13 অক্টোবর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলাম। নোবেল পাওয়ার উচ্ছ্বাসে ড. ইউনূস আমাদের জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, '13 অক্টোবরের আগের আর পরের বাংলাদেশ এক নয়। এখনকার বাংলাদেশ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে। দুনিয়ার সামনে আমরা মাথা উচু করে দাড়াতে পেরেছি। বাংলাদেশ যে উচুতে চলে এসেছে আমরা আর সেখানে থেকে নিচে নামবো না।'
ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে নিতান্ত উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে এমন কথা বলেছিলেন, তা কিন্তু নয়। আমরা আসলেও আকাশের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলাম। ইমিগ্রান্ট বাংলাদেশিদের বুকের ছাতি ফুলে গিয়েছিল দেড়হাত। সব হীনমন্যতাকে ঝেড়ে ফেলে বিদেশিদের কাছে বুক ফুলিয়ে তারা বলতে শুরু করেছিলেন, 'উই আর নোবেল লরিয়েট নেশন'।
কিন্তু ব্যবধান মাত্র 14 দিনের। বাংলাদেশ আবার নিচে নেমে গেল। যাকে বলে অতলান্তিক অবনমন। এ যেন শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যাশাকে ফালা ফালা করে শান্তিতে নোবেল অর্জনকারী বাংলাদেশের অশান্তি বিদেশিদের কপাল কুচকে দিল। লগি-বৈঠার আঘাতে টগবগে যুবকের মৃত্যুর দৃশ্য টেলিভিশনের পদর্ায় দেখে বিশ্ববাসী বিমুঢ় হয়েছে।
এ এক ভীতিকর দৃশ্য। এক জীবনে এমন জীবন্ত দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য বা দুভর্াগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। নাটক-সিনেমার চিত্রায়িত মেকি দৃশ্য এ নয়। একেবারে টাটকা, নিখাদ দৃশ্য। পরাবাস্তব নয়, অতি বাস্তব। কিন্তু এমন বীভৎস, পৈশাচিক বাস্তবতা মানুষের সহনশীলতার মাত্রায় একটি ঝাকুনি দিয়ে যায়। শিশুরা এ ঝাকুনির তাণ্ডবে কাহিল হয়ে পড়ে। নারীরাও। আর সভ্যভব্য পুরুষদের মনোজগতে একটা ঘৃণার ছলাৎ ছলাৎ জলোচ্ছ্বাস উথলে ওঠে।
বিশ্বের সুশীল সমাজ এ জীবন্ত দৃশ্যের নটবরদের ছাল-বাকল পরা মানসিকতার সনদ দেয়। প্রতিদিনই বিশ্বের এখানে সেখানে অসংখ্য মানুষ খুন হচ্ছে। কিন্তু টিভি ক্যামেরার ফোকাসের আওতায়, প্রকাশ্য রাজপথে, হাজার মানুষের জটলায় এ রকম মৃতু্য-উৎসব এক নজিরবিহীন ঘটনা।
কিন্তু এ রকম নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতাই আমরা দেখলাম। ক্ষমতা দখলের উন্মত্ততা আমাদের বেসামাল করলো। আমরা লগি-বৈঠার আঘাতে আমাদের প্রতিপক্ষের মৃতু্য নিশ্চিত করলাম। প্রতিপক্ষ নিহত হলো। প্রতিপক্ষের অশ্রুত আর্ত-চিৎকারের সঙ্গে মানবতাও যে খুন হলো, তা ভাবার সময় কিন্তু আমাদের নেই। এসব ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। তাইতো এ বর্বর দৃশ্যের নিউজ ভ্যালু অপরিসীম। সাংবাদিকরা এসব দৃশ্যের জন্য মুখিয়ে থাকেন। এমন একটা দৃশ্যের চিত্রায়ন অনেকের ক্যারিয়ারকেই মসৃণ করে দেয়।
বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া এমন একটি নজিরবিহীন, জীবন্ত দৃশ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দেয়। অখ্যাত বাংলাদেশের নিজস্ব শব্দ 'লগি-বৈঠা' পেয়ে যায় বিশ্ব পরিচিতি। লগি-বৈঠার আঘাতে মানুষ মারার দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।
লগি-বৈঠা! এ আবার কোন ধরনের অস্ত্র! পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, মেশিনগান ইত্যাদি অস্ত্রের কার্যকারিতা জানা আছে। এমনকি রাসায়নিক অস্ত্র, পারমাণবিক অস্ত্র, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের মতো সভ্যতাবিনাশী মারণাস্ত্রের কথাও শোনা হয়ে গেছে। কিন্তু লগি-বৈঠার নাম তো আগে শোনা যায়নি। অনেক বিদেশি এ অভিনব অস্ত্রের কার্যকারিতা জানতে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশি কাউকে হাতের কাছে পেলেই বিদেশিরা ছেকে ধরে- 'হাই ম্যান, হোয়াট ইজ লগি-বৈঠা'? না, এটা কোনো কল্পিত, মনের মাধুরী মেশানো ডায়ালগ নয়। 4 নভেম্বরের দৈনিক নয়াদিগন্ত আমাদের এ খবর জানিয়েছে। ড. ইউনূস আমাদের যে উচ্চতায় উঠিয়েছিলেন, অপরিণামদশর্ী লগি-বৈঠাওয়ালা পলিটিশিয়ানরা এক ধাক্কায় সে উচ্চতা থেকে আমাদের ছিটকে ফেলে দিয়েছেন গিরিখাদে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আমরা আর নামবো না। কিন্তু মাত্র 14 দিনের মাথায় তার প্রত্যাশা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা অনেক নিচে নেমে গিয়েছি। কেউ কেউ বলতে পারেন, ড. ইউনূস এমন কথা কেন বললেন? বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তার দূরদৃষ্টিকে পেছনে নিয়ে যাবে, এ কেমন কথা! আসলে আনন্দে আত্মহারা হয়েই তিনি এমন কথা বলেছেন।
প্রফেসর ইউনূস নোবেল প্রাপ্তিতে অভিভূত হয়েছেন, উচ্ছ্বসিত হয়েছেন সত্য। কিন্তু উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার মানুষ তিনি নন। তিনি বাংলাদেশকে জানেন, বাংলাদেশের মানুষকে জানেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারও তার অজানা নয়। পলিটিশিয়ানদের চেনেন তিনি হাড়ে হাড়ে। এ দেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি একাধিকবার মুখ খুলেছেন। তার স্বপ্নের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের। সৎ প্রাথর্ী বাছাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু পলিটিশিয়ানরা তার পরামর্শকে আমলে আনেননি কখনো।
কেনই বা আনবেন? পলিটিশিয়ানরা রাজনীতির কথা ভাবেন ক্ষমতাকে সামনে রেখে। আর প্রফেসর ইউনূস রাজনীতির কথা ভাবেন দেশের মানুষকে সামনে রেখে। ভাবনার এ ফারাক পলিটিশিয়ানদের কাছ থেকে ড. ইউনূসকে বিকর্ষিত করেছে।
