এইতো তেত্রিশ বছর আগে
বাবার হাতধরে কতো দেখেছি এই ব্রহ্মপূত্র
জল টলমল দুটি পাড়-যেনো অকুল পাথার
আজ আর নেই।
এখন আছে মুঠোমুঠো বালি-বালিময় পৃথিবী
বালির মহাল-পাড় বেয়ে নামে আসে
চার থেকে ছয় চাকার বালির মহাযান।
কত নাও দক্ষিণা বাও কেটে কেটে চলে যেত
ভাটির পানে কিংবা উজানে
স্বপ্নের ডিঙ্গা যেনো হেইয়া হো হু হু হেইয়া।
আজ কেবল নদীশাসন-দখল-নদীর শ্বাস কেটে
সর্বশান্ত করে দেয়া নদীর বুক।
নদীও দহন বুঝে মেনে নেয় বিপরীত পথ
ছাড়পত্র দিয়ে ফিরে যায় পুরনো পথে
নির্লজ্জ মানুষের নদীর প্রতি ভালোবাসা নেই বলে
ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় পাড় ভাঙ্গে ক্রমাগত ইউটার্ণ।
এখন বাবার হাত ধরে আসি না নিজে নিজেই আসি
নাও বেয়ে চলি কিংবা নদীর বুকে হেটেই পাড় হই
প্রেমিকা কে আঙ্গুল ধরে পার করি
পায়ের তলা ভিজে গায়ের জামা ভেজে না
তবে মনে পড়ে খুব করে সেই ছড়াখানি
"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।"
হাটুজলে কেউ কেউ মাছ ধরে
একদিন যে নদীতে বিচ্ছিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত
শুশুক ডলফিন বোয়াল আইর গুজি গজার কতো কি
কই গেল আজ নদীর সেইসব ভাটিয়ারি মাছ
কেবল হাহুতাস দূষণে খেয়ে গেছে অন্তরাত্মা নাড়ি ভূড়ি
নদী আর নদী নেই নদীর ললাটে কেবল দুঃখ
উজানে বাঁধ স্রোতহীন এই নদী বাঁচবে কিনা কে জানে
মরুময় এই নদী আজ বালির খনি
মাইলের পর মাইল যেদিকে চোখ যায় মরুভূমি মরুভূমি
অগভীর হয়ে যাচ্ছে নদী হতে হতে একদিন রেখা রেখে
স্থায়ী হয়ে যাবে জনপদের ধূসর তটে
আদর করে তাকে আর কেউ ডাকবে না ব্রহ্মপূত্র নদ।
হায় ব্রহ্মচারী তোমার জন্ম তো সারা ব্রহ্মচারনের জন্য
আজ তোমাকে কেন মরতে হচ্ছে অকারণে অকালে।
না এ তোমার দায় নয়
আমার আমাদের এই জনপদের অস্থির মানুষগুলোর
যারা বুঝে না বুঝতে চায় না
পোড়া কপাল পুড়াতে যাদের দ্বিধা নেই এতটুকু।
বেলুয়ারী সুখে যারা যায় দহন পারে
এই নষ্ট চরাচরে থেকোনা তুমি
মরে যাও দ্রুত
দেখুক তোমার কি প্রয়োজন ছিলো যৌবনে।