somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় দিবসের আনন্দ শিশুদের জন্যই...

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বছর চারেক আগে দুই জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে বসে গল্প করছিলাম। মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হলেই তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজটি নিয়েই গল্প করে! সেসব শুনলে কিছুক্ষনের জন্য অন্য জগতে চলে যেতে হয়। অবশ্য গল্পের আসরে আমার অংশগ্রহন সীমাবদ্ধ ছিল - ঘোর লাগা চোখে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা, কিছু রক্ত গরম করা কল্পনা করা আর শুকনো ঠোটে হাসিমুখে তাদের কথা শোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের গন্ডি তখনও পার হতে পারি নি। রক্তে তখনও কল্পনার জগতের খেলা। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একজন যখন আমার বড় হয়ে যাওয়া চুল দেখে বলছিলেন, “তুমি কি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত আছ নাকি?” (বন্ধুদের ভাষ্যমতে আমার চেহারার মধ্যে একধরনের বিপ্লবী ভাব আছে বোধহয়, যদিও আমি বিপ্লবী না!) আমি বেশ লজ্জা পেয়েই ওনাকে আশাহত করেই বলতে বাধ্য হলাম সাংস্কৃতিক কেন কোন কর্মকান্ডেই আপাতত আমি জড়িত নাই! /:) এরপরেই উনি সহযোদ্ধার দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্যার, এখন যদি যুদ্ধ হইত তাইলে মনে হয় আরও ফাইন যুদ্ধ হইত, ভাল যুদ্ধ করতে পারত এখনকার ছেলেমেয়েরা।” আমি ওনাকে আর আশাহত করতে চাই নি।

এর আরও পরে বাংলাদেশে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে একটি দরখাস্ত লিখেছিলাম। রীতিমত খাটি ইংরেজি ভাষায় লেখা হলেও ওটাকে ব্রিটিশ আমলের দরখাস্ত বললে ভুল হবে কারন ওই দরখাস্তে সেশনজটের শৃঙ্খলে আটকে থাকার আবেগের বশবর্তী হয়ে আমি অত্যন্ত সুকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষোদাগার করে ফেলেছিলাম। ভিসি সাহেবের ওই দরখাস্তে রিকমন্ডেশন করার কথা। কিন্তু দরখাস্তটা পড়ে উনি বললেন (আমি সামনে ছিলাম না), “এই দরখাস্তে সাইন করতে তো ভয় লাগতেছে। আমি সমস্যায় পরতে পারি। এইসব তো জাতীয় সমস্যা। যাইহোক কপি রাখলাম। যদি কোন সমস্যা হয় একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ করব।” ঐ ভিসি স্যারকে বলা দরকার ছিল আমার দৌড় ঐ আবেগে ভরপুর চিঠি লেখা পর্যন্তই।

এই তো কিছুদিন আগে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বিখ্যাত জাতীয় নেতার (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা) একটি প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যক্ষ্যান করার মত বেয়াদবি করায় তিনি আমার উদ্দেশ্যে নাকি বলেছেন (এখানেও আমি সামনে ছিলাম না!) “এই রকম তো হবেই। আমাদের রক্ত তো এদের শরীরে।” কথাটা শুনে আমার গর্বিত হওয়া উচিৎ। কিন্তু দু:খিত নেতা, আপনাদের দূষিত রক্ত আমার রক্তে মেশাতে চাই নি কোনদিন।

যে কোন গেরিলা যুদ্ধে ফল ব্যক পজিশন বলে একটা ব্যপার থাকে। যুদ্ধে পিছিয়ে পড়লে গেরিলারা সেখানে হাইড করে শক্তি সন্চয় করে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে বা যুদ্ধটাকে টিকিয়ে রাখে (মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জায়গাটি ছিল খুলনার কোন একটা জঙলা জায়গায়)। আমার কাছে মনে হয়েছে ৭১ এর জয়ের পর আমরা ছোটবড় অনেকগুলো যুদ্ধে হেরে গেছি। কিন্তু যুদ্ধে একেবারে হেরে যাই নি এখনও। হয়তো শক্তি সন্চয় করছি। আমরা বর্তমান প্রজন্ম পঁচে গেছি। হয়তো যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় বা উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিজয় আমরা দিতে পারব না। কিন্তু যুদ্ধটিকে নিশ্চয়ই জিইয়ে রাখতে পারব। স্বাধীনতা যুদ্ধ কখনও শেষ হয় না, এটা চলে নিরন্তর।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান একটি নিয়ামক একতা । এটা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় এর অভাব ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পরেই কেন যেন এটার অভাব দেখা গেছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এর অভাব প্রকট। তবে পতাকা হাতে রেখেছি এখনও। ছিড়ে গেলেও আবার বানাতে পারব। সেই অর্থে আমার হাতে ধরা পতাকাটির কোন সত্যিকার অর্থ নেই। কিন্তু আরেকটি পতাকা আছে আমার বুকে। সেটার মূল্য অনেক বেশি।

যে কোন হতাশার সময়ই আমি শিশুদের দিকে তাকাই। পৃথিবীর হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে হতাশার পিঠে আশার বানী হয়ে ফিরে এসেছে এই শিশুদের মুখগুলিই। আমরা যাই করি না কেন, শিশুদের মধ্যেই আমাদের শেষ ভরশা লুকিয়ে আছে। তারা যতটাই পরাধীনতার শৃংখলে বড় হোক না কেন, পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারে কেবল তারাই। রাত যত গাঢ় হয় ভোর তত এগিয়ে আসে। পরাধীনতার শৃংখল যত দৃঢ় হবে স্বাধীনতার আকাংখা তত বাঁধ ভেঙে যাবে। আজকের শিশুদের গড়ে তোলাই আমাদের যুদ্ধের একটি বড় অংশ। তাদের জন্যই এই বিজয় দিবস।

বুকে উড়তে থাকা পতাকাটি শুধুই তাদের জন্য বাচিয়ে রেখেছি।
তাদের দেয়ার মত এই একটি জিনিসই আছে আমার।
স্বাধীনতার চেতনা!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×