উন্নত চিন্তা একটি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। উন্নত চিন্তার জন্য চিন্তার উন্নয়ন প্রয়োজন। সেজন্য উন্নত শিক্ষার প্রয়োজন।
জীবনে চিন্তার প্রভাব অনেক, চিন্তা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয়।
যেমন ধরেন- রাইট ভাতৃদ্বয়ের চিন্তা ভাবনায় বিজ্ঞান ছিলো, তাই তারা বিমান আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।
যদি সারাদিন বিজ্ঞান নিয়ে থাকা যায়, তবে সবকিছুর মধ্যে বিজ্ঞান দেখবেন।
হতাশা নিয়ে থাকেন, হতাশা দেখবেন।
যারা অভিনয় নিয়ে চিন্তা করেন, দিন দিন তাদের অভিনয় সুন্দর হয়।
বিরাট কোহলি তার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা করেন, তাই তার ব্যাটিং সুন্দর।
আমাদের অনেক ক্রিকেটার সেলেব্রেটি তারকা হবার চিন্তা করেন, তাই তারা নিজেদের ক্রিকেটকে সুন্দর করতে পারছেন না।
তাহলে সুন্দর চিন্তা বাছাই করার এখানে অতীব প্রয়োজন।
চিন্তা আমাদের পরিবেশ, অঞ্চল, সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়।
যাইহোক, বলছিলাম উন্নত চিন্তা আর উন্নত শিক্ষার কথা।
কোন এক লেখায় নেহেরুর একটা কথা পড়েছিলাম- যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় যত উন্নত, সে দেশ তত উন্নত।
এই কথা পড়ার পর ভাবনায় পড়ে গেলাম, আমাদের দেশের কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত?
একটা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে উন্নত হয়?
বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলাম, আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা কতটুকু উন্নত মানের?
বাজারে তাদের কবিতার বই, উপন্যাসের বই অনেক থাকলেও, নেই সেই পরিমাণে নেই পাঠ্যপুস্তক। বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চ শিক্ষান বই নেই বললেই চলে, আমরা বিদেশ নির্ভর বই পড়ি।
আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষকের চিন্তা উন্নত নয়। তাদের অনুন্নত চিন্তার ফল, শিক্ষার্থীদের উপর পড়েছে।
ফলস্বরুপ আমরা পাচ্ছি হতাশাগ্রস্থ একটি সমাজ। এবং এর সম্পূর্ণ দ্বায় চাপিয়ে দিচ্ছি রাজনৈতিক নেতা বা সরকারের উপর।
আমাদের দেশের ৮০% লোক গ্রামে বাস করে। তাদের ছেলেমেয়ে যে শিক্ষা পাচ্ছে, যে শিক্ষক পাচ্ছে সেখানে হচ্ছে বৈষম্য। সীমান্তবর্তী এলাকার ছেলেমেয়েরা তো আরো বঞ্চিত।
আমি গ্রামের ছেলে, আমি আমার স্কুল জীবনে ভালো সায়েন্সের শিক্ষক, ইংরেজি শিক্ষক পাই নি। আল্লাহর অশেষ দয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেখানে দেশের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সহপাঠী হিসেবে পেয়েছি।
তারা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় যেভাবে ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজি বলতো, আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে চেয়ে থাকতাম।
এতে আমার চিন্তার মাঝে মানসিক কষ্ট আসা যাওয়া করতে লাগলো। এই নেগেটিভ চিন্তা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
শিক্ষকের কথা যদি বলতে হয়, তবে বলতে হয়, তাদের অধিকাংশের পুস্তক ব্যতিত বাইরের জ্ঞান কম।
উচ্চশিক্ষার একটি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। সেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অংশ হচ্ছে জব মার্কেট। তাদের অধিকাংশই এই জব মার্কেট সম্পর্কে সম্পন্ন অজ্ঞ। ফলে তারা শিক্ষার্থীদের উন্নত চিন্তা গঠনে অবদান রাখতে পারছেন না।
ব্যর্থ হচ্ছে শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নত চিন্তার বিকাশ।
এই বিকাশ না ঘটার ফল হচ্ছে- সাড়ে তিনলাখের উপর বিসিএস পরীক্ষার্থী।
দেশের অধিকাংশ তরুণ সরকারী চাকুরীর দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত। উদ্দেশ্য বাকি জীবনটা একটু কম দুশ্চিন্তায় কাটে। দেশ সেবা দিন দিন মিথ হয়ে যাচ্ছে।
সরকারী চাকুরীর দুশ্চিন্তা একটি মারাত্নক ভাইরাসি রোগ।
যে ভাইরাস দেশের দুর্নীতিকে একভাবে সার্পোট দিয়ে যাচ্ছে।
কিভাবে?
