এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় - এই লাইন যিনি লিখতে পারেন নিশ্চয় তিনি বড় মাপের কবি। তাকে কমবেশি সবারই চেনেন- তিনি হেলাল হাফিজ। তার লিখার প্যাটার্ন কিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তা দেখে কষ্ট লাগে। তিনি একটা সময় লিখেছিলেন-
কোনদিন, আচমকা একদিন
ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,-
‘চলো যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই’,
যাবে?
এরকম সস্তা পদ্য তিনি লিখেছেন কিন্তু কখনোই তাকে সস্তা মনে হয় নাই। যেমন অশ্লীল সভ্যতা শিরোনামে লিখেছিলেন-
নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না !
তর্ক বিতর্ক থাকলেও এই সামান্য লাইন তাকে অসামান্য করেছে বলে মনেকরি। কিন্তু আজকের পত্রিকায় তার যে অনুকাব্য ছাপিয়েছে তাতে সস্তা বলার সাহস যে কেউ পেয়ে যাবেন। ভোরের রমণী শিরোনামে তিনি লিখেছেন-
রাধা রাত শেষ
আলুথালু কেশ
বাসি চোখ–মুখ
খোলা চারু বুক
সুখ সুখ সুখ!
জনাব, ভুলে গেলে চলবে না- সাহিত্য আর আর চটির মধ্যে কিঞ্চিত তফাৎ আছে বলেই আমরা চটি ছেড়ে সাহিত্য পড়ি।
হঠাৎ চটির অশ্লীল সুখ সাহিত্যে পাওয়া শুরু করলাম কবে থেকে- বলতে পারেন? যেদিন থেকে আমরা ভাবতে শুরু করেছি- যে কোন মূল্যে আপনার আমার অবৈধ চিন্তাকে অনুষ্ঠান করে বৈধ বলে লেভেল লাগিয়ে দিলেই মামলা খালাস; সেদিন থেকে।
সিদ্ধ হোক আর নিষিদ্ধ হোক কারো কলমকে তো আর থামানো যাবে না। তাছাড়া সত্যিকারের কবিরা তাই লিখেন যা তারা দেখেন ও অনুভব করেন।
আশ্বিন মাসে রাস্তার কামুক কুকুরির মত যদি হয় আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তাহলে তো কবিরা কবিতা লিখা ভুলে যাবেন। বাংলার শিল্প সংস্কৃতি ভুলে যদি আমরা সেন্ট ভ্যালেনটাইনের পুজা শুরু করি তাহলে কবিরা কবিতার পাতায় খিস্তি রচনা করেই আমাদের শোনাবেন। বিবেকহীন কুকুরের কাছে এটা স্বাভাবিক মনে হতে পারে কিন্তু মানুষের মাত্র এ ব্যপারে সচেতন হতে হবে।
শুরু করেছিলাম যে লাইনটা দিয়ে সেই লাইনটাই সবাই জানেন কিন্তু ওই কবিতটার শেষের দিকে আরো কয়েকটি প্রাসঙ্গিক লাইন আছে যা জানা প্রয়োজন।
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৩