যখন সংবাদে শুনি, ৭৬৯জন হাজী পদদলিত হয়ে মারা গেছেন তখন যেমন ভীষণ কষ্ট লাগে প্রসঙ্গত কিছু প্রশ্নও তৈরী হয়। যেমন পা দিয়ে পিষে মানুষ হত্যা করা কতটা ইসলাম সম্মত? একজন মুসলমান ভাই যদি আমার সামনে পিছলে পড়ে যায় তবে আমার কী করনীয়? তার বুকের উপর, কাল্লার উপর পাড়া দিয়ে সামনে এগিয়ে যাব? যদি এটি ঠিক না হয়ে থাকে, অন্যায় হয়ে থাকে তবে কেন হজে গিয়ে এতো মানুষকে পায়েরতলে পড়ে জীবন দিতে হল? তাহলে কি এটি মহা হত্যাকান্ড? একজন মুসলমান আরেকমুসলমানকে সহযোগিতা করবে এটি স্বাভবিক। তা না করে যদি পায়ের তলায় পিষে মারি তবে আমরা কেমন মুসলিম?
শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। শুধু শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য হলেই কি হজে চলে যাব! কোনটা মানুষের পিঠ, কোনটা পেট, কোনটা মাথা কোনটা রাস্তা এটা যদি না বুঝি, যদি আমি নির্বোধ হয়ে থাকি? অন্যের পথচলায় সুযোগ করে দেয়া, কেউ পড়ে গেলে তাকে সহযোগিতা করা, ধৈর্য ধারন করা তো মুসলিমের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এসব গুণ যদি নাও থাকে তবে অন্তত কাউকে পায়ে পাড়িয়ে মেরে ফেলা যায় না, এটা অন্তত মানুষ মাত্রই জানা থাকার কথা। যদি আমি এটাও নাবুঝি তাহলে তো আমি উল্মাদ শ্রেণীর! আর উল্মাদের তো হজ ফরজ নয়। নাকি? যেসব হাজি সরকারি বেসরকারিভাবে হজ করতে যাচ্ছেন তাদের ঠিকমতন ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে না। এ তথ্যও আমাদের অজানা নয়! আসলে পচন সবখানে...
সৌদি সরকারের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গ আসবেনা কেন! কোন হাজি টাকা না দিয়ে মাঙনা হজে গিয়েছে বলে তো শোনা যায় না! তাহলে? ক্রেন ছিড়ে পড়ে হাজি মারা গেল! সৌদি সরকার কেন আগেই ক্রেনগুলো কতটা টেকসই তা পরীক্ষা করে নিলেন না? মানুষমারা ফাঁদ তৈরী করে রাখলেন?
বলতে শোনা যায়, ইরানের কোন এক হাজির দল নির্দেশ অমান্য করায় পদদলিত হয়ে ৭৬৯জন ডেড। তো, কিভাবে নির্দেশ দেয়া হল যে, ইরানের হাজিরা পাজিগিরি করল? তাদের কেন আঁটক করলেন না, বা তাৎক্ষণিক আটকের ব্যবস্থা রাখলেন না, এঘটনা তো নতুন নয়, তাহলে? মানুষ হজে যাবে নাকি আপনাদের অব্যবস্থাপনার জন্য মরতে যাবে!? পৃথিবীজুড়ে কেন হজ সম্পর্কে একটা বাজে ম্যাসেজ ছড়িয়ে পড়ল? যদি না পারেন তবে দায়িত্বভার ছেড়ে দেন। যেখানে মুসলিমরা অনবরত মার খেয়ে যাচ্ছে সেখানে একটা শক্তিশালী মুসলিম দেশ সময়মত কোন কথা বলবে না, শুধু টাকা ইনকাম করতে থাকবে! এ হয় কি করে!
হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই। আপনি আমাদের হেফাজত করুন। আপনিই হেফাজতকারী। আমাদের আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যের পাশাপাশি জ্ঞান দান করুন। আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি আমাদের ক্ষমা করুন।