চোখের ভিতর আলোটা টুথপিক দিয়ে খোচাচ্ছে।চোখ পিট পিট করে সে। চারিপাশের মানুষের চেহার গুলো দেখে। সময় থমকে যায় । খুটে খুটে মনে করার চেষ্টা করে সে এখানে কি করছে । একটা একটা করে চেহারা দেখে ।
ঐযে মোটা মতো মধ্যবয়সী সম্ভবত কোন চাকুরে - হাতের মুঠো পাকিয়ে আছে।
গালে অল্প দাড়ী নিয়ে যে যুবক - চোখে ক্ষিপ্ত ঘৃনা।
দূরে বোরখাওয়ালী তার চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে -- সেখানে কোন বন্ধুত্ব নেই।
মাথায় গামছা বাধা ধামা হাতে লোকটি মনে হয় তরকারীওয়ালা।
লম্বামতো পোড় খাওয়া চেহারার লোকটা অনেককে কিছু বলছে ।
থুথু ছিটকে বেরুচ্ছে, লোকটা উত্তেজিত। তার কানে কিছু আসছে না । ক্রুদ্ধ বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
চড়টা খুব জোরে লেগেছে ।
মুখের ডানপাশটা ঝা ঝা করছে। ছোট ছেলেটা তার পাশে; তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে । ছোট্ট হাতটা এখনো তার হাতে ধরা।
সে উপরে তাকায় -- আজকের দিনটা খুব চমৎকার।
আকাশে সুর্যটা হেলান দিয়ে আছে।
মনে পড়ে সে কিভাবে এখানে এসেছে । একটা দোলদোলে বাসে চেপে । ভালো লাগছিলো না কিছুই । দূরে পালাতে বাসে চেপে বসে হঠাৎ করেই ।
বাস থেকে নেমে এই অচেনা ছোট গন্জে বেশ ভালোই লাগছিলো । হাটতে হাটতে ছোট্টবাবুটাকে কাদতে দেখে মায়া হয় । তাকে ফিরিয়ে দিতে এসেছিলো সে।
ছোট্ট বাবুর হাত ধরা অচেনা আগুন্তকের প্রতি সবাই তখন কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলো । চোখ গুলো তাদের অনুসরন করে ।
লোকটি কলার চেপে ধরাতে ঘোর কাটে । কাপা কাপা স্বরে তার পরিচয় আর উদ্দেশ্য ব্যাখা করতে চায়।
বৃত্তটা আরো ক্রুদ্ধ হয় ।হরিন ঘিরে ফেলা বন্য কুকুরেদের লালা ঝরতে থাকে। ফিসফিসে ভোতা গুন্জনটা বাড়তে বাড়তে গর্জনে রুপ নেয়।
"মার শুওরের বাচ্ছারে"
"খানকির পোলার চউখ দুইটা গাইলা দে"
"টুংডা বানা শালারে"
হয়তো দৌড় দেয়ার চিন্তা মাথায় এসেছিলো । এরপরই বৃত্তটা বুজে যায়।
স্ত্রস্তপায়ে লোকজন সরে পড়ে। তারও কিছুক্ষন পর সাংবাদিক আসে। একটু পর পুলিশ। পকেট হাতিয়ে তার গোমড়া মুখ ছবি আর নাম খানা উদ্ধার করা হয়।
আতিকুর রহমান।
সেদিন বিকালে থানায় বসে সাংবাদিকটি
অবাক হয়ে বলে "কোন আতিকুর রহমান? উনি সেই লেখক ........"
পুলিশকর্তাটি গম্ভীর মুখে বলেন -- "হমম। ২০ টা উপন্যাস বাজারে আছে তার। অনেক গুলো নাটক।"
"উনি এখানে কিভাবে?"
"একটু মনে হয় পাগলাটে কিসিমের ছিলেন"
"এখন কি হবে?"
"গণপিটুনিতে মৃত্যু - দেখি কি করা যায়"
"কিন্তু উনিতো সেলেব্রিটি"
"হমম। বুঝতে পারছি কিন্তু গত দুই মাসে ৩ টা বাচ্চা হারিয়ে গেছে-- পাবলিক খুব খারাপ জিনিস রে ভাই"
অনেক দুরে তখন লম্বা লোকটি হনহন করে হাটছে। হাতের উপরে কাটা জায়গাটা জ্বলে । রক্ত ঝরে একটু। লম্বা লোকটি
মনে মনে গালি দিয়ে উঠে । মৃত লোকটার চোখদুটা ভেসে উঠে ওর মনে। আরো জোরে পা চালায় সে।