প্রিয় মোবাইল সেট যখন হত্যাকারীর ভূমিকায়…।
মুল লেখার আগে কিছু কথাঃ
…।আর blog এ প্রবেশ করতে ইচ্ছা করেনা। লগইন করলেই দেখা যায় শেখ মুজিব, জেনারেল জিয়া, খালেদা, হাসিনা, কোকো, তারেক ও রাজনীতির কিছু বস্তা পচাঁ বুলি। স্তূপকৃত ডাসবিনের ময়লা যেমন নাড়াচারা করলে দূর্গন্ধ বের হয় তেমনি আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা মানে কিছু স্তূপকৃত ময়লা নাড়াচারা তারপর নোংরা মনের আবল-তাবল এবং চূড়ান্ত ফলাফল দূর্গন্ধ বিস্তার। আমাদের সমাজের এতো সমস্যা থাকতে আমরা কেনো যে এই অপছন্দনয়ীয় বিষয়টা নিয়েই বেশী লেখি তা ভেবে পাইনা। তবে ব্লগে এসে মনে হলো এই গুলো নিয়ে লিখলে বেশী পাবলিক মন্তব্য পাওয়া যায়। আমরা একটা ভালো কবিতা, গল্প, ছড়া পরে মন্তব্য করতে ভুলে যাই, অনুপ্রাণিত করতে কৃপণতা প্রকাশ করি অথচ সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় রাজনীতি আর চরিত্রহীন রাজনীতিবিদদের নিয়ে লিখলে মন্তব্য পড়তে পড়তে লেখক এর নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় থাকেনা।
তাই আজ আমি একটু ভিন্নধর্মী একটা লেখা লিখার ইচ্ছে নিয়ে লিখতে বসলাম। লেখাটা শুরু করার আগে বলে নেই, লেখাটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে দেখা একটা কেইস স্ট্যাডির বাংলা রুপ বলতে পারেন। আমি মূল বিষটাকে ঠিক রেখে নিজের মত করে লেখার চেষ্টা করছি, জানি না আপনাদের ভালো লাগবে কিনা? তবে বিষয়টি সময় উপযোগী বিধায় লেখার তাড়নাবোধ করলাম।
জনাব কিসমত আলী(কাল্পনিক নাম) ব্যবসায়ী, অর্থ বিত্তে পুরো আচ্ছাদিত। শখ হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান সমূহ ঘুরে দেখা। সময় পেলেই একা বেড়িয়ে যান শহরের কোলাহল ছেড়ে নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় একান্ত নিজের করে রাখার জন্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব সময় তাকে বিমোহিত করে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকেন অপলক দৃষ্টি নিয়ে। তাই কখনো একা, কখনো পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর যাবতীয় নামকরা স্থান সমূহ। কখনো সমুদ্র সৈকত, কখনো হিমালয়, পামির মালভূমি, নায়াগ্রা জলপ্রপাত, আগ্রার তাজমহল, মিশরের পিরামিঠ, ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান, নেপালের পাহার চূড়া, পৃথীবির দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, সাগর কন্যা কুয়াকাটা কোনো জায়গা তার বাদ নাই, যেখানে তার পায়ের ধুলো পরেনি।
তার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় “মার্চ-এপ্রিল” মাসে ভ্রমনে বের হলেন, ধরে নেই ওনি ঐ সময়টায় বাংলাদেশ ভ্রমনে এসেছিলেন(গল্পের সুবিধার্থে বাংলাদেশের কক্সবাজারের নাম উল্লেখ করলাম) এবং সমুদ্রের সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য গিয়েছিলেন আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অহংকার পৃথীবির দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এপ্রিলের এক সন্ধ্যায় বসে আছেন হোটেল রুমের বারান্দায়। আকাশে কাল বৈশাখীর ঘনঘটা, বার বার বিদ্যুত চমকাচ্ছে। ঝড় হবে বলে মনে হচ্ছে। কিসমত সাহেব বসে আছেন আর দূর থেকে সমুদ্র গর্জন শুনছেন। এমন ঝড়-বাদল নির্জন সন্ধ্যায় নিজেকে খুব একা ভাবতে লাগলেন। মনে পরে গেলো তার প্রিয়জনদের কথা। ছেলে-মেয়ে, প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা। রুম থেকে মোবাইলটা এনে কথা বলার জন্য ফোন দিলেন নিজ দেশে থাকা স্ত্রীকে। ওপাশ থেকে প্রিয়তমা স্ত্রীর কন্ঠ শুনে বিরহী সন্ধ্যা যেনো মধুর হয়ে উঠলো। শুরু হলো প্রেমালাপ। সন্তানদের খোজ-খবর। এই দিকে আকাশে ঘনঘন বজ্রপাত। ঘুট ঘুটে অন্ধকার চারিদিক। কোথাও কোনো মানুষ নেই। হোটেল বয়গুলো ভয়ে আটোসাটোঁ হয়ে নিজেদের কামড়ায় বসা। কিসমত সাহেব কথা বলে যাচ্ছেন চেয়ারে বসে। কথা বলতে বলতে এক সময় তার কথা থেমে গেলো চিরদিনের জন্য। তিনি এই পৃথীবির সমস্ত মায়া-মমতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিদায় দিয়ে চলে গেলেন চির ঘুমের দেশে।
