somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন তরুণী কবি !!!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“ভাবতেছি একটা নেকড়ে পালব।
যাতায়াত আর নিরাপত্তা দুইটাই হবে। কি চমৎকার!
আমি শীট পড়তে পড়তে নেকড়ের পিঠে ভার্সিটি যাচ্ছি।
নেকড়ের নাম হবে ক্রেডিটলস। রাঁধুনি মাংসের মশলা দিয়ে মেখে তারে ভাত খাইতে দিবো। দেখি কোথায় একটা বাঘেরবাচ্ছা নেকড়ে পাওয়া যায়।’’


কথাগুলো চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছেন রুবাইয়াত হাসান। তিনি একজন শখের কবি। মহিলাকবি নন, উনিশ বছরের একজন উচ্ছল তরুনী কবি। মাঝে মাঝে মনে হয় একালের সুফিয়া কামাল। আমি অবশ্য সুফিয়া কামালের কবিতায়ও এতো মজা পাই নি। সুফিয়া কামাল ভক্তরা মনে কিছু নিবেন না। আমিও সুফিয়া কামালের একনিষ্ঠ ভক্ত।


অধিকাংশ কবিরাই অজান্তেই ঝরে যায়। এই তরুনী কবির কি কোন গতি হবে? আমাদের মতো কবিতা প্রেমীদের জন্যই তার একটা গতি করা উচিৎ। যে কবিতা প্রেমীরা কবিতা খায় গপগপ করে। ভুষি মাখানো খড়ের মতো। গদ্য দিয়ে শুরু করেছি কবির কথা । এটা অবিচার হয়ে গেল। তার একটা কবিতার উদাহরন দেই। পাঠকরাই বিচার করুন কবির কাব্যপ্রতিভা...


“কন্যাঃ জানো না সিঁদুর পড়তে মানা,
যবন কে ভালোবাসা পাপ?
কুমারঃ তবুও যে ভালোবাসি…

কন্যাঃ বাবা বকবে লোকে মন্দ বলবে,
ভেঙে যাবে বিশ্বাস…

কুমারঃ তারপরেও ভালোবাসি…

কন্যাঃ তবে, ছিঁড়ে ফেলো সীমারেখা
সাত পাঁকে আগলে নাও জীবন…

কুমারঃ জানো না কূল জাত ভাঙা,
পতিত হওয়া অমঙল…

কন্যাঃ কি করবো, ভালোবাসি

কুমারঃ মা কাঁদবে, হব সমাজচুত্য,
বলি হবে সাধনা…

কন্যাঃ এরপর ও ভালোবাসি…

কুমারঃ তবে চলো পালাই অথবা পাল্টাই,
কবুল করে আঁকড়ে ধরো অসম্ভবের হাতছানি…

অসম্প্রাদায়িক প্রেম…দ্ব্যর্থবোধককবিতা…চলতে থাক জীবনের চাকা.…


আরেকটা সুন্দর কবিতার উদাহরন দিই। এই কবিতাটি পড়লে আমার যুক্তিবোধের সীমা চুর্ন-বিচুর্ন হয়ে যায়। লজ্জায় মাথা কেটে যায়। রক্তপাতহীন মস্তক খন্ডন।

“বেশ! বেশ! তেলগরম করছো তো,
আমিও নুনে মরিচে কসিয়ে নিচ্ছি;
আমাকে তুমি, তোমাকে আমি
খুবলে, খাঁমচে, কামড়ে রক্তাক্ত করব…
আমাদের লাশের উপর উড়বে বিদেশী শকুন…
তোমাকে আমি, আমাকে তুমি
চিনতেনা, জানতেনা, দেখোনি কভু, তবু কেনো…
আমরা একই জাতি নিজেদের রক্তে লাল করেছি হৃদয়,
তাদের অভিপ্রায়ে…


পাঠক আপনারাই বিচার করুন তরুনী কবির কাব্যপ্রতিভাকে। এই তরুনী কবিকে মাঝে মাঝে কাজী নজরুল ভেবেও ভুল করি। সেকালের নজরুল একালের রুবাইয়াত হাসানে পুনর্জন্ম নিয়েছে। এই নজরুল প্রতি সপ্তাহে আমাকে একটা করে চিঠি লেখেন। এখনকার ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে চিঠি লিখবে মহা বোকারা। এই কবি মনে হয় মহাবোকা। চিন্তা-ভাবনা বোকার মতো। মাঝে মাঝে বোকাদের ‘সেন্স অফ হিউমর’ হয় হীরার চাইতেও ধারালো। এই ধারালোঅস্ত্র দিয়ে সবচাইতে কঠিন কাঁচকেও কাটা যায়।

তরুনী কবি প্রায়ই ‘গল্পিতা’ লিখে আমাকে চমকে দেয়।

গল্পিতার শুরুটা হবে শক্তিশালী গল্পের মতো, শেষ হবে মহাশক্তিশালী কবিতা হয়ে। এই গল্পিতাগুলো আমার নিম্নমানের সাহিত্যের লাইন গুলোকে ঘচঘচ করে কেটে দেয়। বুঝিয়ে দেয় ‘ওরে গাধা, সাহিত্য বুঝতে হলে তোকে আরো পরিশীলিতহতে হবে’। তরুনী কবির একটা গল্পিতা বলি,

“হালকা শব্দ পাচ্ছি হাচঁড় পাচঁড় এর। অগত্যা চোখ খুললাম। জ়ানালা দিয়ে কে একজ়ন পালানোর চেষ্টা করছে। বললাম

‘কে?’
‘আমি, ভালোবাসা।’
‘পালাচ্ছো কেনো?’
‘আমার গুষ্ঠী কিলিয়েছো, পালাবো না!’

