নাই।....অনলাইনে ছিলাম...সন্ধ্যা ৭টার পর বস আসলেন, কি একটা কাজে আটকে রাখলেন সোয়া আটটা পর্যন্ত।
তারপর বের হলাম। নজরুল ভাই তখনও অফিসে। বস সম্ভবত ৯টার পর বের হবেন। নজরুল তার পরে বের হবে।
কিন্তু নজরুলের বেতন কত?????
অফিস থেকে বের হবার একটায় ভয়, অফিসের বসের চেয়ে ভয়ংকর, ঢাকা শহরের বিখ্যাত সেই জ্যাম। অফিসের বসকে ত্যাগ করা যাবে, কিন্ত জ্যামকে??
বিখ্যাত আর কিছু টিকে থাকুক আর নাই থাকুক জ্যাম টিকে থাকবে।
রাস্তায় সারিবদ্ধ সব গাড়ি, সাধারণ মানুষের মত আমি হেটে চললাম, ক্লান্ত হবার গাড়িতে বসলাম।
বাসের জানালা দিয়ে দেখি প্রেমিক প্রেমিকার হাত ধরে হাটে। কেউ আবার বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়ায়, মনের ভিতর একটা আফসোস আফসোস ব্যাপার খেলা করে।
জ্যামে বসে বসে একটা স্বপ্ন দেখি, বিয়ের স্বপ্ন....কবে বিয়া হবে? প্রায় প্রতিদিন একটা স্বপ্ন দেখি..."অফিস থেকে বাসা যাবো, বউ ফ্রেশ হবার জন্য গামছা লুঙি আগাইয়া দিবে, তারপর টেবিলে ভাত দিবে, মাথার উপর ফ্যান ঘুরলেও, পাখা করবে (শীতকালে মুখে তুলে খাওয়াইয়া দিবে)" ভাত খাবার শেষে শাড়ির আচল দিয়া মুখটা মুছিয়ে দিবে। ...........ধূর আর ভালো লাগেনা..
গাড়ি ছাড়লো....... আবার কিছুক্ষন পর থামলো, এবার কোন জ্যামের কারণে না, যাত্রীর কারণে থামলো। ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো, জ্যামে আটকা ছিলো ৪০-৫০ মিনিটের মত, সেখান থেকে ঐ জায়গা হেটে যেতে লাগে ১০-১২ মিনিট। এতক্ষন ভদ্রলোকের মত বসে ছিলো।
আমাদের ভদ্রলোকই টা খুব বেশি। গাড়ি চলতে শুরু করলো...... জানালার পাশ দিয়ে, শহরকে দেখছি.......সুন্দর অপরিকল্পিত শহর।
যেই শহরের প্রধান রাস্তার এক লেনে প্রাইভেট কার পার্কিং করে রাখা, রিক্সা রাখা। মনে হয় তাদের বাবার রাস্তা। মানুষের জন্য ফুটপাত তো দোকানদারদের দখলে।
বড় বড় দালান কৌঠার নীচতালা সুন্দর সুন্দর দোকানে ভরপুর। কিন্ত এই সৌন্দর্য্য ছিলো বিরক্তিকর। একটুর জন্য মনে হলো, ক্ষমতা পেলে প্রত্যেক বিল্ডিং এর নীচতলার দোকানগুলো সরিয়ে ফেলে গাড়ি পার্কিং এর জন্য জায়গা করে দিতে। বিল্ডিং করে, কিন্তু গাড়ি পার্কিং করার জন্য কোন সুব্যবস্থা করে না। একটা আইন থাকা দরকার.......বিল্ডিং করার আগে গাড়ি রাখার জায়গা আগে করতে হবে। রাস্তায় কোন গাড়ি দাড়িয়ে থাকতে পারবেনা।
রাস্তায় দেখি বেশির ভাগ প্রাইভেট কার আর রিক্সা, বাসই বা কয়টা। একটা মানুষকে বহন করার জন্য একটা কার। কার দেখলে মনে হয় ধনীদের শহর এই ঢাকা শহর, কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার সময় সব ফকিরনির বাচ্চা হয়ে যায়, তাদের আচরণ দেখলে মনে হয় ভিক্ষা করে সংসার চালায়।
মনে হলো, ক্ষমতা পেলে একটা আইন করতাম, এই শহরে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছাড়া কেউ প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে না।
তাহলে হয়তো অফিসের বস বুঝতো বাসের অপেক্ষা, জ্যামের অমানবিক নির্যাতনের যন্ত্রণা। রাতে বাসা ফেরার দুর্বিষহ সেই যন্ত্রণা।
বাসে বসে বসে অনেক চিন্তাভাবনা মাথায় খেলা করে।
কেন জানি মনে হলো, ঢাকা শহরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতাল দিয়ে দিই, তাহলে রাস্তায় প্রাইভেট কার চলতে পারবে না। রাস্তাগুলো অন্তত সুখে থাকবে। হরতাল দেশের জন্য কল্যাণকর না হলেও ঢাকা শহরের জন্য কল্যাণকর।
এইসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় বাসায় আসলাম.....রাত সোয়া ১০টা।
আবার কাল অফিস......আবার সেই পুরনো স্বপ্ন............
এইভাবে চলছে আমার এক একটা দিন.............