somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রোভ এন্ড দ্যা ক্রিমিন্যাল

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কন্ট্রোল রুম থেকে মেসেজ,"পন্দো লা রুত পো সান্দানী, উন সিগনা দিত কুই লা"

ব্রিটিশ গ্রোভ
শিমিত্রি দ্য সেইন্ট ডেনিস
প্যারিস, ফ্রান্স।


রাত ১:৪৭

পুরনো গ্রোভের উপরে পরে ছিলকে যায় হাটু। তবুও এখানটা সেফ এন্ড সেকিউর। বিশ মিনিটের পথ পাকস্থলি চেপে দৌড়ে এসে হাপাতে থাকে। বাইরে সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসে। গ্রেভটার উপরে ভর দিয়ে পাকস্থলি থেকে হাত সরিয়ে নেয়। লাল তরলে মেখে গেছে, ব্লেডিং। লেদার জ্যাকেট প্রায় আদ্র। আবার চোখ মেলে তাকায়। কষ্ট হয়, ব্রাউন সুগারের নেশটা কাটেনি। কিছু একটার শব্দ শোনা যায়। পিয়ানো! না ব্যাকপাইপ। শব্দটা ক্রমশ কাছে ভেসে আসছে। চিৎকার করার সময় এসেছে। পুনরায় মুদিত চোখ।



রাত ২:২৩

নেশাটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কালো লম্বা আলখাল্লা পরিহিত কিছু একটা। ওয়াচ ম্যান? কিন্তু ল্যাম্প কোথায়? তাহলে? মুর্দা! ওহ পিঁতা (ফ্রেঞ্চ SLANG ) । এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে। এক নয় একাধিক। মিলিয়ে যাচ্ছে আবার। কোথায়? হারিয়ে গেছে।
ব্লেডিং বেড়েই চলেছে। সাইলেন্সারের নল দিয়ে বেড়িয়ে আসা ধাতব খন্ড বামপাশে পাকস্থলি ঘেষেছে। হিমোগ্লোবিন ক্ষমতা হারিয়েছে। থামছে না প্রবাহ স্রোত। ছোপ ছোপ হয়ে আছে । একটি নারী অবয়ব। ঝাপসা কিংবা ধূসর। হাসছে , স্পষ্ট হয়ে মসৃন গাল বেয়ে ঝরছে হাসি। "আলভিয়া" !!! ফের পরে যায় নয়ন পাতা।




রাত ২:৫৯

আলভিয়ার কামুক আবেদন। এক দুই তিন করে রাত্রি চলতো ইনফিনিটি। পাশে থাকার মহুর্তগুলো জাগিয়ে তুলছে বারে বারে। কিছু একটা পিঠ ঘেষে ছিটকে যায়। একটা দেহ বিচ্ছিন্ন হাত। অনামিকার ডায়মন্ড রিং পরিচিত। হাতটা কাঁপছে, ছটফট করছে; যেন সদ্য ছারিয়ে নেয়া। হাতরে দেখা যায় আর্টিফিসিয়াল কিছু ফ্লাওয়ার গ্রেভের উপরে। কোথায় আলভিয়া? কোথায় হাত?



রাত ৩: ৩৪

কালো আলখাল্লার লম্বা ধরের ছায়া এগিয়ে আসছে। হার্ড কিছু তরল জরুরী। রাশিয়ান হুইস্কি সর্বোচ্চ কার্যকর, রিসার্ভ। অনেকটা কাছে এগিয়ে আসে ছায়ারা। থমথমে ইয়ার্ডের আঁধারে হিমবাহ কিংবা রক্তস্রোত। খুন্তি হাতে ছায়ারা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আরও কাছে। দক্ষিন প্রান্তের ইয়ার্ডের ল্যাম্প নীরব হয়ে যায়। বিন্দু বিন্দু স্নো এক প্রলেপ সাদা আস্তরে ঢেকে যায়। ফ্ল্যাশব্যকে আসে কখনো মেক্সিকান ডিলার অথবা সুইডিশ মাফিয়া। সারি সারি ক্রুশ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ডানা ঝাপটায় বাদুরের দল। অন্ধকার মেঘ গ্রাস করে নেয় সবটুকো আলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া গুলো, না এরা ছায়া নয়। অন্ধকারে ঢেকে যায় সব।



রাত ৪:২১

মস্তিষ্কে দমকে দমকে কেঁপে উঠছে যন্ত্রনা। ছায়ারা নেই, মুন্ডুহীন কেউ দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ পিটার ড্যান, শেরেক উইলসন শিরচ্ছেদ করেছিল ছয় সাল আগে। গুপ্তঘাতক উইলসন। পিটার কোন হিসেব চুকাতে এখানে? হিংস্র হয়ে ফিরে এসেছে। পায়ের কাছে একটা গলাকাটা মাথা। গোল্ডফ্রেম স্পেক্টাকুলার। গলা ধরে আসে। অবশ হয়ে আসছে সব। ফ্যাকশে আলো ছোপ ছোপ মেঘ ছাপিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ছিন্ন মুন্ডুর কুৎসিত হাসিতে কিছুটা রহস্য। মাটি খুডছে গলাকাটা পিটার। টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে অবশ নিথর দেহ। শত চেষ্টায় ছারিয়ে নিতে ব্যার্থ। নখ দিয়ে পাথরের খুদ্র খন্ড কিংবা ঘাস আঁকড়ে ধরার চেষ্টা।



