বনভূমির ছায়া -- আবুল হাসান
কথা ছিলো তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাবো
বনভূমির ভিতরে আরো গহীন নির্জন বনে আমরা আগুন ধরাবো
আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড় শাল-গজারী পাতায়
আমাদের ভিতরে যে দুইজন কবি
তারা ফিরে এসে অরন্য স্তুতি লিখবে কবিতর খাতায়
কথা ছিলো গল্পলেখক অরণ্য যুবতী নিয়ে গল্প লিখবে নতুন আংগিকে
যিনি সিনেমা বানাবেন , কথা ছিলো
তার প্রথম থীমটি হবে আমাদের পিকনিক-প্রসূত
তাই সবাই আগে থেকে ঠিকঠাক , সবাই প্রস্তুত
যাবার দিন কারো ঘাড়ে ঝুলল ফ্লাক্সের বোতল
ডেটল ও শাদা তুলো , কারো ঘাড়ে টারপুলিন টেন্ট , খাদ্যদ্রব্য।
কারো শখ জাগলো পাখীর গান তিনি রেকর্ড করে তুলে আনবেন
একজন মহিলাও চললেন আমাদের সাথে
তিনি নিলেন তার সাথে তার টাটকা চিবুক , তার চোখের সুষমা আর উষ্ণ শরীর
আমাদের বাস চলতে লাগলো ক্রমাগত
এক জায়গায় হঠাৎ কি ভেবে যেনো
আমি বল্লাম "রোক্কো"
শহরের কাছের শহর
নতুন সাকোটার কাছে দেখলাম তির তির করছে জল
আমাদের সবার মুখ সেখানে প্রতিফলিত হলো
হঠাৎ জলের নিচে পরস্পর আমরা দেখলাম
পরস্পরের প্রতি আমাদের কি বিপুল হিংসা , বিদ্বেষ!
আমরা হঠাৎ কি রকম অসহায় আর একা হয়ে গেলাম!
আমদের আর পিকনিকে যাওয়া হলো না
লোকালয়ের কয়েকটা মানুষ আমরা
কেউ আমাদের এই ভয়াবহ নিসংগতা, একাকীত্ব , অসহায়বোধ আর মৃত্যুবোধ নিয়ে বনভূমির কাছে যাওয়ার সাহস পেলাম না