somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ নাকি বিভ্রম?

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভাঙলো তটিনির ফোনে। ফোন রিসিভ করতেই ওর যে কি চিৎকার,
— "কি সমস্যা? কখন থেকে কলিংবেল দিচ্ছি, কল দিচ্ছি, ঘুমাইলে দুনিয়ার হুশ থাকে না? মরার মতো কিভাবে ঘুমাস? তাড়াতাড়ি দরজা খোল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি!"
আমি তো হকচকিয়ে গেলাম!
— "দরজার সামনে?!"

কি ভাবছেন?
কে এই তটিনি?
চিনতে পারছেন না তাই তো?
আরেহ, তটিনি আমার বউ। এই তো দুইদিন আগে ওর বাবারবাড়ি গিয়েছিলো, আজই ফিরলো। কিন্তু ও কখন এলো? আমি তো কিছুই শুনিনি!
গতকাল রাতটা আসলে একটু বেখেয়ালি গিয়েছে, আজ শুক্রবার তাই গতরাতে জেগে জেগে মুভি দেখছিলাম। ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ভোর ৫টা বেজে গিয়েছিল। ঘুমটা এতটাই গভীর ছিল যে ফোনের রিংটোন, কলিংবেলের শব্দ—কোনো কিছুই শুনিনি।
কি ব্যপার?
কিছুই বুঝতে পারছেন না তাই না!
ঘটনা কি?
আমি আবার বিয়ে করলাম কখন?
হুট করে বলছি বউ-শশুরবাড়ি?

আপনাকে বোঝাতে বোঝাতে আমার আসল কাহিনী ভুলে যাবো। শুনুন তাহলে! বিয়েটা হয়েছে গোপনে! পালিয়ে বিয়ে বলতে পারেন। তেমন কেউ জানত না, একেবারে হুট করেই করতে হলো। সেদিন সকালে তটিনি ফোন দিয়ে বললো জিইসি মোড় যেতে। আমি ভাবলাম, রেগুলার দেখা করার জন্য বলছে। কিন্তু গিয়ে শুনি, তটিনির বিয়ে! তাও আবার সামনের সপ্তাহে!
বলুন তো, আচমকা এটা শুনলে কেমন লাগবে?
আমি একটুও দেরি না করে বলে বসলাম—
"চল, বিয়ে করে ফেলি!"
চান্স নিলাম আর কিহ, ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো—
"চল!"
চান্সটা কাজে লেগে গেলো আর কি আমি দুই একজন বন্ধুকে কল দিয়ে কাজী অফিসে আসতে বলি। তারপর কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলি। এরপর তো অনেক ঝড়-তুফান গেল। সামলে নিয়েছি দুজনে, সে ঝড়-তুফানের গল্প অন্যদিন হবে। এখন দুই পরিবার সব মেনে নিয়েছে, এখন ভালই আছি, ছোট সংসার, ধীরে ধীরে সাজানোর চেষ্টা করছি।
যাই হোক, বেশি ভাবার সময় নেই। বিছানা থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে গিয়ে দরজার দিকে গেলাম। দরজা খুলতেই...
কেউ নেই!
আমি অবাক হয়ে এদিক-ওদিক তাকালাম, সিঁড়ির দিকে দেখলাম, পুরো ফ্লোর ফাঁকা, নিস্তব্ধ। সিঁড়ির কোণে হালকা ছায়ার মতো কিছু একটা নড়তে দেখলাম না-কি? মনে হয় চোখের ভুল! তটিনি কি রাগ করে চলে গেল? কিন্তু এত দ্রুত যাবে কিভাবে? দৌড়ে ফোনের কাছে গেলাম, ওকে কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে দেখি— ডায়াল লিস্টে ওর নম্বরই নেই! একটু আগেও তো কল এলো! আমি নিজে রিসিভ করলাম! তাহলে? এসব সাত-পাঁচ না ভেবে নাম্বার ম্যানুয়ালি সার্চ করে কল দিলাম। কল যেতেই রান্নাঘর থেকে ফোনের রিংটোন বাজতে লাগলো!
তটিনি তাহলে ঘরে?
রান্নাঘরের দিকে এগোতেই শুনলাম ও জোরে বলে উঠলো—
— "তুহিন, কি হলো? জানো না আমি রান্না করছি? ফোন দিচ্ছো কেন? টাকা বেশি হয়ে গেছে নাকি ফোনে? রিসিভ করে ফেলবো কিন্তু! ঘুম থেকে উঠে গেলে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসো!"
আমি চমকে গেলাম! দরজা খুলে তো কাউকে দেখলাম না, তাহলে ও ঘরে এলো কিভাবে?
বুকের ভেতর কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করছে। আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম। দেখি তটিনি স্বাভাবিকভাবেই রান্নার কাজ করছে। আমাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলো। আহা! কলিজাটা যেন জুড়িয়ে গেল। কি লক্ষী মেয়ে। নাহ এইটা আমার বউ-ই ভুতটুত নারে ভাই। ধুর! আমি-ই হয়তো ঘুমের ঘোরে ভুল দেখেছি। রোমান্টিক স্টোরিতে ভুত কিভাবে আসবে বলেন?

