ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় ঘুড়ি উড়ানোর প্রতি একটা অন্যরকম টান ছিল। আমাদের স্কুল ছুটি হত দুপুরে। বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া করেই বসে যেতাম ঘুড়ি নিয়ে
কিভাবে বানালে সেটা আরেকটু ভালভাবে উড়বে, কিভাবে একটু সুন্দর করা যায় ঘুড়িটাকে এসব নিয়েই পরে থাকতাম সারাদিন। এসব নিয়ে কত বিকেল যে কেটেছে বন্ধু সিয়ামের বাসার ছাদে তার কোন হিসেব নেই।
ঘুড়ি বানানোর মাপজোক নিয়ে তেমন কোন ধারনা ছিল না। আন্দাজের উপর বানিয়ে ফেলতাম। এসবের উপর সিয়ামের খুব ভাল আন্দাজ ছিল। ঘুড়ি বানানো শেষ হলেই পরবর্তী কাজ ছিল কোথায় বড় মাঠ আছে সেটা খুজে বের করা। যদিও ওদের ছাদ বেশ বড় ছিল কিন্তু আনটির কড়া নিষেধ ছিল ছাদে ঘুড়ি উড়ানোর উপর।
মাঝে মাঝেই ঘুড়ি সুতো ছিড়ে হারিয়ে যেত। কিন্তু তাতে কখনও আমাদের উৎসাহে ভাটা পরে নি এতটুকু। আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে নতুন করে ঘুড়ি বানাতে বসতাম।
গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানের অবস্থা ভিন্ন ছিল। বিকেলের দিকে পুরো আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা বসত। নীল আকাশের বুকে অসংখ্য বিন্দুর মত উড়ে বেড়াত ঘুড়িগুলো। বিশাল বিশাল সাইজের সে সব ঘুড়ি। তখন মাঝে মাঝে ভাবতাম বড় হয়ে অনেক বড় সাইজের একটা ঘুড়ি বানাব। সারা আকাশ দাপিয়ে বেড়াবে সে ঘুড়ি।
তখন গ্রামের হাটে তিন টাকায় ছোট সাইজের ঘুড়ি কিনতে পাওয়া যেত। একটু বাতাসেই অনেক উড়ত সেটা। হাট থেকে ঘুড়ি কিনে এনে সবাই মিলে উড়াতাম। হইচইয়ে মুখর হয়ে থাকত চারপাশ।
এখন আর তেমন একটা ঘুড়ি দেখি না আকাশে। এই ডিজিটাল যুগে এসে ঘুড়ি উড়ানোর মত ব্যাপারের বদলে জায়গা করে নিয়েছে কম্পিউটারে অতি উত্তেজনাকর গেমগুলো। কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় স্কুল থেকে ফিরে সারাদিন বসে বসে ঘুড়ি বানিয়ে সেটা আকাশে উড়ানোর মাঝে যে উত্তেজনা ছিল সেটার সাথে আর কিছুর তুলনা হয় না।
এখনও মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি একটা বড় আকারের ঘুড়ি বানানোর। তার সাথে অনেক লম্বা একটা সুতো বেধে আকাশে উড়িয়ে দেব। ইচ্ছেমত সুতো ছাড়তে থাকব। সুতো শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন সুতো এনে জুড়ে দেব। ঘুড়িটা গভীর নীল আকাশের মেঘের ভেলার মাঝে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আর আমি মাটিতে নাটাই হাতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকব সেটা আকাশে এক বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাওয়ার।