somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিগারেট আমার স্বাধীনতা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-নে জ্বালা...
-না।
-কেন?
-এমনি, এখন খাবো না।
-ছেড়ে দিছোস?
-ছাড়ি নাই, ব্রেকে আছি।
-মানে?
-আপাদত ব্রেকাপ!
-মানে, কয়দিন?
-যতদিন পারি।
-মানে ছেড়ে দিছোস?
-ছাড়ি নাই বললাম না, ব্রেকে আছি। ধর গার্লফ্রেন্ড ঝগড়া হইলে কয়েকদিন কথা হয় না, ব্রেকআপ চলে—ঐরকম আপাদত আমি কয়দিন ব্রেকাপ, লাস্ট ১৫/২০ দিন খাচ্ছি না।
-কস কি??
-ছেড়ে দিছি বলে লাভ নাই, কয়দিন পর দেখবি আবার এক লগে টানতেছি, তাই ব্রেকে আছি...
এই কথোপকথন ছিল আমার এক বন্ধুর সঙ্গে, যার সাথে মাসখানেক আগেও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ১০-১৫টা সিগারেট পোড়ানো হতো। সে এখন অন্য এলাকায় চাকরি সূত্রে চলে গেছে আর আমি আপাতত সিগারেটের সঙ্গে ব্রেকে আছি

সিগারেট ছাড়ার ঘোষণা দিলেই সবাই সন্দেহ করে, কারণ একজন প্রকৃত ধূমপায়ী খুব কমই পুরোপুরি ছাড়তে পারে। মার্ক টোয়েন মজার ছলে বলেছিলেন—
"Giving up smoking is the easiest thing in the world. I know because I’ve done it thousands of times."
অর্থাৎ, "ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ। আমি জানি, কারণ আমি এটা হাজারবার করেছি।"

উনি হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন, সিগারেট ছাড়া এত সহজ নয়, যতটা সহজে আমরা আপন করে নেই। একদিকে, আমরা জানি এটা ক্ষতিকর, অন্যদিকে, এটা ছাড়ার কথা ভাবলেই আরেকটা জ্বালিয়ে চিন্তা করি কিভাবে ছাড়বো। প্রথম সিগারেটটা হয়তো কৌতূহল থেকে অথবা বন্ধুর উৎসাহে শুরু করি। কেউ এটাকে স্টাইল ভাবে, কেউ বলে নেশা, আবার কেউ ভাবে এটা একটা ‘সঙ্গী’ স্ট্রেস কমানোর, একাকীত্ব দূর করার, চিন্তার জট খুলে দেওয়ার। অথচ একসময় দেখা যায়, স্ট্রেস কমাতে যে সিগারেট ধরেছিলাম, সেই সিগারেটই নতুন স্ট্রেসের কারণ হয়ে গেছে। না খেলে অস্থির লাগে, খেলে ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে। ফুসফুসের অসুখ, ক্যানসার, স্ট্রোকের ঝুঁকি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানো সব কিছুর জন্যই দায়ী এটি।

কিন্তু সিগারেট আসলে কী?
একটা ধোঁয়ার রিং?
একটা অভ্যাস?
নাকি একটা আসক্তি, যা ধীরে ধীরে আমাদের কাবু করে ফেলে?

সত্যি বলতে, সিগারেট আমাদের কোনো সময় বন্ধু হতে পারে না। যতটুকু শান্তি বা সুখ আমরা আশা করি, তার বদলে আসলে তা আমাদের জীবন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি করে নেয়। স্বাস্থ্য, অর্থ, সম্পর্ক, আর সবার উপরে, স্বপ্ন।

সিগারেট আর গার্লফ্রেন্ড/বউ—দুই পক্ষের লড়াই যেন চিরকালীন! একদিকে সিগারেট, যে নিঃশব্দে পাশে থাকে, অভিযোগ করে না, কিন্তু ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়। অন্যদিকে, গার্লফ্রেন্ড/বউ, যার ভালোবাসায় শাসন থাকে, থাকে যত্ন আর থাকে প্রবল হুঁশিয়ারি—

গার্লফ্রেন্ড/বউ বলে “আমি আছি, তবু কেন ওর হাত ধরে থাকো?”
সিগারেট ফিসফিসিয়ে বলে “আমি তোমার চাপ কমাই।”
গার্লফ্রেন্ড/বউ ধমক দিয়ে বলে, “আমি না থাকলে জীবনটাই শেষ”
সিগারেট বলে “আমি তোমার জ্বলন্ত আক্সিজেন।”

প্রেমিকার চোখে থাকে অভিমান, বউয়ের চোখে থাকে হুমকি, আর সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে নীরব বিষ। কিন্তু শেষমেশ, যে সত্যিকারের ভালোবাসে, সেই জিতবে—সিগারেট নয়, মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, বরং সে, যে, জীবনের দিকে টেনে ধরে!