প্রিয় বন্ধুরা আমার গল্প এখানেই শেষ হতে পারতো, তাহলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে বসেছি সেটা সম্পূর্ণ হতো না। কিসমত আলীর আকস্মিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে শুরু হলো তদন্ত। কোনো কিছুতেই তার মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হচ্ছিলোনা। সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা যখন ব্যার্থ, তখন সিদ্ধান্ত হলো তার লাশ ময়না তদন্ত করে দেখা হোক কেনো তার আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু হলো। যেমন কথা তেমন কাজ। একদল বিশেষঙ্ঘ চিকিত্শক তার লাশের ময়না তদন্ত শুরু করলো। লাশ কাটা ঘড়ে যখন তার লাশ চিরা হলো দেখা গেলো ভেতরে সব পোড়া। চিকিত্শকদের কাছে মনে হলো ভেতরে কেউ যেনো আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিলো। শরীরের কোথাও কোনো চিহ্ন নেই, ক্ষত নেই, আঘাত নেই, ভেতরে কেনো পোড়া? শুরু হলো ডাক্তারদের নতুন করে গবেষণা। শুরু হলো রহস্য উদঘাটনের জন্য নতুন মিশন।
বিশেষঙ্ঘ চিকিত্শক দল, তার মৃত্যু স্থান পরিদর্শন করলেন, সবার সাক্ষাত্কার নিলেন। পরিবেশ-পরিস্থিতির খোজ নিলেন। তার মোবাইলের খোজ নিলেন। তার রুমের সংলগ্ন নিচের লনে তার পরিত্যক্ত মোবাইলটি পাওয়া গেলো। জানা গেলো যেদিন সে মারা গেছেন সেইদিন সন্ধ্যায় সেখানে প্রচন্ড ঝড় এবং সাথে বিশাল বিশাল বজ্রপাত হয়েছিলো। বিশেষঙ্ঘ ডাক্তাররা তার মোবাইল চেক করার জন্য মোবাইল এক্সপার্টের কাছে নিয়ে গেলো। মোবাইল পর্যবেক্ষন করে দেখা গেলো সেই দিনের সন্ধ্যায় যে বজ্রপাত হয়েছিলো, সেই বজ্রপাতের একটা বিসাক্ত রশ্মি মোবাইল সেটের এন্টেনা দিয়ে তার শরীরে প্রবেশ করে এবং সেটা এতোটা ক্ষমতাশীল ছিলো যে ভেতরের সমস্ত অঙ্গ-পতঙ্গ পুড়ে জ্বলে গিয়েছিলো যার ফলে কিসমত সাহেব মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছিলেন।
প্রিয় পাঠক বন্ধু আমি জানি আমাদের সবার কাছে দামী একটা মোবাইল সেট কত প্রিয়। তাছাড়া আমরা যখনি একা থাকি বা একাকীত্ব অনুভব করি তখনি আমরা প্রিয়জনকে কল দেই, আমরা স্থান, কাল, পরিবেশ চিন্তা করিনা। নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে কথা বলি, এটা কী খুব বেশী দরকার? আমরা কী পারিনা একটু সর্তক হয়ে চলতে? নিজের জীবনকে নিরাপদ রেখে শখের বা প্রয়োজনীয় মোবাইলটি ব্যবহার করতে? আমাদের দেশের অনেক ছেলে মেয়ে, বয়স্ক লোকদের দেখি, বৃষ্টির দিনে, চলন্ত গাড়ীতে, গাড়ী চালানো অবস্থায়, শহরের রাস্তা ক্রসিংয়ের সময়, হাটার সময় কানে মোবাইল লাগিয়ে অসাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলে, যা তারা নিজেও জানে না যে কতোটা ঝুকি নিয়ে কাজটা করছে। এর জন্য যে তাদের জীবনটাও চলে যেতে পারে সেটাও তারা ভাবেনা।
তাই প্রিয় পাঠকদের কাছে অনুরোধ অন্তত ঝড়-বৃষ্টির দিনে, বজ্রপাতের দিনে আমরা যেনো মোবাইলটা সাবধানে ব্যবহার করি, বাড়ির সবায়কে যেনো ব্যাপারটা শেয়ার করি। এটা একটা সত্য ঘটনা এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে বেশ কয়েকবার দেখিয়েছে। যারা দেখেছেন তারা ব্যাপারটাকে হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি ঘটনাটি কতোটা ভয়াবহ এবং আমাদের জীবনের জন্য কতোটা হুমকি স্বরুপ। একটু ভুলের জন্য জীবনটা যে কোনো সময় নিবে যেতে পারে। জন্ম-মৃত্যু যদিও আল্লাহর হাতে তারপরও আমাদের সাবধান হতে হবে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। বজ্রপাতের সময় কথা বলে মৃত্যু না হয়ে অঙ্গ হানী হতে পরে, কানে শুনার সমস্যা হতে পারে। হৃদ রোগ হতে পারে। আসুন আমরা প্রিয় মোবাইল ব্যাবহারে সতর্কতা অবলম্বব করি, নিজে বাচিঁ অন্য কে বাচাঁনোর জন্য সচেষ্ট হই
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৩৪