পলিটিশিয়ানরা তাকে নিয়ে উন্নাসিকতা দেখিয়েছেন। কিন্তু তবুও তিনি বিশ্বাস হারাননি। কারণ তিনি জানেন, বিশ্বাস এক মহাশক্তি। মানুষই তো মানুষের ওপর আস্থা রাখবে, বিশ্বাস করবে। মানুষের প্রতি এ বিশ্বাসই তাকে পৌছে দিয়েছে অতি উচ্চতায়। কপর্দকহীন নিঃস্ব মানুষ, জানা ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় কেউ যাদের বিশ্বাস করেনি, তিনি তাদেরও বিশ্বাস করেছেন। নিঃস্বতার আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা মানুষের কর্মক্ষমতাকে তিনি জাগিয়ে তুলেছেন বিশ্বাসের খোচায়। আমরা যাদের অক্ষরহীন মূর্খ বলে ভদ্রতার মুখোশ পরে এড়িয়ে যাই, তিনি তাদের জড়িয়ে নেন বিশ্বাসের চাদরে।
প্রথম প্রথম তার আত্মীয়-পরিজনরা এ বিশ্বাস করাটাকে পাগলামি বলে উপহাস করতো। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, বড় মানুষদের পাগলামিই সভ্যতার পরতে পরতে লেগে আছে। কপর্দকহীন মানুষকে বিশ্বাস করে তিনি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। বিশ্বকে তিনি সে ইতিহাসের মন্ত্র দিলেন। বিশ্ব তার কাছে থেকে নিল এবং নিজেদের মহিমানি্বত করলো। কিন্তু বাংলাদেশের এক শ্রেণীর পলিটিশিয়ান তার কাছ থেকে কিছুই নিলেন না।
তবুও বিশ্বাস করে গেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ঘোষণা করলেন, আমরা আর নিচে নামবো না। হয়তো ড. ইউনূস বিশ্বাস করছিলেন, ক্ষমতালিপ্সায় বুুদ হয়ে পলিটিশিয়ানরা যতোই আস্ফালন করুন না কেন তারা দেশকে অন্তত কখনও নিচে নামাবেন না।
বিশ্বাস নিয়ে যার কারবার, তিনি কি এতোটুকু বিশ্বাস মানুষের ওপর করবেন না? তারা তো আর হেজিপেজি মানুষ নন। অতি উন্নত শ্রেণীর শিক্ষিত, পোশাকে-আশাকে মার্জিত, দেশের সবচেয়ে এলিট শ্রেণীর মানুষ তারা। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের বিশ্বাস এখানে এসে হোচট খেলো। বেদনাহত বিস্ময়ে তিনি দেখলেন, মাত্র 14 দিনের ব্যবধানেই আমরা অনেক নিচে নেমে গিয়েছি। এতো নিচে যে, বিদেশে আমাদের ভাই-বোনদের এখন বিব্রত হয়ে শুনতে হয়- 'হোয়াট ইজ লগি-বৈঠা?'
27, 28, 29 অক্টোবর - এ তিনটি দিন আমাদের জন্য ঘোর অমানিশার মতো কলঙ্কের। এই তিন দিনে বিশ্বের কাছে আমাদের খোয়া গেছে অনেক কিছু। শান্তিতে নোবেল পেয়ে আমরা যে উচ্চতায় উঠেছিলাম, এই তিন দিনের কলঙ্ক টেনে-হেচড়ে সেখান থেকে আমাদের নামিয়েছে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, আমাদের উচ্চে তুলে ধরা প্রফেসর ইউনূসকে চায়না, কোরিয়া, জাপান সম্মান দেখিয়ে, শ্রদ্ধা দেখিয়ে নিজেরা সম্মানিত হলো। বাংলাদেশের কৃতী সন্তানকে 'সান অফ এশিয়া' ঘোষণা করে জাপান আরো ওপরে উঠে যায়।
অথচ এ সময়েই আমাদের পলিটিশিয়ানদের একটি অংশ নজিরবিহীন কলঙ্কের চিত্রনাট্যে রসদ যুগিয়ে যান। বিদেশি কূটনীতিকরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান পলিটিশিয়ানদের কাছে। অনেক উপদেশ খয়রাত করেন তারা। মাথা গরম না করার জন্য বিদেশিরা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