ধূমপানের সবচেয়ে বড় মিথ হলো "এটা স্বাধীনতার প্রতীক।" সিগারেট হাতে নিলে কেউ ভাবে সে স্বাধীন, নিজের ইচ্ছায় ধোঁয়া ছাড়ছে, অথচ বাস্তবতা হলো—এটাই তার আসল বন্দিত্ব। সে চাইলেও এই নেশার শিকল ভাঙতে পারে না।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ধূমপান ছাড়তে গিয়ে বলেছিলেন—

"আমি আসলে নিজেকেই বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, আমার কোনো আসক্তি নেই। কিন্তু যখন দেখলাম একটা সিগারেট না খেলে অস্থির লাগে, তখন বুঝলাম, এটা আমার ওপরই নিয়ন্ত্রণ করছে!"

তাহলে, আমরা কি সত্যিই স্বাধীন? নাকি সিগারেটের কাছে বন্দি? আসলে কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে? আমরা সিগারেটকে, নাকি সিগারেট আমাদের?

সিগারেট নিয়ে বিখ্যাত কিছু উক্তি
অস্কার ওয়াইল্ড:
"সিগারেটের সুখের ব্যাপারটা এই যে, সেটা মুহূর্তের জন্য আনন্দ দেয় এবং পরবর্তীতে আপনাকে একদম মেরে ফেলে।"

মোহাম্মদ আলী:
"আমি কখনও ধূমপান করিনি। আমি চাই না আমার শত্রুরা আমাকে মারার আগে আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলি।"

স্টিভ মার্টিন:
"আমি ধূমপান করি না। তবে আমি ধোঁয়া ভালোবাসি, তাই আমি আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি!"

ধূমপান ছাড়তে চাইলে…
নিজেকে প্রশ্ন করুন: কেন ছাড়তে চাই? যদি কেবল শরীরের ক্ষতির জন্য ছাড়তে চান, তবে হয়তো লড়াই কঠিন হবে। কিন্তু যদি বুঝতে পারেন এটা আসক্তির শৃঙ্খল, তবে মুক্ত হওয়া সহজ হবে।

হুট করে ছেড়ে দিন: অনেকে মনে করেন একদিনে ছেড়ে দেওয়া কঠিন, তাই আস্তে আস্তে কমাবেন। আমার মনে হয় এটা খুব কম কাজ করে। একদিন সকালে উঠে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজ থেকে আর খাবো না, যেই ভাবা সেই কাজ। শত কষ্ট হলেও আর খাবেন না।

বিকল্প অভ্যাস তৈরি করুন: ধোঁয়া ছাড়া কি আড্ডা হয় না? হয়! সিগারেটের বদলে চা খান, গান শুনুন, অন্য কিছু করুন যা আপনাকে ব্যস্ত রাখবে।
বন্ধুদের সাপোর্ট নিন: যদি আপনার আশেপাশের সবাই ধূমপায়ী হয়, তাহলে প্রলোভন এড়ানো কঠিন। সুতরাং এমন বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, যারা ধূমপান করে না।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন: ১০ দিন সিগারেট না খেয়ে থাকলে নিজেকে কিছু উপহার দিন—পছন্দের খাবার, বই, বা সিনেমার টিকিট। এতে মানসিকভাবে ভালো লাগবে।

অনেকেই সিগারেট ছাড়তে চায়, কিন্তু কয়েকদিন পরেই ফিরে যায় পুরোনো অভ্যাসে। কেন? কারণ আসক্তি শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও।
সিগারেট ছাড়তে গেলে—

ধৈর্য হারানো: খুব দ্রুত মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। একটু বিরক্ত হলেই মনে হয়, "একটা খেলে কী হবে?"
অস্থিরতা: মনে হবে, হাত খালি খালি লাগছে, কিছু একটা চাই!
সমাজের চাপ: বন্ধুদের আড্ডায় গেলে কেউ একজন বলবেই, "এটা তোকে ছাড়ে নাই, তুই কেমনে ছাড়বি?"
আত্মবিশ্বাসের অভাব: একবার ফেল করলে মনে হয়, "আমি পারব না, ধূমপান আমার নিয়তি!"

কিন্তু সত্য হলো, এটা ছাড়া সম্ভব, সব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে মনে রাখতে হবে আপনি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন।সেই মত শুধু চেষ্টা করবেন। আমি আপনাকে বলবো না, "সিগারেট ছেড়ে দেন" কিন্তু এটুকু মনে রাখতে বলবো—ধূমপান শুধু নিজের না, পরিবারেরও ক্ষতি করে।

সবশেষে, মার্ক টোয়েন-এর আরেকটি মজার উক্তি দিয়ে শেষ করি—

"যদি স্বর্গে সিগারেট না থাকে, তবে আমি সেখানে যেতে চাই না!"

তবে, স্বর্গে যেতে চাওয়ার আগে জীবনটা একটু ভালোভাবে বাঁচানোর কথাও ভাবতে হবে, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×