আমার বউটা হাসিমাখা মুখে আমাকে দেখে বললো—
"উঠে গেছো সোনা? ঘুম হলো, আরেকটু ঘুমাতে পারতা তো? উঠেই যখন গেছ যাও ফ্রেশ হয়ে এসো, নাস্তা দিচ্ছি''
কিন্তু আমার মাথা থেকে বিষয়টা যাচ্ছেই না! একবার দরজা খুলে কাউকে পেলাম না, আবার ফোনের নাম্বার উধাও! এগুলোর মানে কি? আমি একটু ধীর গলায় বললাম—
— "তুমি ঘরে ঢুকলে কিভাবে?"
তটিনি কোনো উত্তর দিলো না। কোন সারা শব্দও নেই, পেছন ফিরে সামনে এগিয়ে দেখি রান্নাঘর শূন্য। তটিনি নেই! এক মুহূর্তের জন্য কেমন যেন কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। এবার একটু ভয় হচ্ছে। আমি মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি। বোঝার চেষ্টা করছিলাম কি হচ্ছে আমার সাথে, কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তটিনির নম্বর থেকে কল আসছে! এবার কেমন লাগে বলেন। ও কি আমার সাথে Prank করছে? ভয় পাবো নাকি রাগ করবো বুঝতে পারছি না। তাও রিসিভ করে ধমকের সুরে বললাম —
— "তুমি কি আমার সাথে মজা করছ? একবার দরজায়, একবার রান্নাঘরে, এসব কি হচ্ছে?"
ও পাশ থেকে বিরক্ত গলায় তটিনি বললো—
— "কি আবোল-তাবোল বলছ? দরজা, রান্নাঘর মানে?
-তুমি কি কিছু জানো না?
-কি জানবো? শুনো না, সোনা? আমি কি বলি"
- তুমি কি বলবা। মেজাজ খারাপ করো না তো? কোথায় লুকিয়ে আছ বল আর মজা করতে হবে না। নাস্তা দাও তো, আমার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।
-আরেহ কি নাস্তা দিবো, আমি আব্বুর বাসায় নাহ…
-আব্বুর বাসায় মানে? একটু আগে রান্না ঘরে কে ছিল?
-রান্না ঘরে কে মানে? কাকে নিয়ে আসছ বাসায়?
-কাকে মানে মজা কর?
-আমার মনে হয় তুমি এখনও ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের জগতে আছ। তাই আবুল-তাবুল কথা বলছ। ঘুম থেকে উঠো এখন। শোনো আমরা সবাই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে চলে আসো এখানে। আব্বু আসতে বললো তোমাকে। আবার ঘুমিয়ে পড়ো না সোনা। কি বললাম শুনছ?

আমি নির্বাক হয়ে এসব শুধু শুনেই গেলাম আর বললাম—
— "হুম, শুনছি!"
— "তাহলে তাড়াতাড়ি আসো!"
বলে লাইন কেটে দিলো!
আমি এক জায়গায় স্থির হয়ে রইলাম। মাথা যেন কাজই করছে না!
তটিনি যদি শ্বশুরবাড়িতে থাকে, তাহলে এইমাত্র ঘরে যাকে দেখলাম সে কে?
মাথার চুল টানতে ইচ্ছা করছে! শ্বাস ভারী হয়ে আসছে! ড্রয়িংরুম থেকে টিভির শব্দ আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি—
তটিনি সোফায় বসে টিভি দেখছে! আমার বুক ধুকপুক করে উঠলো। রান্নাঘর থেকে কিসের যেন একটা শব্দ এলো! হাত থেকে থালা পরে গেলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন শব্দ মনে হলো ! আমি সামনে এগিয়ে দেখি তটিনি রান্না করছে! ওর হাত থেকে প্লেইট পরে গিয়েছিলো। একটা মানুষ একসাথে দুই জায়গায় কিভাবে থাকে?? আমি আর নিতে পারলাম না। দৌড়ে বেডরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে!আলমারির দরজা খোলার শব্দ হলো পেছনে তাকিয়ে দেখি...
তটিনি আলমারিতে আমার শার্ট-প্যান্ট গুছিয়ে রাখছে।
ও ধীরে ধীরে আমার দিকে মুখ ঘুরালো...
ভয়ংকর এক দৃষ্টি!
আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে। আমি কি সত্যি জেগে আছি? নাকি এখনও ঘুমের ঘোরে?
তটিনি হঠাৎ মৃদু স্বরে বললো—
— "স্বপ্নেই বিয়ে-সংসার সব শেষ করে ফেলবা? বাস্তবে করতে হবে না? এখন ঘুম থেকে উঠে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখো। আর কত আমাকে নিয়ে এসব আউল-ফাউল স্বপ্ন দেখে ভূত-পেত্নী বানাবা? এই শীতটাও তো পার করে দিলা..."


আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম, নাকি...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×