সহপাঠীদের হাতে নিগৃহীত বালকের আক্রোশ নিয়ে আমরা বিদেশিদের অভিভাবকের আসনে বসিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর বিষ ঢালি। বিদেশিরা শুনে মাথা ঝাকান। মুরবি্বয়ানার ভাব ধরে অবোধ বালকের উথলে ওঠা গনগনে বিদ্বেষের মতো নেতাদের প্রলাপ শোনেন তারা। সদা লেগে থাকা পেশাগত হাসিটা আরো বিস্তৃত হয়। হয়তো মনে মনে বলেন, 'রাবিশ! ডেমক্রেসি এদের জন্য নয়'।
যে সময়টাতে বাঘা বাঘা রাজপুরুষরা সেধে ডেকে নিয়ে এবং সম্মান ও শ্রদ্ধার চূড়ান্ত দেখিয়ে 'সান অফ এশিয়া' ডেকে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ওপরে তোলেন, ঠিক সে সময়টুকুতেই নিজভূমে রাজদূতরা আমাদের পলিটিশিয়ানদের ছেলে ভোলানোর মতো পিঠ চাপড়ে 'এমন করে না বাছা' ধরনের ভূমিকায় নামেন।
একই সময়ে সংঘটিত এমন বিপরীত দুটি ঘটনায় আমরা লজ্জিত হই। কিন্তু ভীষণ লজ্জিত আমরা ভেবে পাই না, ওই পলিটিশিয়ানদের আত্মমযর্াদাবোধ এতো ভোতা কেন। ভাইয়ে ভাইয়ে কথাকাটাকাটির মাঝখানে নিশ্চয় আপনি আপনার প্রতিবেশিকে যেচে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বরদাশত করবেন না। কিন্তু আমাদের পলিটিশিয়ানরা রাজদূতদের উপদেশ বর্ষণে কৃতার্থ হন। ক্ষমতার মোহে টনটনে মযর্াদাবোধকে বিদেশিদের জন্য ফৃ করে দিয়েছেন তারা। আমরা শান্তিতে নোবেল পাই, অথচ রাজদূতরা দেশের অশান্তি নিয়ে পলিটিশিয়ানদের শান্ত হওয়ার সবক দেন। বড় লজ্জা! বড় লজ্জা!
বজর্্য খালাসের মতো কলঙ্কিত তিন দিনের কলঙ্ক কার মাথায় খালাস করা যায়, সে বিশ্লেষণে আমি যাচ্ছি না। এ নিয়ে অনেক রথী-মহারথী, মসিজীবী তাদের কলম শান দিচ্ছেন। অনেকেই লগি-বৈঠার বর্বরতাকে মহত্ত্বের আস্তরণে ঢেকে দেয়ার কসরত করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এই পৈশাচিক বর্বরতাকেও গণমানুষের জাগরণ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করতেও অনেকে দ্বিধা করছেন না। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুরু করে শান্তিপ্রিয় মানুষ এই বীভৎসতাকে কোনোভাবেই সুস্থ আচরণ হিসেবে দেখছে না।
একজন লেখক, হতে পারেন তিনি ভাড়াটে লেখক- ক্ষমতালিপ্সার বর্বর কামড়া-কামড়িকে গণঅভ্যুত্থানের পোশাক পরিয়ে ফেরি করতে যখন চেষ্টা করেন, তখন আমাদের বুকের ভেতরটা ব্যথায় চিন চিন করে ওঠে। বেদনাহত বিস্ময়ে পতনের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত সুশীল সমাজের মূল্যবোধ ক্ষয়ে যাওয়াটাও আমাদের দেখতে হয়। আমরা ওপরে থিতু হবো কি করে? একজন প্রফেসর ইউনূস তার সব নিষ্ঠা, একাগ্রতা দিয়ে আমাদের ওপরে ওঠান আর পলিটিশিয়ান এবং তাদের শত শত কলমদামড়া আমাদের পাল্লা দিয়ে টেনে নিচে নামান। কপর্দকহীন, অক্ষরহীন মানুষরা প্রফেসর ইউনূসের বিশ্বাসের মযর্াদা দিতে গিয়ে তাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকেও উচুতে তুলে ধরেন, কিন্তু পেটের ভেতরে অক্ষর গিজ গিজ করা রাজনীতিক ও তাদের কলমসেবীরা প্রফেসর ইউনূসের বিশ্বাসটাকে খান খান করে ভেঙে দেন। আমরা বার বার ভূলুণ্ঠিত হই। নেতাদের সম্মোহনে বার বার আমাদের আত্মমযর্াদাবোধকে নিলামে ওঠাই।
