somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এখন শহুরে আদলে গড়া অন্য মানুষ।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মান্যবর,
অপরাধ নেবেন না, আমি এখন পুরোদস্তুর শহুরে মানুষ। গাঁওগেরাম আর পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির রঙ বহুকাল আগেই ভুলে গেছি। কোন এককালে আমার দাদাজান নিজ হাতেই কষতেন লাঙ্গল, আমার বাবাও করতেন, এটা আমার জন্য ঘেন্না বিশেষ! বাজানের কোদাল হাতুড়ির ঠোকাঠুকি এ বোধকরি অপমানকর কথাই; কেননা আমি এখন শহুরে আদলে গড়া অন্য মানুষ।

ছোট্টবেলায় নাট্যমন্দিরে যাতায়াত, দাদীর কোলে বসে শোনা রূপকথা, অথবা উদাসী বোষ্ঠমের দানে ভিজে যেত দুচোখের পাতা, বোষ্ঠমের বিরহে। দয়া করে এসব কথা মনে করিয়ে দেবেন না, কেননা,বহুকাল আগেই ভুলে গেছি ওসব। আমি এখন শহুরে আদলে গড়া অন্য মানুষ।

ভাবতেও চাই না ধানী জমির আল ধরে মায়ের পুঁটুলিতে বেঁধে দেওয়া পান্তা ভাত পৌঁছে দিয়েছি বাজানের হাতে কোনকালে। অথবা বাজানের ভাত খাওয়ার ফাঁকে ধরেছি লাঙলের গুটি নিজ হাতেই। হাড়সিলে হাভাতে ছেলেমেয়েদের সাথে খেলেছি গোল্লাছুট, বৌচি, গেয়েছি পালাগান সেজেছি যাত্রার নট। অথবা বৌচি খেলতে খেলতে ভালোবেসে ফেলেছি পাশের বাসার কুসুমকেই। শ্রাবনের ভরা বর্ষায় একান্তেই কাছে এসেছি দুজন শাপলা তোলার ছলে জ্যোৎস্না রাতে ডিঙি নায়। অথবা বুকে জড়িয়ে ধরে ভিজে হয়েছি একাকার বৃষ্টিতে। ‘বউ’ করব বলে দিয়েছি বারংবার প্রতিশ্রুতি, বিনিময়ে ভোগ করেছি শ্রেষ্ঠ ধন তার! এসব তখন নিতান্তই কথার কথাই বোধ করি, কেননা সে এখন নিশিপুরের মিঞাবাড়ির লক্ষী কূলবধূ। আর আমি শহুরে আদলে গড়া অন্যরকমের এক মানুষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডরে গো-বেচারা বলে তিরস্কারকারী সহ-পাঠিনীর একান্ত বাধ্যগত ভদ্র স্বামী। তাই দয়া করে পুরোনো কাসুন্দী ঘেঁটে আমাকে অপমানিত করবেন না। কেননা, আমি ওসব স্বীকার করি না, পাছে কেউ কিছু বলে উপহাস করে। অবলীলায় তাই অস্বীকার করি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমিও ছিলাম। ৩০লাখ শহীদের হতে পারতাম আমিও একজন। যদিও দেখেছি মাতৃভূমিকে ভালবেসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্য; আমিও সারথি ছিলাম তার। যদিও জানি, দুলাখ মা-বোনের ইজ্জতের মধ্যে আমার স্নেহের বোনও ছিল অথবা ছিল প্রেমিকা কুসুমও, তবুও স্বীকার করি না ওসব। স্বীকার করি না কখনো, আমিও ফ্রন্টে ছিলাম দীঘ ন'মাস এই দুহাতে অস্ত্র ধরে লড়াই করেছি। কুসুমের জন্যই মৃত্যুকে করেছিলাম সোনালী যৌবনের প্রতিশ্রুতি।

কী লাভ ওসব কথায়?
আমি শহুরে আদলে গড়া অন্যরকমের এক মানুষ।

ইদানিং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে হয়ে গেছি নব্য রাজা। উচ্চ বিত্তের বাজারে ছুটন্ত ঘৌড় সওয়ারী এবং একে একে উপরে ওঠার সিঁড়ি যাচ্ছি টপকিয়ে, তাই কলমটাকে এদিক ওদিকে চালিয়ে দিচ্ছি নির্দ্বিধায়। কেননা এখন বুঝেছি ক্ষমতা টাকার কাছে প্রেম বড় বেশী বেমানান। যুদ্ধজয়ী সৈনিক তাই এখন খোঁজে না তার প্রেমিকাকে। কারণ ক্ষমতাবানদের থাকতে নেই চক্ষুলজ্জা। তাই বাজানের ধানী জমির বদলে কিনেছি বিরাস। শুনেছি সে বাজান নাকি গত হয়েছেন বহুদিন, মা কলেরার কল্যাণে কবরে আছেন নিশ্চিন্তে।

অতএব এও বুঝেছি আসলে এ গেঁয়ো দেশে জন্ম হলেও, আমি বাঙালী নই। তাই সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখব বলে ভাবছি। এবং নিউইর্য়ক বা ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়ী করব বলে ঠিক করেছি।

মান্যবর,
এবার আপনিই বলুন আমি কি খুব বেশী অন্যায় করেছি?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০১
১৯৭টি মন্তব্য ১৯৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×