‘কিলাবো না! আমার কি ইচ্ছা ছিলো না, কেউ লাল গোলাপ নিয়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর আমি লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে বেণী দুলিয়ে চলে যাবো।’ ‘বোকা বালিকা, আমি তো এসেছিলাম ঔরসজাত ভালোবাসা হয়ে, ভাতের প্লেটে মাংসের বড় টুকরো তে মারামারি করা নিয়ে, চোখ রাঙানো শাসন হয়ে, অবান্তর খোঁচাখুঁচিতে..।’

‘তাই তো...!
যাও ভালোবাসা,
পাঁচটার বাসে ফিরে এসো,
এই শুনছো, খেয়ে নিয়ো।
দেখেশুনে পথ চলো, দিনকাল খারাপ।
হাত ছাড়ো কেউ দেখবে।
আমার জন্য কিন্তু...


মাঝে মাঝে আমারও রুবাইয়াত হাসান হওয়ার খায়েশ জাগে। একটা ছোট্ট বিষয় এমন সুন্দর করে লেখার ইচ্ছায় মরে যাই।মরে গেলে কি আর না গেলেই কি! কবিতা বের হয় না। ইচ্ছাগুলো দুর্বল ভাষার কবিতা হয়ে কলমের ডগায় উকি মারে।


কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যক্ষায় মরে গেলেন। মৃত্যুর পর হাসপাতালের বেডে বালিশের নিচ থেকে একটা কবিতা উদ্ধার করা হলো-কালজয়ী কবিতা। তার কবিতার দাপটে পুর্নিমার চাঁদ ঝলসে রুটি হয়ে গেল।


আমিও মাঝে মাঝে চাঁদ ঝলসাতে চেষ্টা করি। চাঁদ ঝলসে না- সাদা পাতায় কলমের চাপে ঝলসে যায় আমার হাতের আঙ্গুল।

একবার এক আঙ্গুল ঝলাসানো কবিতা লিখে তার ঠিকানায় পোস্ট করে দিলাম। পনের দিন পর চিঠি আসল। চিঠি পেয়ে আমি মহা খুশি। খাম খুললাম। আনন্দ উবে গেল। গোটা গোটা হাতে তরুনী কবি রুবাইয়াত হাসান লিখেছেন,


‘ওহে গর্ধব যুবক,
তাকাও...
দুর্বল ছন্দে, ধার করা গন্ধে
আঁকাও?
পরীদের বাস ভুমি,
কি লেখো ব্যাটা?
ছন্দের অন্ধে, দ্বীধাহীন দ্বন্দ্বে
লেখো এটা-সেটা।’


প্রিয় পাঠক, আমার লেখা ছন্দজ্ঞানহীন কবিতা মনে হয় তরুনী কবির আত্ম-সন্মানবোধে লেগেছে। আমি সবসময় ভয়ে ছিলাম এই কবিতা প্রকাশ হয়ে যাবে। তরুনী কবি প্রকাশ করে দিবে। সবাইকে জানিয়ে দিয়ে বলবে,


‘এক গর্ধবশ্রেনীর,দুর্বলমানের সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর যুবকের লেখা কবিতা এটা। আপনারাই বলুন দেশবাসী, এই শিম্পাঞ্জী পর্যায়ের সাহিত্যিকের কি কবিতা চর্চা করা উচিৎ?’’


আমি দীর্ঘদিন ভয়ে ভয়েছিলাম।

প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে গায়ের কালোঘাম ছুটে গেল। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। তরুনীকবি কিন্তু আমার কবিতাটা প্রকাশ করল না। কেন প্রকাশ করল না, জানি না। কবিদের মনেরভাব সবাই পড়তে পারে না। আমিও পারি না।


আমি পাঠকের মনের ভাব পড়ারচেষ্ঠা করছি। তারা কি এখন আমার দুর্বল মানের কবিতাটা শুনতে চাচ্ছে? যদি নাও শুনতেচায়, আমি শোনাব। লেখকদের মাঝে মঝে অনেক কিছু করতে হয়, যেটা পাঠক চায় না। এখন আমিসেই কাজটায় করব। আমার লেখা কবিতাটা ফাঁস করে দিব।


‘এটা কেমন সুর?
তুমি থামতে পার না?
হু হু হা হা......
হাঁসছ কেন শয়তানের মতো,খারাপ কি বললাম?
চারদিকের মাঠ নিস্তব্ধ হয়েএল।
একী একী? কি কান্ড?
আকাশ থেকে-
হুপহাপ হুপহাপ...
ডানাকাটা পরীরা পড়ছে-
ধুপধাপ ধুপধাপ...’
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×