আমরা সংখ্যালঘু নিযর্াতনের গল্প বলে বিদেশিদের অনুকম্পা প্রার্থনা করি, মৌলবাদের রূপকথা বলে বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করে ধন্য হই, হামলা-মামলার তদন্ত করার আশায় বিদেশিদের মন গলাতে হাপুস নয়নে কাদি। অথচ একবারও ভেবে দেখি না, 'সান অফ এশিয়া' খেতাব পাওয়া আমাদের এমন হীনমন্যতা মানায় না।
আমরা আমাদের ইতিহাস ভুলে যাই। অনেকের মতো আমরা ভুইফোড় কেউ নই। আমাদের আছে ঈষর্া করার মতো অতীত এবং সোনালি ভবিষ্যত শুধু বর্তমানটাই যা একটু ঝরঝরে। যদি বর্তমানের ক্ষতগুলোকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ওষুধে সারিয়ে ফেলতে পারি, তবে আমাদের সম্ভাবনা এবং আলোকিত ভবিষ্যতে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
তিন যুগ হতে চললো আমাদের স্বাধীনতার আয়ু। মহাকালের হিসেবে সময়টা তেমন কিছু নয়। এমনকি একটি জাতির ইতিহাসের হিসেবেও এ সময়কে বিশাল বলা যাবে না। তবুও তিন যুগ খুব অল্প সময়ও আবার নয়। এ সময়ের আলো-আধারিতে তিনটি প্রজন্ম সহাবস্থান করছে।
এই তিন যুগে আমাদের অনেক কিছুই করার কথা ছিল। স্বাধীনতার অর্থবহ উপস্থিতি প্রতিটি নাগরিকের দেহ মনে মুক্তির সুবাতাস নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু আসেনি। একেবারে কিছুই যে হয়নি, তাও নয়। আমরা এগিয়েছিও অনেকটা। অনেককে পেছনে ফেলেও আমরা এগিয়েছি। 14 কোটি মানুষের 28 কোটি প্রত্যয়ী পরিশ্রমী হাত আমাদের সামনে নেয়ার পথ করে দিয়েছে।
কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সব সময় সঠিক পথের দিশা দিতে পারেনি। ব্যক্তিপূজা আমাদের রাজনীতিকে অতীতমুখী করেছে। সেই অতীতাশ্রয়িতা আমাদের বিভক্ত করেছে, বিদ্বিষ্ট করেছে। জাতীয় চেতনায় ফাটল ধরিয়ে সেই ফাক গলিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসার অসুস্থ রাজনীতির চচর্াও হয় এখানে।
কিন্তু এ ভুল পথ। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকবে, শত্রু নয়। প্রতিপক্ষের সঙ্গে স্বার্থের প্রতিদ্বন্দি্বতা থাকবে, গনগনে বিদ্বেষ নয়। কিন্তু এসব অন্ধকার নিয়ামকই এখনও আমাদের রাজনীতিকে হাওয়া দিচ্ছে। তাই তো প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যাশা মাত্র 14 দিনের ব্যবধানেই মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমাদের পলিটিশিয়ানরা একটু গভীরভাবে বিষয়টা ভেবে দেখবেন কি?
[গাঢ়]মুহাম্মদ ফজলুল হক[/গাঢ়]
[ইটালিক]সহকারী অধ্যাপক, ত্রিশাল মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ[/ইটালিক]
[link|http://www.jaijaidin.com/archive/view_news.php?News-ID=19419&issue=138&nav_id=3][BUvwjK]hvqvhvqw`b[/BUvwjK| - Gi
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৯:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