ধরেন, একজন পুলিশ সদস্য তার পৈত্রিক জমি বেঁচা ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকুরীটা পেল। এখন সে কি করবে?
১০ লাখ টাকা তুলবে। এখানে সে দুর্নীতির আশ্রয়ে টাকা তুলবে। তার চিন্তা ন্যায় অন্যায় পরে দেখবে, আগে দেখবে ১০ লাখ টাকা।
অন্যান্য সরকারী জবের ক্ষেত্রে হয়তো তাই ঘটছে।
এখন বেসরকারি জবে, আমাদের অবমুল্যায়ন হচ্ছে।
প্রধান কারণ আমাদের দক্ষতার পর্যাপ্ত অভাব।
কোম্পানি গুলোতে আমরা কালো চামড়ার মানুষ, বিদেশীরা সাদা চামড়ার।
ভিকারুন্নেসার ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া যেখানে ইংরেজির জন্য তিনটি বই ( বোর্ড বই, গ্রামার বই, গল্পের বই) পড়ে, সেখানে তার গ্রামে বাস করা চাচাতো বোন সুরাইয়া ইংরেজীর জন্য বোর্ড প্রদত্ত বইটি পড়ে।
এখানে একটি পার্থক্য গড়ে উঠেছে।
তারপর আসি বিজ্ঞান শিক্ষায়, গ্রামের অনেক শিক্ষকরা এখনো বিজ্ঞানের অনেক বিষয় নিজেরাই বুঝে না, শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয় মুখস্থ করতে।
আপনি বলেন মুখস্থ বিজ্ঞান, বিজ্ঞান চিন্তার কতটুকু খোরাক দিবে?
আমরা শিক্ষা গ্রহণের আনন্দটুকু খুব একটা পাই না। আমাদের শিক্ষাগ্রহণ ৯-৬ টার মত।
অথচ বিদেশে ২৪ ঘন্টা।
বন্ধু ইকবাল বলে, তার সহপাঠি নাকি সারাদিন ল্যাবে পড়ে থাকে, ঐখানে খায়, ঐখানে ঘুমায়। চিন্তাভাবনায় শুধু গবেষণা।
আমাদের কি সে সুযোগ আছে?
বা আমরা কি সেই ধরনের চিন্তায় নিজেদের মগ্ন করি?
৬টার পর টিউশনি, তারপর প্রেমিকার গুণগুনানি, রাতে বিরহের গান। বিরহের গান রাতে দুশ্চিন্তার, হাহাকারের, স্মৃতিকাতরতার চিন্তা দেয়। যা মারাত্নক রকমের অপকারী।
সময় নষ্টকারী।
আমাদের তরুণদের হতাশার মূল কারণ সময়কে কাজে লাগাতে না পারা, সময় বিনিয়োগ করতে জানছি না। সময়কে কাটাতে চাই। সময় অপচয়ের অপরাধবোধ অনেক সময় মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এটার কারণ সঠিক চিন্তার অভাব।
বলতে বলতে অনেক কথায় বলে ফেললাম, শেষ করা প্রয়োজন।
আমাদের উন্নতির জন্য গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা প্রয়োজন। গ্রামে ভালোমানের ইংরেজি শিক্ষক, বিজ্ঞানের শিক্ষকের ব্যবস্থা করা দরকার।
এইচএসসি পাশ নারী শিক্ষিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইংরেজি, বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারছে না। তাদের জন্য আরো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে পারলে ভিতটা একটু শক্ত হবে।
হাই স্কুল পর্যায়ে, একটা ১ বছরের বা ৬ মাসের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিলে মন্দ হবে না।
দেশে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার খুব অভাব।
আমার শিক্ষক খুব ভালো ডিজাইনার, কিন্তু তার কাছ থেকে সে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ খুবই কম।
সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে উন্নতমানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন।
আশা করি, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একদিন উন্নত হবে, উন্নত হবে চিন্তা, উন্নত হবে আমার সোনার বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৩