ভোর ৫:০৯

আচমকা কিছু একটার সংঘর্ষের শব্দে সম্ভিত ফিরে আসে। তুষারে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ইয়ার্ড। ক্রুশগুলো সাদা হয়ে আছে সব। দেহের অর্ধেকটা ঢেকে গেছে স্নো ফলে। রক্তের দাগ পরেছে বরফের উপরে। অশ্লীল কালো রাত ফিকে হয়ে আসছে। দূর থেকে কলতান কোন ধূসর পাখির। একটু একটু করে নিঃসারিত ব্লাড বোবা করে তোলে। অন্তনীলে কিংবা শুন্যতার কাঁটাতারে জড়িয়ে পরা জীবনের সারমর্ম পায় না খুঁজে। বিষাদের প্রতিবিম্ব কিংবা আলোক উৎসবে হারিয়ে গিয়েছিল অপূর্ণতার লাওয়ারিশ জীবন। নির্বাসিত স্বপ্ন রং মাখে চেনা অচেনার দেয়ালে। অসহায় চোখে দৃষ্টি মেলে ধরে অসীমে। রাতের বিদায় অথবা পুনরায় তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আসে সব। বেঁয়ে উঠতে থাকে মাকড়ের দল। ছরিয়ে যেতে থাকে সর্বাঙ্গে। ক্লান্ত মহাকালের কিছুটা সময় জুড়ে বারিপাত হয়না। ঘুমিয়ে পরা রাতের শেষে ঘুমিয়ে পরা মৃত্যুস্বাদ।



ভোর ৫:৫১

হিমেল বাতাসের তান্ডব বেড়ে চলেছে। কঙ্কালে বিছিয়ে গেছে চারপাশ। অদ্ভুত কিছু হাসির শব্দ। বরফে ঢেকে গেছে ঝিঁঝিঁপোকার গান। দূরে গান গাইছে মাতাল কাউন্ট্রি সিঙ্গার। ভার হয়ে আসে মাথা। উঠে দাঁড়ানোর সাধ্য নেই। কালো মুখোশে ঢাকা শীর্ণ একজন লাফিয়ে এসে গলা চেপে ধরে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা। আবারো মূর্ছা যায়।



ভোর ৬:১৭

ভোরের নীল আলো সাদায় ডাইভার্ট হতে চলেছে। যন্ত্রনা আর ব্যাথাতুর অবসাদের একটি রাত গড়িয়ে যায়। এখনো ব্লেডিং চলছে, ধাতব টুকরা যন্ত্রনার উদ্রেক ঘটাচ্ছে থেমে থেমে। কালো মুখোশের কেউ নেই, নেই কালো আলখাল্লার সেই দলটি। পিটারের ছিন্ন মুন্ডু কিংবা আলভিয়ার কাঁটা হাতও নেই সেখানে। তবুও বেঁচে থাকার আশাবাদ, অনন্তকালের অসম বন্ধুর পথে। ডানা ঝাঁপটায় দাঁড়কাক। হাত বাড়িয়ে ডাকছে মেরী। এখানেই শেষ হতে পারে না। আরও যেতে হবে, আরও পথ রয়ে গেছে ছুটে যাওয়ার। তাচ্ছিল্যের উপায় নেই। বাইরে পুনরায় সাইরেনের আওয়াজ। এবার হার মানতে চলেছে সময়। চতুর্দিক থেকে শব্দটা আরও ঘন হয়ে যাচ্ছে। একটি অধ্যায়ের হয়ত এখানেই শেষ। মৃত্যু কিংবা বেরি।


কিন্তু তারপর......... Some Say the Devil is Dead.....







ছবি: নিজের এলব্যাম থেকে /:)
মডেল: আমি নিজেই :#>
ফটো এডিট: ব্লগার কামরুল হাসান শাহী ভাই। :-<


উৎসর্গ: ব্লগার হাসান মাহবুব (হামা) ভাই। আজকে ব্লগ ডে-তে সেরা দশে তার নাম না দেখে কিছুটা অবাক হলাম। গা বাঁচাতে যেয়ে কতৃপক্ষ অবিচার করে ফেলেছে। ডোন্ট ও্যরি হামা ভাই, আমি অন্তত জানি আপনার লেখার মান।


প্রায় চারমাস আগের লেখা, সচলে প্রথম প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১১
৬০টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×